Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে সাধারণ জীবনযাপন। বিরূপ প্রভাব পড়ছে জীবন ও জীবিকায়। করোনার কারণে এরইমধ্যে যারা কাজ হারিয়েছেন এমন মানুষদের নতুন করে কর্মসংস্থানে নিয়ে আসা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য তো তা সত্যিই বড় চ্যালেঞ্জ। ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান।

এ ক্ষেত্রে প্রণোদনা প্যাকেজ পর্যাপ্ত নয়। প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজে তেমন সুবিধা নেই। এমনকি এসএমই উদ্যোক্তারাও আশানুরূপ সহায়তা পাচ্ছেন না। পরিস্থিতি উত্তরণে, শিল্প ও সেবা খাতে আরও বেশি প্রণোদনার প্রয়োজন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ নভেম্বর) স্টোর ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)-অক্সফাম আয়েজিত সংলাপে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও এসডিজিবিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফর্ম এই আয়োজনে সহায়তা করেছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আবদুস সালাম, সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।

সিপিডির গবেষণায় বলা হয়, করোনায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে জীবন ও জীবিকায়। যারা কাজ হারিয়েছেন, তাদের নতুন করে কর্মক্ষেত্রে নিয়ে আসাটা বেশ চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬ সালের জরিপ অনুসারে দেশে দরিদ্র মানুষের হার মোট জনশক্তির ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

করোনার কারণে এ বছর তা ৩৫ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। এর মানে হলো, অতিরিক্ত ১ কোটি ৭৫ লাখ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে আসবে। এ ছাড়া করোনার কারণে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের ঝুঁকিতে রয়েছে; যা দেশের শ্রমশক্তির ২০ শতাংশ।

এর মধ্যে ১৭ লাখ তরুণ কাজ হারাতে পারেন। এ ছাড়া এপ্রিল থেকে জুনে ৩ লাখ পোশাককর্মী কাজ হারিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে নীতি ও কাঠামোগত সহায়তা দরকার। যাতে নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। সীমিত পরিসরে চলা সেবা ও শিল্প খাত ঘুরে দাঁড়াতে কার্যকর প্রণোদনার ব্যবস্থা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছে সিপিডি। সংস্থাটির অভিযোগ, প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজে তেমন সুবিধা নেই। এমনকি এসএমই উদ্যোক্তারাও আশানুরূপ সহায়তা পাচ্ছেন না।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, করোনা মোকাবিলায় ১ লাখ ১৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার। ডলারের হিসাবে যা ১ হাজার ২০৭ কোটি ডলার। এই প্রণোদনা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এশিয়ার ৩১টি দেশের মধ্যে যা ২২তম। এ ছাড়া এই প্রণোদনা মাথাপিছু ৭৪ দশমিক ৮৬ ডলার।

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যা ২৩তম অবস্থানে। অন্যদিকে ভারতে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে ৩৭ হাজার ২৩৮ কোটি ডলার, ভিয়েতনামে ২ হাজার ৬৫০ কোটি, পাকিস্তানে ১ হাজার ৫৭৭ কোটি, কম্বোডিয়ায় ২২১ কোটি ডলার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। এরপরও বণ্টনব্যবস্থায় অনেক সমস্যা রয়েছে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, করোনা মোকাবিলায় ৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহায়তা এসেছে। যদিও এটি অন্যান্য দেশের তুলনায় কম; বিশেষ করে ভারতের তুলনায়। কিন্তু কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এই বৈদেশিক সহায়তার প্রভাব কী, তা পরিষ্কারভাবে আমরা পাইনি। আগামীতে এটি আমাদের লক্ষ রাখতে হবে। তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা শোনা যাচ্ছে। এই ঢেউ এলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কী করা হবে, সেটি আগে থেকে নজর দেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি প্রণোদনার তিনটি বিষয়। আয়তন, বিন্যাস ও বাস্তবায়ন। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত থেকে বোঝা যায়, আয়তনের ক্ষেত্রে ঘোষিত যথেষ্ট নয়। এর অন্যতম কারণ হলো দুর্নীতি সক্ষমতার ক্ষেত্রে প্রণোদনা উপযুক্ত লোকের কাছে পৌঁছানো যায়নি। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের দুর্বলতা সবচেয়ে বেশি। দুর্নীতির কারণে এ পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের ১২৫ জন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করতে হয়েছে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রণোদনা বণ্টনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শক্তির পরিবর্তে প্রশাসনিক শক্তিকে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রণোদনা বিতরণে স্বচ্ছতা ও প্রচারণায়ও ঘাটতি ছিল। এসব সমস্যা সমাধানে আগামী দিনে বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

দেশে বেকারত্বের সংজ্ঞা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সিপিডি। বাংলাদেশের শ্রমশক্তি সম্পর্কিত জরিপে বেকারত্বের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে : ‘১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের এমন ব্যক্তিকে বেকার বিবেচনা করা হয়েছে, যে সক্রিয়ভাবে কাজের সন্ধান করা বা কাজের জন্য প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও কোনো কাজ করেনি।’

অর্থনীতিবিদেরা এই সংজ্ঞার সঙ্গে একমত হতে পারেননি। তাদের দাবি, এই সংজ্ঞা বাংলাদেশে বেকারত্বের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য আংশিক কর্মসংস্থান সম্পর্কিত ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; বরং এই সংজ্ঞা দেশের মোট উৎপাদনের অন্যান্য উপাদানের মধ্যকার মৌলিক ভারসাম্যহীনতাকেই প্রতিফলিত করে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, দেশে যে উপায় ও সংজ্ঞায় বেকারত্ব নিরূপণ করা হয়, সেই সংজ্ঞা অচল ও অবাস্তব। বেকারত্বের সঠিক সংজ্ঞা নিরূপণ এবং তা চলমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্য-উপাত্তকে সংস্কারের অংশ হিসেবে সামনে আনা জরুরি।

তিনি বলেন, দেশে বেকারত্বের যে হার দেখানো হয়, তা সঠিক নয়। এই মুহূর্তে ১৮-২৮ বছর বয়সী যে সংখ্যক তরুণ আছেন, তাদের তিনজনে একজন বেকার। শিক্ষিত বেকার হয়তো দুজনে একজন।

দারিদ্র্য বিমোচন প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, দেশে দারিদ্র্য বিমোচন হবে কেমন করে, যদি মানুষের আয় না থাকে? আর কর্মসংস্থান না থাকলে ওই আয়টাই-বা আসবে কোথা থেকে? তাই দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি হওয়া উচিত কর্মসংস্থানকেন্দ্রিক। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এটি অন্তর্ভুক্ত করারও পরামর্শ রাখেন তিনি।

ওয়েবিনারে ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রণোদনার সুফল পেতে হলে বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে যাদের স্থানীয় পর্যায়ে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা আছে, তথ্য আছে, তাদের সঙ্গে সরকারের সংযুক্ততা বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে টেকসই দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানকে সমার্থকভাবে যুক্ত করার আহ্বানও জানান তিনি।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০৬ নভেম্বের ২০২০/এমএম