প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত পাঁচজনই মারা গেছেন। অর্থাৎ মৃত্যু শতভাগ। এর আগে ২০২৩ সালে নিপাহ ভাইরাসে ১৩ জন আক্রান্ত হন। মারা যান ১০ জন। ওই বছর এই ভাইরাসে মৃত্যুহার ছিল ৭৭ শতাংশ।বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীতে সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) আয়োজিত ‘নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকি’ বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়।
সভায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন নিপাহ ভাইরাসের বিস্তার এবং ঝুঁকিবিষয়ক একটি তথ্যনির্ভর উপস্থাপনা তুলে ধরেন। এতে তিনি উলেখ করেন, নিপাহ ভাইরাসের প্রধান বাহক বাদুড়। এ বছর ভাইরাসটিতে আক্রান্ত পাঁচজনের মধ্যে দুজন শিশু, চারজন পুরুষ এবং একজন নারী। তাদের মধ্যে দুজন মানিকগঞ্জের বাসিন্দা। বাকি তিনজনের বাড়ি খুলনা, শরীয়তপুর ও নওগাঁয়।
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, সাধারণত খেজুরের কাঁচা রস থেকে নিপাহ ভাইরাস মানুষের মধ্যে বেশি সংক্রমিত হয়। শীতকালে খেজুরের রস খাওয়ার সুযোগ থাকে। এ কারণে এই সময়েই ভাইরাসটি ছড়ায় বেশি। নিপাহ একটি মারাত্মক রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস। এই ভাইরাসে আক্রান্ত প্রায় ৭১ শতাংশ রোগীই মারা যান। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে ২৮ শতাংশ রোগী সংক্রামিত হয়ে থাকেন। এমনকি আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধ পান করে কোলের শিশুও নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তাই প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে মানুষকে সাবধান হতে হবে।
মতবিনিময় সভায় আরও জানানো হয়, ১৯৯০ সালে বিশ্বে প্রথম মালয়েশিয়ায় নিপাহ ভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়। বাংলাদেশে ২০০১ সালে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। দেশে প্রথম সার্ভিলেন্স (জরিপ) শুরু হয় ২০০৬ সালে। এখন পর্যন্ত (২০০১ থেকে ২০২৪) মোট ৩৪৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৪টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসটি। প্রতি বছরের ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত ভাইরাসটি ছড়ানোর উপযুক্ত সময়। আর নিপাহ ভাইরাস আক্রান্তের ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে।
সভায় অন্য বক্তারা বলেন, শীত ঋতুতে বিভিন্ন স্থানে উৎসব করে খেজুরের কাঁচা রস পান করা হয়। এ ছাড়া ব্যবসায়কি উদ্দেশ্যে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে রস পাঠানো হচ্ছে। এভাবে খেজুরের কাঁচা রস দেশের বাইরে পাঠানো হলে এবং সেখানে নিপাহ ভাইরাসের বিষয়টা আলোচনা হলে বিদেশ থেকে আন্তর্জাতিক বাধা আসতে পারে। এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সবাইকে খেজুরের কাঁচা রস পানে বিরত থাকতে হবে। পাখি বা অন্য কোনো প্রাণীর ভক্ষণ করা অর্ধেক ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে খেজুরের রস ও গুড় ১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ফুটিয়ে পান করলে সমস্যা নেই।
বক্তারা বলেন, নিপাহ ভাইরাসের কোনো ওষুধ নেই, টিকাও নেই। কেবলমাত্র উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, থাইল্যান্ডসহ মোট চারটি দেশে টিকা তৈরির গবেষণা চলছে। আগামী ২০২৭ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে টিকা বাজারে আসতে পারে।
সভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঢাকা বিভাগে ১৩টি জেলা সদর ও ৮৮টি উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স রয়েছে। প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকদের ভাইরাসটি সম্পর্কে সচেতন করা হয়েছে। এসব হাসপাতালে নিপাহ সন্দেহভাজন কোনো রোগী এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান, ভাইরাস সম্পর্কে সবাইকে সচেতন হওয়ার বিষয়ে জোর দেন।
সভায় আরও জানানো হয়, নিপাহ ভাইরাসের প্রাথমিক লক্ষণ এনকেফেলাইটিস। উপসর্গযুক্ত ব্যক্তির শ্বাসকষ্ট সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে কারও জ্বর বা শরীরের তাপমাত্রা ১০১.৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের অথবা ৩.৮৫ সেন্টিগ্রেড বেশি হতে পারে। রোগীর খিঁচুনি হতে পারে। অজ্ঞান হতে পারে। এছাড়া আবোলতাবোল বকতে পারে। এমন পরিস্থিতি হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে। এছাড়া আইডিসিআর ও আইসিডিডিআর,বিতে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ /এমএম