প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: ঘূর্ণিঝড় রেমালে নদীর বাঁধ ভেঙে লবণাক্ত পানিতে প্লাবিত হয়েছে উপকূলের অনেক এলাকা। এতে জলাবদ্ধতাসহ দীর্ঘ মেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মাটির গুণগত মান নষ্ট হয়ে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশগত বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখনো সিডর, আইলা, আম্পানের ধকল সইছে উপকূলের অনেক এলাকা। লোনা পানি ঢুকে পড়ায় দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়েছে ফসলি জমি। এরমধ্যে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বিপদ বেড়েছে উপকূলের মানুষের।
উপকূলবাসী বলছেন, ত্রাণের চেয়েও তাদের জন্য জরুরি টেকসই বেড়িবাঁধ। গেলো দুই দশকে উপকূলের মানুষ সিডর, আইলা ও আম্পানের মতো তিনটি বড় ঝড়ের তাণ্ডব দেখেছে। শক্তিতে বড় হলেও অল্পসময় তাণ্ডব চালিয়েছিলো এই তিন সুপার সাইক্লোন। কিন্তু শক্তিতে মাঝারি মানের হলেও ঘূর্ণিঝড় রেমাল উপকূল জুড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে প্রায় ২৪ ঘণ্টা।
আঘাত হানার সময় দুবার সাগরের জোয়ার শক্তি যুগিয়েছে ঘূর্ণিঝড়টিকে। দীর্ঘ সময় জুড়ে বৃষ্টি, প্রবল বাতাস আর জোয়ারের পানি তছনছ করে দিয়েছে উপকূলীয় এলাকা। দীর্ঘ সময় ভারী বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়েছে, সাথে ছিলো প্রবল বাতাস। এই কারণে বেশিরভাগ গাছ উপড়ে পড়েছে এবং গাছচাপা পরে মারা গেছে মানুষ। ভেঙেছে বসতবাড়ি।
মাটি নরম হওয়ায় পানির তোড়ে ভেঙেছে বেড়িবাঁধ। লবনপানি প্রবেশ করায় উপকূলে এখন খাবার পানির তীব্র সংকট।সেইসাথে ক্ষতিতে পড়েছে ফসলি জমি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মৎস্য খাতের। উপকূলের পানির তোড়ে ভেসে গেছে হাজার হাজার পুকুর আর ঘেরের মাছ। উপকূলবাসী বলছেন, প্রাণহানি কম হলেও আর্থিক ও প্রাকৃতিকভাবে বড় ক্ষতি করে গেছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে এই অঞ্চলের অর্থনীতি ও মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর। তবে সঠিক পদক্ষেপ নিলে এই ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। উপকূলীয় এলাকায় বিপর্যয় মোকাবিলায় টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তোলা না গেলে বাড়বে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিল্লুর রহমান বলেন, ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির খুব বেশি দৃশ্যমান হিসাব পাওয়া যাবে না। যেমন সেতু ভেঙে পড়েছে, গাছ উপড়ে গেছে বা বাড়িঘর ধসে গেছে। কারণ, এ ঝড়ে মূল ক্ষতি করেছে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় চলা টানা ভারী বৃষ্টি। এ বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) সদস্য সচিব শরীফ জামিল বলেন, এ মুহূর্তে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি মেরামত করা জরুরি। যাদের ঘরের খাবার নষ্ট হয়েছে, তাদের কাছে খাবার পৌঁছাতে হবে। সুপেয় পানি সরবরাহ করতে হবে। এসব অসহায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। তাই পুনর্বাসন কার্যক্রম হতে হবে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি। ঘূর্ণিদুর্গত এলাকায় যারা ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতা, তাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে সমস্যা হবে। তাই ঋণের কিস্তি নেওয়া আপাতত বন্ধ রাখতে হবে। ঘূর্ণিঝড়ে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, দ্রুত সেগুলো মেরামত করতে হবে। এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা যেহেতু বেড়িবাঁধের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল, সেহেতু বেড়িবাঁধ টেকসই হওয়া আবশ্যক।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, আমরা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব তৈরি করে যেখানে যে পরিমাণ ত্রাণ সহায়তা দরকার, তা পাঠিয়েছি। তবে স্থানীয় পর্যায় থেকে আরও বিস্তারিত ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এলে ত্রাণ ও পুনর্বাসনে সহায়তা দেওয়া হবে।
প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ০১ জুন ২০২৪ /এমএম