Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌  রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম। এর আগে একবারে জ্বালানির এমন মূল্যবৃদ্ধি দেখেনি বাংলাদেশ। কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎই অতিপ্রয়োজনীয় এই দ্রব্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠণও। জ্বালানির এই উত্তাপ রাজনীতির হাওয়াকেও উত্তপ্ত করেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো মাঠ গরম করছে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধনের মাধ্যমে। অনেক দল জ্বালানির মূল্য না কমালে হরতালের হুমকিও দিয়েছে।

অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয়, বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা ও তেলপাচার রোধে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না। চলমান অস্থিরতা মোকাবিলায় এই সিদ্ধান্ত সহায়ক হবে বলেও মনে করছেন সরকার সংশ্লিষ্টরা। তবে অর্থনীতিবিদরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক মনে করছেন না। তারা মনে করেন, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে। আমদানি-রপ্তানির মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে সেই ঘাটতি আরও বেসামাল হয়ে পড়তে পারে। ফলে দেশের শান্ত পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

তত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ মির্জা আজিজুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, জ্বালানির এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে প্রথমেই ধাক্কা খাবে পরিবহন সেক্টর। পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে সবই সম্পৃক্ত। পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। দেশের মূল্যস্ফীতি এমনিতেই নাগালের বাইরে। এখন মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে। ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষির ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে। কৃষির উৎপাদন না হলে খাদ্য আমদানি বাড়বে। আমদানি-রপ্তানির ঘাটতি আরও বেসামাল হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম তো আরও আগেই বেড়েছিল। তখন সরকার কেন সিদ্ধান্ত নেয়নি। এখন তো বিশ্ববাজারে দাম কমেছে। সময়ক্ষেপণ করে অস্থিরতা তৈরি করার কোনো মানে হয় না। অনেক দেরিতে আমরা দাম বাড়াই। আবার দাম কমলে আমরা আর সমন্বয় করি না। এই প্রবণতা থেকে তো বেরিয়ে আসা দরকার।

ক্ষোভে ফুঁসছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ: জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষোভে ফুঁসছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। গতকাল মিরপুরের একটি ফিলিং স্টেশনে জ্বালানি নিতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা কেমন দেশে বাস করি, যেখানে জনগণের কোনো মতামতের প্রয়োজন হয় না, জনগণের সামর্থ্যের কথা বিবেচনা হয় না। যখন যার যেটা করতে ইচ্ছে হয় সেটা করছে, যখন ইচ্ছে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। তিনি বলেন, সরকারি লোকেরা চুরি করতে করতে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে, চুরি এখন সাধারণ মানুষের মাথার ওপর চাপিয়ে দেয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই। হঠাৎ তেলের দাম বাড়িয়ে সরকার নিজেদের বোঝা হালকা করছে।

রাসেল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, হুট করে তেলের দাম সরকার এতো বাড়িয়ে দিয়েছে, কী বলব কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাদের কিছু বলার নেই, কারণ আমরা বললে কোনো লাভও হয় না। সাধারণ মানুষের কথায় কিছু যায় আসে না। তিনি বলেন, শুক্রবারই আমার গাড়িতে তেল শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে আর নেয়া হয়নি। শনিবার পাম্পে এসে দেখি দাম প্রায় অর্ধেক বেড়ে গেছে। এর প্রভাব তো সব পর্যায়েই পড়বে। আমরা কোথায় যাব? কীভাবে বাঁচব? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, সরকার যখন যে সিদ্ধান্ত নেবে আমাদের সেটাই মেনে নিতে হবে। আমরা এমন এক দেশে বসবাস করি, যেখানে আমাদের খুব বেশি মতামত প্রদান বা মূল্যায়নের সুযোগ নেই।

