Menu

আমেরিকার কংগ্রেস ভবনে গত ৬ই জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকদের নাশকতামুলক আচরণে আমেরিকার সভ্য সমাজ তথা সমগ্র বিশ্বের জনগণ হতবাক হয়েছে এবং সর্বত্র নিন্দার ঝড় উঠেছে। আমেরিকার ইতিহাসে এই দিনটি কালো দিন হিসেবে স্বরণীয় হয়ে থাকবে। এতদিন যে দেশ সারা বিশ্বে গনতন্ত্রের আদর্শ বলে প্রতিয়মান হয়ে আসছিল, এখন তার নিজের ঘরেই গনতন্ত্রের এইরকম বেহাল অবস্থা কেউ মেনে নিতে পারছে না।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সমর্থকরা গনতন্ত্রের উপর যে কালিমা লেপন করেছে এবং গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে, সেটা পূরণ হতে বহুদিন সময় লাগবে। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গত কয়েক বছরের নিজ দেশ এবং বহির্বিশ্বের জন্য প্রণীত নীতিমালা আমেরিকা ও বিশ্ব জুড়ে বিতর্কের ঝড় তোলে এবং তিনি আমেরিকার বিভিন্ন জাতির মধ্যে যে বিভাজন ও বিদ্বেষের বীজ বপন করে আসছিল তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গত ৬ই জানুয়ারির ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে যার শিকড় সমাজের গভীরে প্রবেশ করেছে। নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জন্য আমেরিকার জনগণকে একত্রিত করা হবে কঠিন এক চ্যালেঞ্জ।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অসংখ্য বিতর্কমূলক ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে যার রেশ কিছু দিন আমেরিকার জনগণ ও গোটা বিশ্বকে প্রত্যক্ষ ও পরক্ষ ভাবে বহন করতে হবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যতক্ষণ ক্ষমতায় থাকবে, জনগণ, দেশ, সংবিধান ও গনতন্ত্রের জন্য বিরাট হুমকি হয়ে থাকবে। আজ পর্যন্ত সে নিজে ও তাঁর সমর্থকগন নির্বাচনের ফলাফলকে সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেনি। তিনি তার সমর্থকদের “দুর্দান্ত সমর্থক” বলে আখ্যায়িত করেছেন। ট্রাম্প কন্যা ইভানকা ট্রাম্প দাঙ্গাকারীদের “দেশ প্রেমিক” হিসাবে উল্লেখ করেছে।

ক্যাপিটল হিলে তাঁর সমর্থকদের তাণ্ডবের আগে ট্রাম্প অত্যন্ত বিতর্কিত একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। যার জেরেই তাঁর সমর্থকরা ক্যাপিটলে যান এবং সহিংস তাণ্ডব করেন বলে অভিযোগ করা হয় কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনে করেন, তিনি একটিও অন্যায্য কথা বলেননি। তিনি যা বলেছেন ঠিক বলেছেন।

অবশ্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্বিতীয় বার ইমপিচ হওয়ার পর সুর পাল্টিয়ে তিনি আমেরিকার জনগণকে ঐক্য-বদ্ধ থাকতে এবং কোন রকম সহিংসতায় না জড়ানোর কথা বলেছেন। কয়েক দিনপর এমনিতেই তাঁর ক্ষমতা ছাড়তে হবে। কিন্তু এ বিদায় কোনরকম আবেগঘন মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে নয়, বরং এ যেন এক উত্তাল ও সহিংস বিদায়।

ডেমোক্রেটিক দলের নেতারা চাইছে ২০ শে জানুয়ারির পূর্বে অভিশংসনের মাধ্যমে ট্রাম্পের ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা। অথবা সংবিধানের ২৫ তম সংশোধনের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনে অযোগ্য ঘোষণা করা। পৃথিবীর বৃহৎ গনতান্ত্রিক দেশগুলিতে আত্মকেদ্রিক প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করতে সংবিধানে কিছু শক্তিশালী আইন আছে যার দ্বারা দেশ ও জাতিকে রক্ষা করা হয়ে থাকে।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টেফানি ডুয়ারিচ বলেছেন “কোন রাজনৈতিক নেতা যেন হিংসাকে প্রশ্রয় না দেন। সমর্থকদের হিংসার ঘটনায় যেন উৎসাহিত না করেন”। এফবিআই সতর্কবার্তা দিয়েছেন, আগামী ২০ শে জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ফের হামলা হতে পারে। ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া টুইটার, ফেসবুক ও ইউটিউব প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একাউন্ট বন্ধ করার পরিপেক্ষিতে সমর্থকের মাঝে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে।

ইতিমধ্যে রিপাবলিকান দলের যে সকল নেতারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অস্বাভাবিক কাজ ও আচরণকে যারা স্বাভাবিক বলে সমর্থন করে আসছিলেন তাঁরাও এখন দুরত্ব বাজায় রাখছেন। ৬ই জানুয়ারি আমেরিকার ঘটনাটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বন্ধু নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকার এটা কি ভাবে দেখছেন এবং এই ঘটনা থেকে তাঁরা কি শিক্ষা নিচ্ছেন? ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তার সমর্থকগন উগ্র হিন্দু জাতিয়তাবাদকে উসকে দিয়ে বেশ কয়েক বছর জনগণের মধ্যে বিভেদের বীজ রোপণ করে জাতিকে বিভক্ত করে চলছেন।

মোদী সরকারের কিছু নীতি বিশ্বে অনেকের মাঝে সমালোচনা ও নানা বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর জনতার পার্টির একই দশা হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আশা করি মোদীর জনতা পাটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরাজয় ও পরিণতি থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে সংশোধন করবেন। ঘরে ও বাইরে অগ্রহণযোগ্য ও দেশ বিভাজন নীতি থেকে সরে দাঁড়াবেন।

লেখকঃ আলমগীর দারাইন, কলামিস্ট, ক্যালগেরী, আলবার্টা, কানাডা।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ১৫ জানুয়ারি ২০২১ /এমএম