Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌  দেশে ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে। ধারাবাহিকভাবে একই স্টাইলে এ জাতীয় যৌন সন্ত্রাসের ঘটনায় রীতিমতো আতঙ্ক নেমে এসেছে কর্মজীবী নারী, শিশু, ছাত্রী, শিক্ষিকা ও গৃহবধূদের মধ্যে। শুধু যে রাতের অন্ধকারে, নির্জন রাস্তায়ই নারীর সম্ভ্রম লুট করা হচ্ছে, তা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মুক্তচিন্তার নিরাপদ পরিবেশেও উচ্চ শিক্ষার্থী নারীও নিরাপদ বোধ করতে পারছেন না। এসব জায়গাও সুযোগ-সন্ধানী ধর্ষকের দল ওতপেতে আছে। আকস্মিক এ ধরনের যৌন সন্ত্রাসের দৌরাত্ম্যে সর্বত্র উদ্বেগ নেমে এলেও পুলিশ হাঁটছে সেই পুরনো পথেই। সেই চিরাচরিত ভাষায় পুলিশ বলছে, এসব বিছিন্ন ঘটনা। মাঝে মাঝে এ জাতীয় অপরাধ একসঙ্গে ঘটে বলে মনে হয় হঠাৎ এই অপরাধের মাত্রা বেড়ে গেছে। ধর্ষণ রোধ হচ্ছে না, বরং বাড়ছেই। সর্বশেষ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে নিয়ে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল এখন ঢাকা।

বিশ্লেষকদের মতে, অবশ্য পুলিশের এ বিশ্লেষণকে দায় এড়ানোর কৌশল উল্লেখ করে অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ জাতীয় অপরাধ আগেও ঘটত। এখন তার কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকাশও পাচ্ছে ব্যাপকহারে। এজন্য দায়ী অনেক ফ্যাক্টর। আর অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করায় ঘৃণিত এই সহিংসতা প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিরোধ না করা গেলে সামনের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ধর্ষিতারা পরতে পরতে উপেক্ষিত। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ধর্ষকেরা অবাধে ঘুরে বেড়ায়। তাদের কোনো শাস্তি হয় না। এই আইনজীবী বলেন, বিচার প্রার্থীকে কোনো ধরনের আইনজীবীর সহায়তা দেয়া ছাড়া আদালতে তোলা যায় না কোনোভাবেই। এই বিষয়টি যে রকম আমাদের সংবিধানে আছে, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্টের অনেক জাজমেন্টেও রয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক আইনের অনেক ধারাতেও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় এ রকম ক্ষেত্রে অভিযুক্ত হিসেবে একজন নারীর মামলা চালানো কঠিন ব্যাপার। আমাদের সমাজে নারীদের পরতে পরতে সমস্যার মুখে পড়তে হয়। যেমন ধর্ষণের একজন ভিকটিমকেও নিজের প্রমাণ করতে হয় যে সে ধর্ষিত হয়েছে এবং বিচার চলাকালে তাকে দোষারোপ করার প্রবণতাও দেখা যায়। ছোট শহরগুলোতে অনেকেই রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকার কারণে অনেক সময় চাইলেও সাহস করে এগিয়ে আসেন না অনেক আইনজীবী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশে প্রতি ঘণ্টায় একজন করে নারী নির্যাতনের শিকার হয়। এ নিয়ে দেশে তেমন প্রতিবাদ হয় না। আওয়াজ একেবারেই হচ্ছে না তা নয়।

সংশ্লিষ্টদের মতে, ঘরে-বাইরে সব জায়গায়ই নারীরা নিরাপত্তাহীন। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে শিশুরা। এক বছর বয়সী শিশু থেকে বিভিন্ন বয়সের শিশুরা এ বর্বরতার শিকার হচ্ছে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে বেশি। বাংলাদেশে গত ১০ বছরে ৯ হাজার ৬০২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, এর মধ্যে ২ হাজারের বেশি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ। দেশে সবচেয়ে বেশি, ১ হাজার ৬২৭টি ধর্ষণ হয়েছে ২০২০ সালে। সে বছর দেশে করোনা মহামারি শুরু হয়। বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। আমরা মনেকরি ধর্ষণের মতো অপরাধ করে পার পাওয়া যায় এমন এক ধরনের ধারণা আছে। ফলে এই অপরাধগুলো বেশি ঘটছে। ধর্ষক ও নারী নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে এ ধরনের ঘটনা কমে আসবে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের যথাযথ হস্তক্ষেপ জরুরি।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ /এমএম