সরকার তেলের দাম বাড়িয়েছে, আমরা যারা গাড়ি চালাই আমাদেরকে বাধ্য হয়ে সে দামেই কিনতে হবে। দাম বাড়ানোয় বিরূপ প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিরূপ প্রভাব তো অবশ্যই পড়বে। জ্বালানি এমন একটা জিনিস, যার দাম বাড়লে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যায়। তেলের দাম তো প্রায় অর্ধেক বেড়েছে এখন দেখার বিষয়, বাকি জিনিসের দাম কেমন বাড়ে। মালিবাগ অটো সার্ভিস পাম্পের সেলসম্যান মো. আরমান হোসেন বলেন, তেলের দাম বাড়ায় পাম্পে গাড়ির সংখ্যা অনেক কমে গেছে। অনেক মানুষ আছে তারা তেলের দাম শুনেই ভয়ে চলে যায়। হঠাৎ করে এতো দাম বাড়িয়ে দেয়ায় এমনটা হচ্ছে। হঠাৎ এতো বাড়িয়ে দেয়া আসলে উচিত হয়নি। তিনি বলেন, অন্যান্য দিনে এই সময়ের মধ্যে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার তেল বিক্রি করতাম, কিন্তু এখন পর্যন্ত ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার তেল বিক্রি হয়েছে। যাদের খুব বেশি প্রয়োজন তারা আসছে। বাকিরা তেল কম খরচ করছে, কেউ রিকশায় চলছে বা পায়ে হাঁটছে।

রাজনীতিকদের প্রতিবাদ: জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো পৃথক-পৃথক বিবৃতি ও অনুষ্ঠানে নেতারা সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার জন্যই জ্বালানির মূল্য বাড়িয়েছে। জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ক্ষমতা ধরে রাখার স্বার্থে যেনতেন প্রকারে আইএমএফের শর্ত পূরণে জনগণকে বলি দিচ্ছে সরকার। দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধ করেও ঘাটতি সমন্বয়ের শর্ত পূরণ করা যেত। সরকার সে পদক্ষেপ নেয়নি। সরকার সীমাহীন দুর্নীতি ও অবাধ লুণ্ঠনের পথ খোলা রেখে দেশের জনগণের বেঁচে থাকার অধিকারকেই তছনছ ও পদদলিত করে দিয়েছে।

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নির্দয় ও নজিরবিহীন উল্লেখ করেছেন জিএম কাদের। শনিবার বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ৫১ শতাংশেরও বেশি পর্যন্ত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নির্দয় ও নজিরবিহীন। জ্বালানি তেলের এমন মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবনে মহাবিপর্যয় সৃষ্টি হবে। প্রমাণ হলো দেশের মানুষের প্রতি সরকারের কোনও দরদ নেই। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে বাসদ (মার্ক্সবাদী)।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানায় দলটি। এদিকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, অবিশ্বাস্য ও অকল্পনীয়ভাবে বিইআরসিকে এড়িয়ে চোরাগোপ্তা কায়দায় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে।

আইএমএফকে খুশি করতে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির গণবিরোধী সিদ্ধান্ত দেশবাসী মেনে নেবে না। জনগণের কাছে জবাবদিহি না থাকায় চরম স্বেচ্ছাচারীভাবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। সব ধরণের জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিদ্যুতের লোড শেডিংয়ে মানুষ বিপর্যস্ত, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলছে। আগের দিন জ্বালানি তেলের মূল্য সহনীয় মাত্রায় বাড়ানোর কথা বলে রাতের বেলায় পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন ও অকটেনের মূল্য প্রায় ৪৫ ভাগ বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক এবং জনগণের প্রতি সংবেদনহীনতার চরম বহিঃপ্রকাশ বলে অভিমত প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরো।

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বিবৃতিতে বলেছেন, বিশ্ববাজারে যখন তেলের দাম নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে তখন তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি কৃষি, শিল্প, পরিবহনসহ সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যয় বাড়িয়ে দেবে আর সাধারণ নাগরিকের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে। বিবৃতিতে এলডিপি (একাংশ) সভাপতি আবদুল করিম আব্বাসী ও মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করে আওয়ামী লীগ সরকার প্রমাণ করেছে, তারা আর এক মুহূর্তও ক্ষমতায় থাকার অযোগ্য।

জ্বালানি তেল ও সারের বর্ধিতমূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে জাসদের সহযোগী সংগঠন জাতীয় কৃষক জোট শনিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে জাসদ চত্ত¡রে মানববন্ধন ও সমাবেশের কর্মসূচি পালন করেছে। প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি। দলটির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মনজু জানান, এদিন তারা জ্বালানি তেলের দামবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। তারা অবিলম্বে সরকারকে এই অবস্থান থেকে সরে আসার আহবান জানিয়েছেন।

