Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: দেশের প্রধান কয়েকটি সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। দুর্বল অর্থনীতির দেশে এক বড় সমস্যা। কিন্তু কোনোভাবেই বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। নিত্যপণ্যের অসহনীয় দামে ক্রেতারা দিশাহারা। বিগত সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। সরকার পতনের পর সাধারণ মানুষ অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল কিন্তু যে লাউ সেই কদু। বাজারে পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু কোনো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি এবং সরবরাহ তদারকি ও পর্যালোচনার জন্য জেলা পর্যায়ে ‘বিশেষ টাস্কফোর্স’ গঠন করেও কোনো কাজে আসছে না।

জনগণ প্রত্যাশাও করেছিলেন- বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু সেই আশার প্রদীপ জ্বলছে না। কয়েক মাস থেকেই অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে চালের দামও বাড়ছে। গত বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়, যাতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হয়েছেন। আগের বছরের তুলনায় গত বছর চাল আমদানির পরিমাণ অনেক কম ছিল। কিন্তু এবার আমদানি বাড়বে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও উজানের দেশগুলো থেকে আসা ঢলে আমনের উৎপাদন প্রায় ৮ লাখ ৩৯ হাজার টন কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। টিসিবি বলছে, গত ৮ আগস্ট নতুন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর মোটা চালের সর্বনিম্ন দাম কেজিতে ২ টাকা, মাঝারি চাল ৪ টাকা এবং সরু চালের দাম ১২ টাকা বেড়েছে। সংশ্লিষ্টদের নিশ্চয়ই এটা অজানা নয় যে দেশে কোনো মৌসুমে উৎপাদন ব্যাহত হলে চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে।

২০১৭ সালে হাওরে আগাম বন্যায় বোরো মৌসুমের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তখন এক সপ্তাহে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৭ থেকে ৯ টাকা বেড়ে গিয়েছিল। বিদেশ থেকে চাল আমদানির জন্য তৎকালীন সরকারকে বেশ দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছিল। এবার যাতে সেই পরিস্থিতি না হয়, সেজন্য সরকারকে আগেই প্রস্তুতি নিতে হবে। গরিব মানুষের খাদ্যব্যয়ের একটি বড় অংশ যায় চালের পেছনে। চালের দাম এমন সময়ে বাড়ছে, যখন ভোজ্যতেল, চিনি, সবজি, ডিম, মুরগির মাংসসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম চড়া। খাদ্য অধিদপ্তর বলছে, তাদের গুদামে এখন চালের মজুত ১০ লাখ টনের নিচে নেমেছে, যা গত ১৫ আগস্ট ছিল প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টন। সরকারিভাবে বিতরণ বাড়ানোয় মজুত কমছে।

এ অবস্থায় চালের মজুত ও খোলাবাজারে বিক্রি দুটোই বাড়াতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার উদ্যোগ নিলেও বাজারে প্রভাব পড়ছে না। সরকার ২০ অক্টোবর এক দফায় চালের শুল্ক-কর সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়েছে। কিন্তু চালের দামসহ বাজারে কোন ইতিবাচক বার্তা নেই। পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে সব উদ্যোগ। অন্তর্বর্তী সরকার তিন মাসেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়নি। শুধু চাল নয়, প্রতিটি তরিতরকারির দাম সাধারণ ভোক্তার নাগালের বাইরে। সরকার ১৯টি পণ্যে শুল্ক কমিয়েছে, কিন্তু শুল্ক কমানোর সুবিধা ভোক্তারা পাচ্ছে না। এই অবস্থায় মানুষ রীতিমতো দিশাহারা। নিম্ন আয়সম্পন্ন মানুষ ছাড়াও মধ্যবিত্তরাও তাদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। নিত্যপণ্যের বাজারে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। প্রায় দুই বছর ধরে ভোগ্যপণ্যের বাজারে বেসামাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, আমদানিনির্ভরতা, বাজারে সিন্ডিকেট, মজুতদারির কারণে বেড়েই চলছে নিত্যপণ্যের দাম। যার ভয়াবহ প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। ফলে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। সর্বোপরি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনজীবনে বয়ে আনছে অমানিশার ঘোর অন্ধকার। জনসাধারণের স্বস্তির জায়গা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।

টিসিবির হিসাবে, এক সপ্তাহে মসুর ডাল, মুগ ডাল, আদা, এলাচি, খাসির মাংস, দেশি মুরগি ও চিনি এ সাতটি নিত্যপণ্যের দাম কিছুটা কমেছে। এসব পণ্যের দাম আগেই অনেক চড়া ছিল। ফলে সামান্য কমলেও তাতে স্বস্তি ফেরেনি। প্রতিশ্রুতির দিনের তালিকায় দিন যোগ হয় কিন্তু পণ্যের দাম কমে না। আরও বাড়তি টাকা গুনতে হয় ভোক্তাদের। কিন্তু বাড়ছে না মানুষের আয়। ফলে দরিদ্র ও নিন্মমধ্যবিত্ত শ্রেণির, বিশেষ করে স্থির আয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। সরকার পরিবর্তনের ফলে মানুষের মধ্যে যে প্রত্যাশা জন্ম নিয়েছিল, ক্রমেই তা হতাশায় রূপ নিচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এটি যদি সত্য হয় তাহলে ব্যর্থতা কাদের? বাজার কেন নিয়ন্ত্রণে আসছে না- এমন প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে। একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না-বাজার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে ছাত্র-জনতার অর্জন অনেকটা ম্লান হয়ে যাবে। বিগত সরকার রাজনৈতিকভাবে যতটা শক্তিশালী ছিল- ঠিক ততটাই ব্যর্থ হয়েছে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে। আমাদের প্রত্যাশা বিগত সরকার যা ১৬ বছরে পারেননি সেই কঠিন কাজটি এ যুগের তরুণদের দ্বারা অসম্ভব নয়। জনগণের কাছে এখন তারা আস্থার প্রতীক। সবকিছু বিবেচনা করে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙাসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই।

আমরা মনে করি, বাজারে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে গঠিত টাস্কফোর্স, ভোক্তা অধিকার, প্রতিযোগিতা কমিশন, ট্যারিফ কমিশন- প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। ভোক্তার স্বার্থ দেখার দায়িত্ব সরকারের। দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় পরিমাণে চাল আমদানির বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাজারেও সরকারের তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে- যাতে শুল্ক তুলে নেয়ার সুবিধা ভোক্তারা পান। বাজারে যারা কারসাজি করে তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা জরুরি।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ০৩ নভেম্বর ২০২৪ /এমএম