Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: আসিতেছে শুভদিন, দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ! সত্যিই কী বাংলাদেশের জন্য দিনটা শুভ হতে যাচ্ছে! বাংলাদেশ কী ভারতের বিপক্ষে এতসব ট্র্যাজেডির উপাখ্যান এক ম্যাচে ভুলিয়ে দিতে পারবে সমর্থকদের! কে জানে, উল্টো আরও এক ট্র্যাজেডির গল্পই আবার সমর্থকদের জন্য অপেক্ষা করছে কিনা? এতসব প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে আজ রাতে অ্যান্টিগায় ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে। তবে বাংলাদেশি সমর্থকদের চাওয়া অন্তত অ্যান্টিগায় ভারতের বিপক্ষে জিতে বহু পুরনো ক্ষতে একটু হলেও মলম লাগিয়ে দিক নাজমুল হোসাইন শান্তর দল। আর সেটি করতে যে নিজেদের সেরা ক্রিকেটটাই খেলতে হবে বাংলাদেশকে। ব্যাটে-বলে জ্বলে উঠতে হবে প্রতিটি ক্রিকেটারকে।

সেটা তো সবারই জানা। সেই জানা কাজটাই এবার মাঠে করে দেখাতে হবে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের। নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু ঢেলে দিয়ে হলেও হারিয়ে দিতে হবে ভারতকে। আর তাতে কিছুটা হলেও যে পুরনো ক্ষতটা সারবে বাংলাদেশের। পুরনো ক্ষতের কথা বারবার বলার কারণ; এই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেই ভারতের বিপক্ষে বহু কষ্ট, আক্ষেপ ও আফসোসের জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ। বহু ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে লড়াই করে শেষমেশ কিনা তীরে এসে তরী ডুবিয়েছে বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা। সমর্থকদের যেমন হতাশ করেছে, তেমনি নিজেরাও হতাশায় ডুবে চোখের জলে বুক ভাসিয়েছে। সেই গল্পটাও খুব পুরনো নয়। চলুন সেই পুরনো স্মৃতিচারণ করি আরও একবার। ফিরে যাই ভারতের বিপক্ষে তীরে এসে তরী ডোবানো কিংবা জেতা ম্যাচ হেরে চোখের পানিতে বুক ভাসানোর সেই সব ম্যাচে। যেই ক্ষত আজও ভুলতে পারেনি বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীরা। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে নামার আগে যা এখনও দুখের বীণা হয়ে বাজে মনের কোণে।

বেঙ্গালুরু ট্র্যাজেডি (২০১৬ বিশ্বকাপ)
সেবার বিশ্বকাপের সুপার টেনে কোনো ম্যাচেই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তবে কোনো ম্যাচেই এতটা কষ্টের কারণ হয়নি টাইগার সমর্থকদের। যতটা হয়েছিল ভারতের বিপক্ষে হারের পর।

বেঙ্গালুরুর চিন্মাস্বামী স্টেডিয়ামের সেই ম্যাচে ভারতকে ১৪৬ রানে থামিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর জবাব দিতে নেমে শেষ ওভারে বাংলাদেশকে ১১ রান করতে হত। উইকেটে তখন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম। মাহমুদউল্লাহ প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে মুশফিককে ব্যাটিংপ্রান্তে আনেন। হার্দিক পান্ডিয়াকে পরপর দুই বলে চার হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে যান মুশফিক। বাংলাদেশের ডাকআউটে তখন চলছে উদযাপনের প্রস্তুতি। পরের তিন বলে ২ রান করলেই ম্যাচ জিতবে বাংলাদেশ। সেখানে কিনা পরের তিন বলে তিন আউট। মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ফিরলেন বড় শট খেলতে গিয়ে। দিয়ে আসলেন আত্মাহুতি। অবিশ্বাস্যভাবে ১ রানে ম্যাচটা হেরে যায় বাংলাদেশ। যা আজও পোড়ায় গোটা বাংলাদেশকে।

কলম্বো ট্র্যাজেডি (২০১৮ নিদাহাস ট্রফি)
ক্রিকেটে এখনও বড় কোনো শিরোপা জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তবে সেবার শিরোপাটা হতে পারত বাংলাদেশেরই। এমন ম্যাচও যে হারা যায়, সেটাই তো কেউ ভাবেনি কোনোদিন। বাংলাদেশের ১৬৬ রানের জবাবে শেষ ১২ বলে ৩৪ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের। ১৯তম ওভার করা রুবেলের ৬ বল থেকেই ২২ রান নিয়ে নেন দীনেশ কার্তিক। এরপরও ম্যাচটা হাতে ছিল বাংলাদেশের। শেষ ওভারে ১২ রান করতে হত ভারতকে। বোলিংয়ে দলকে জেতানোর দায়িত্ব দেন সৌম্য সরকার। প্রথম তিনটি বলে দারুণ সাফল্য দেখান। চতুর্থ বলে ৪ হাঁকায় ভারত। একটা সময় শেষ বলে ম্যাচ জিততে ভারতকে ৫ রান করতে হত। অর্থাৎ ছক্কা ছাড়া ম্যাচ জয়ের সুযোগ নেই ভারতের। এমন পরিস্থিতিতে উদযাপনের ক্ষণ গুণছিল বাংলাদেশ। তবে শেষ পর্যন্ত সৌম্যকে ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা জয়ের স্বপ্নটা ধুলিস্যৎ করে দেন সেই কার্তিকই। ভারতের বিপক্ষে আরেক ট্র্যাজেডির সাক্ষী হয় ক্রিকেটপ্রেমীরা।

অ্যাডিলেড (২০২২ বিশ্বকাপ)
ভারতের ১৮৬ রানের লক্ষ্যে দারুণ শুরু পায় বাংলাদেশ। লিটন দাসের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল সমর্থকরা। এরপর হঠাৎই বৃষ্টি নামে। বাংলাদেশের লক্ষ্যটা দাঁড়ায় ১৬ ওভারে ১৪৫ রান। সেই পথে বাংলাদেশকে অনেকটা পথ টেনে নিয়ে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ২৭ বলে ৬০ রান করে রান আউট হয়ে ফিরতে হয় লিটনকে। এরপরও ম্যাচে ছিল বাংলাদেশ। শেষদিকে নুরুল হাসান বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন জয়ের। তবে শেষ পর্যন্ত ৫ রানের আক্ষেপেই পুড়তে হয়েছে টাইগারদের। ১৪ বলে ২৫ রানের ইনিংস খেলেও দলকে জেতাতে পারেননি সোহান।

এছাড়াও ভারতের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত মোট ১৩টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ। যেখানে বাংলাদেশ হাসার সুযোগ পেয়েছে কেবল একবার। এবার তাই পুরনো সব ট্র্যাজেডি ভুলিয়ে দিয়ে নতুন গল্প লেখার মিশন শান্ত বাহিনীর সামনে। যে গল্প লিখে অর্থাৎ বিশ্বমঞ্চে ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের পুরনো ক্ষতটা সারিয়ে তুলবেন শান্ত-সাকিব-হৃদয়-রিশাদরা; সেই প্রত্যাশায় এখন গোটা দেশ।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ২২ জুন ২০২৪ /এমএম