এদিকে, তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে সিপিবি। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে এ সমাবেশে দলের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।

নেতারা বলেছেন, জনস্বার্থের কথা ন্যূনতম বিবেচনা করতে ব্যর্থ এই সরকারের উচিত ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে সিপিবি জেলা-উপজেলায় ঘেরাও, অবরোধ ও প্রয়োজনে হরতালের মতো কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবে।

সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের: জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল শনিবার বিকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধনে এ দাবি জানায় সংগঠনটি। প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা দেশের সাধারণ মানুষের চরম এক দুঃসময়ে জ্বালানি তেলের দাম একলাফে প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি বাড়ানোর ফলে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। পরিবহন ব্যয় দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য সাধারণ মানুষের সামর্থ্যরে বাইরে চলে যাবে। ইতোমধ্যে পরিবহন সেক্টরে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হবে, ফলে আমদানির উপর নির্ভরশীলতা বাড়বে। প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক ছোট ছোট শিল্প কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে একদিকে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে জাতীয় অর্থনীতির উপর চাপ আরও বাড়বে। তিনি অনতিবিলম্বে বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করে, পূর্বের মূল্য বহাল রাখার দাবি জানান।

এদিকে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের যে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে এর খেসারত পুরো জাতিকে দিতে হবে বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজ। সংগঠনটি বলছে, দুই চার জন ব্যক্তির ভুলনীতি ও দুর্নীতির কারণে জ্বালানি জ্বরে ভুগছে দেশ। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে শনিবার এক প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনটির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, অকটেন এবং পেট্রোল আমরা দীর্ঘদিন ধরে আমদানি না করে গ্যাস এবং ডিজেল রিফাইন কনডেন্সার থেকে এ উৎপাদন করি। আমরা জানি এ দুটি জ্বালানির মজুত আমাদের পর্যাপ্ত রয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে দেশীয় উৎপাদিত এই দুটি জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।

মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা বিশেষজ্ঞদের: জ্বালানির মূল্য রেকর্ড পরিমাণে বাড়ানোর কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জ্বালানির এত মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। এই মূল্যবৃদ্ধিকে কোনোভাবেই সমন্বয় বলে না। একে একতরফাভাবে চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত বলে। সরকার আগে থেকেই পর্যায়ক্রমে সিদ্ধান্ত নিতে পারতো। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ানোর কথা বলে আপনি যদি দাম বাড়ান, তাহলে বিশ্ববাজারে দাম কমলে কমানোরও দাবি রাখে। এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অবশ্যই গণশুনানি করা জরুরি ছিল। আগে অন্তত গণশুনানি হতো। মধ্যরাতে এমন সিদ্ধান্তকে আপনি জনবান্ধব সিদ্ধান্ত বলতে পারবেন না। আপনি মানুষকে কিছু জানতেই দিলেন না। ভোক্তার জানার অধিকার আছে। জ্বালানির দাম বাড়লে সব কিছুর ওপর প্রভাব পড়বে। জ্বালানি ছাড়া তো পরিবহন চলবে না। পরিবহন ব্যয় বাড়লে সবকিছুতেই ব্যয় বাড়বে। মানুষের সেবা পাওয়া কমে যাবে। সেবার মূল্য বেড়ে যাবে। এমনকি হাসপাতালের ব্যয় পর্যন্ত বেড়ে যাবে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, একজন ভোক্তার অধিকারের কথা বিবেচনা করলে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর আগে অবশ্যই গণশুনানির আয়োজন করা উচিৎ ছিল। জ্বালানির এমন মূল্যবৃদ্ধি একেবারেই অপ্রত্যাশিত। তিনি বলেন, জ্বালানির দাম বাড়তে পারে, তা আমরা ধারণা করছিলাম। সরকার লোডশেডিং বা অন্যান্য ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিছুটা সাশ্রয়ী হওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা এটি সয়ে নিচ্ছি। কিন্তু এমনভাবে জ্বালানির দাম বাড়ানো হলো যে তা মানুষের ধারণার বাইরে। সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে অর্থনীতি, রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। জ্বালানির এই মূল্য প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বাড়াবে। আমি আশঙ্কা করছি, মূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিটে চলে যাবে।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০৭ আগস্ট ২০২২ /এমএম