বাংলানিউজ সিএ ডেস্ক ::ক্যাম্পাসে একচেটিয়া আধিপত্য ধরে রাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে। সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনকে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) করে ২৫ সদস্যের এই প্যানেল ঘোষণা করা হয়।
এ ছাড়া হল সংসদে ভিপি ও জিএস মনোনীত করে আংশিক প্যানেল ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ।
গতকাল রবিবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ও হল সংসদের শীর্ষ দুই পদে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সঞ্চিত চন্দ্র দাস।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড আজ সোমবার প্যানেল ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছে।
ডাকসু নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৯ মার্চ ভোট গ্রহণ করা হবে। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জন্য ২৫টি পদ আর হল সংসদে ১৩টি পদে নির্বাচন হবে। সেই হিসাবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ৩৮টি ভোট দিতে হবে। নির্বাচনে কোনো প্রতীক থাকবে না। নাম দেখে ভোট দেবে শিক্ষার্থীরা।
কেন্দ্রীয় সংসদের অন্য পদে মনোনীতরা : মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আরিফ ইবনে আলী, কমন রুম ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক বি এম লিপি আক্তার, আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাহরিমা তানজিনা অর্ণি, সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির শয়ন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শামস-ই-নোমান, ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহমেদ তানভীর, ছাত্র পরিবহন বিষয়ক সম্পাদক রাকিব হাওলাদার ও সমাজসেবা সম্পাদক আজিজুল হক সরকার। সদস্য পদে চিবল সাংমা, নজরুল ইসলাম, রাকিবুল হাসান, রাকিবুল ইসলাম ঐতিহ্য, তানভীর হাসান সৈকত, রাইসা নাসের, সাবরিনা ইতি, ইশাত কাশফিয়া ইরা, নিপু ইসলাম তন্বী, হায়দার মোহাম্মদ জিতু, তিলোত্তমা শিকদার, জুলফিকার আলম রাসেল ও মাহমুদুল হাসান।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের প্যানেল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেশির ভাগই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক নেতা। তাঁরা বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণ ও নিয়মিত শিক্ষার্থী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী কালের কণ্ঠকে বলেন, সারা দেশের সব অঞ্চলের মেধাবী শিক্ষার্থীরাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে কয়েকটি অঞ্চল থেকে কোনো প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া যাঁদের দেওয়া হয়ছে তাঁদের অনেকেরই ছাত্রলীগের বাইরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ খুব কম।
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খুলনা অঞ্চলের শিক্ষার্থীই বেশি। তবে কেন্দ্রীয় সংসদে এই অঞ্চল থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে শীর্ষ পদে আইন বিভাগেরই তিন শিক্ষার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী বেশি হলেও গুরুত্বপূর্ণ পদে কাউকে দেওয়া হয়নি। সব অনুষদ, অঞ্চলকে নিয়ে সমন্বিত করে কমিটি গঠন করলে ফলপ্রসূ হতো বলে মনে করেন তিনি।
ছাত্রলীগ সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদেরই একটি সংগঠন। শিক্ষার্থীদের অধিকার ও দাবিদাওয়া নিয়ে আমরা সব সময়ই সোচ্চার। নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও দাবিদাওয়া নিয়েই কথা বলব আমরা।’
ছাত্রলীগের হল সংসদে আংশিক প্যানেল : ছাত্রদের ১৩টি ও ছাত্রীদের পাঁচটি হলের সংসদের শীর্ষ দুই পদে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে ছাত্রলীগ। প্রার্থীরা হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ভিপি পদে আকমল হোসেন ও জিএস পদে মেহেদী হাসান শান্ত। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ভিপি পদে আব্দুল্লাহ সুবাইল ও জিএস হাসিবুল হাসান শান্ত। মাস্টারদা সূর্য সেন হলে ভিপি পদপ্রার্থী মরিয়ম জামান খান সোহান ও জিএস পদে সিয়াম রহমান, বিজয় একাত্তর হলের ভিপি পদে সজিবুর রহমান সজীব ও জিএস এ কে এম নিশান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ভিপি পদে শহিদুল হক শিশির ও জিএস পদে মেহেদী হাসান মিজান, কবি জসীমউদ্দীন হলে ভিপি পদে ফরহাদ আলী ও জিএস পদে ইমাম হাসান, স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ভিপি পদে জুলিয়াস সিজার ও জিএস এম এম কামাল। সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ভিপি পদে সাইফুল্লাহ আব্বাসী অনন্ত ও জিএস রিফাত উদ্দিন, জগন্নাথ হলে ভিপি পদে উৎপল বিশ্বাস ও জিএস পদে কাজল দাস, স্যার এফ রহমান হলে ভিপি পদে আব্দুল আলীম খান ও জিএস আব্দুর রাহীম, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে ভিপি পদে হোসেন আহম্মেদ সোহান ও জিএস পদে ইরফানুল হক সৌরভ, অমর একুশে হলে ভিপি পদে তামিম মৃধা ও জিএস আহসান হাবীব, ফজলুল হক হলে ভিপি পদে শাহরিয়ার সিদ্দিক শিশিম ও জিএস মাহফুজুর রহমান। রোকেয়া হল সংসদে ভিপি পদে ইসরাত জাহান তন্নী ও জিএস সায়মা প্রমী, শামসুন্নাহার হলে ভিপি পদে জিয়াসমিন শান্তা ও জিএস পদে উম্মে আরাফাত জাহান লাকী, কবি সুফিয়া কামাল হলে ভিপি পদে ইশরাত জাহান ইভা ও জিএস পদে শাহরিয়া সুলতানা নদী, ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ভিপি পদে কোহিনূর আক্তার রাখী ও জিএস পদে সারা বিনতে জামাল, কুয়েত-মৈত্রী হলে ভিপি পদে রাজীয়া সুলতানা কথা ও জিএস পদে শাওলীন জাহান সেঁজুতি।
বিক্ষোভ : ফজলুল হক হলে ভিপি পদে শিশিমকে মনোনয়ন দেওয়ার বিরোধিতা করে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের একটি অংশ সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিক্ষোভ করেছে। শিশিম সংগঠনের ওই হল শাখার সভাপতি। তাঁর বিরোধিতাকারীরা বলছে, শিশিম সংগঠনে নিষ্ক্রিয়। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগও করেছে তারা।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের প্যানেল আজ : সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখা স্বতন্ত্র প্যানেল দেবে আজ সোমবার। এই সংগঠনটির নেতৃত্বে রয়েছেন ছাত্রলীগেরই বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কয়েকজন নেতা। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সংগঠন প্রতিক্রিয়াশীলদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে সেটা মানতে পারছেন না তাঁরা।
সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সনেট মাহমুদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ও প্রজন্মদের নিয়ে পৃথক প্যানেল ঘোষণার কাজ চলছে। আগামীকাল আমরা প্যানেল ঘোষণা করব।’
উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও, আজ ছাত্রদলের প্যানেল ঘোষণা : জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আজ সোমবার ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করবে। সংগঠনের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে গতকাল রবিবারও সংগঠনটি হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং নির্বাচন পেছানোসহ সাত দফা দাবিতে উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও করেছে।
দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে ছাত্রদল। সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল করে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে আসার আগেই কার্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় প্রশাসন। পরে সেখানেই ব্যানার নিয়ে বসে পড়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকী।
আকরামুল হাসান বলেন, ‘সাত দফা দাবি আদায়ে প্রশাসনের সব ক্ষেত্রে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাইনি।’