Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌  বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির জান্তা সরকারের সেনাসদস্যদের সঙ্গে স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চলমান সংঘাত আরও ব্যাপক আকার নিয়েছে। গত রবিবার রাখাইন রাজ্যভিত্তিক সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির (এএ) তাড়া খেয়ে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কমপক্ষে ৫৮ জন সদস্য আশ্রয় নেয়।এ ছাড়া সীমান্তের ওপার থেকে বেশ কয়েকটি গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রুতে। এতে অন্তত তিনজন গুলিবিদ্ধ হন। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কে ঘর ছেড়েছে সীমান্ত লাগোয়া তিন গ্রামের মানুষ। আর সীমান্তের পাঁচটি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

বিজিবি সদস্যরা রয়েছেন সতর্ক অবস্থানে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে প্রকাশ হয়েছে যে, রাখাইনে পাঁচটি সেনা ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর জান্তার কাছ থেকে দখল করে নিয়েছে আরাকান আর্মি। জান্তার অনুগত বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে রাখাইনে প্রচারপত্র সাঁটিয়ে দিয়েছে তারা। নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তমব্রæ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইনে গত রবিবার দিনভর ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ এপার থেকেও শোনা যায়। ভেসে আসে বোমাবর্ষণের শব্দ। ওপার থেকে ছুটে আসা গুলিতে আহত হন এপারের বাংলাদেশি বাসিন্দারা। মর্টার শেলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘরবাড়ি। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তের বাংলাদেশ অংশের জনপদগুলোর বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটতে থাকেন। থেমে থেমে গুলি ও বোমাবর্ষণ চলছে সীমান্তে।

গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকটি মর্টার শেল এসে পড়েছে বাংলাদেশ ভ‚খণ্ডে। ঘুমধুম ইউনিয়নের তমব্রæ, কোনারপাড়া, ভাজাবনিয়া, বাইশফাঁড়ি এলাকা থেকে শত শত পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে যাচ্ছে। বিজিপির তমব্রæ রাইট ক্যাম্প এবং ঢেঁকিবনিয়া সীমান্ত চৌকি ছাড়া প্রায় ৪৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় বিজিপির সব চৌকি আরাকান আর্মি দখলে নিয়েছে। জান্তার বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে আরাকান আর্মির ওপর গোলাবর্ষণ করছে। গোলাগুলি আর গোলাবর্ষণের বিকট শব্দে এপারের সীমান্তবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিদ্রোহীদের তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের ঢুকে পড়ার ঘটনা এটিই প্রথম। বলা হচ্ছে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা তাদের ইতিহাসে সবচেয়ে নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে নেপিদোকেন্দ্রিক সামরিক শাসকের হাতে দেশের প্রায় ৪৩ শতাংশ অংশের নিয়ন্ত্রণ নেই। অনেক জায়গায় বিদ্রোহীরা আলাদা বেসামরিক প্রশাসন চালু করেছে।

সীমান্তের ওপার থেকে গত রবিবার বেশ কয়েকটি গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়ে তমব্রæর কোনারপাড়া, মাঝেরপাড়া ও বাজারপাড়া এলাকায়। এতে গুলিবিদ্ধ হন তিনজন। বাইশফাঁড়ি এলাকার এক বাড়িতে একটি গোলা এসে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়িটিতে আগুন ধরে যায়। সীমান্তে যে অস্থিরতা চলছে সেটা কোনোমতেই কাম্য নয়। তারপরও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সীমান্তের লোকজনকে সতর্ক ও নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য বলা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যের লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠী বাংলাদেশের কক্সবাজার আশ্রয়শিবিরে অবস্থান করছে। গত কয়েক দশকে বিভিন্ন সময় এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। বাংলাদেশ সরকার এসব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য কাজ করছে।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ /এমএম