Menu

জাহিদুল হক

সামার এসে গেছে, আছ তো ভালো?
সপ্তাহান্তের এই সকালে,
উঠেছ ঘুম থেকে দেরিও হলে
সূর্য মেলে ধরে দীপ্র আলো।

জানালা খুলে দাও, সুরভিটাকে
আসতে দাও ঘরে তোমার কাছে,
করেছি যত প্রেম মনে কি আছে?
সকল চিরকালে, দুর্বিপাকে।

তোমার সাথে কবে হয়েছে দেখা
কবে যে হাতে হাত রেখেছি ঘোরে,
অটমে পাতাগুলো এখনো ঝরে
কবে যে দেখাগুলো হলো অদেখা।

দিচ্ছ গড়াগড়ি বিছানাজুড়ে
সেখানে খোঁজো কাকে হারানো ওমে,
এখনো ধুকপুক হূদয়ে দমে
শব্দ তোলে শুধু স্বপ্ন খুঁড়ে।

পাইনে-পাপেলেও লেকের পাড়ে
স্মৃতিরা পড়ে থাকে নিথর ঘ্রাণে—
তারা কি ভাঙনেও আমাকে আনে?
তোমার খুব কাছে—হূদয়ে, তারে?

সাঁতার কাটি আজো তোমার সাথে
স্মৃতির কালো হ্রদে—কোলোনে-ব্রুলে
অলীক জানালাটা কে দেয় খুলে
তোমারই ছোঁয়া আলো পেয়েছি তাতে।

ওঠো না, চলে এসো, সে-বানহপে
আমরা যাব দূরে বাখের বাড়ি,
আকাশে কিছু মেঘ বেঁধেছে পাড়ি
তোমাকে টুকে রাখি শিল্প ব্যেপে।

ভোরেরা বিলাপেও কাঁদতে জানে
আলোরা আঁধারেও যায় যে ডুবি,
দূরেরা হতে পারে নিকট খুবই
তোমার কথাগুলো কবিতা আনে।

তোমার স্মৃতিগুলো তারার মতো
আকাশে ফুটে থাকে চাঁদের পাশে
গোলাপ, টিউলিপে ঘ্রাণ যে আসে
সে তুমি ছাড়া আর কী করে হতো!

আমি তো বুক ভরে ভিজেছি মদে
কেন যে ঘর বাঁধি অটমে ঝড়ে,
তোমাকে মনে পড়ে, বৃষ্টি পড়ে
মিকেল ফ্র্যাস্কোকে স্মৃতিতে খোঁদে।

তোমার কি মনে আছে খুঁজেছি কবে
ডুসেলডর্ফের সে কবিটাকে,
ডয়েচে চুমো খেত স্বদেশ যাকে
যেভাবে আমাকেও বাংলা, তবে!

আর কি দেখা হবে গানের ঘরে?
রাডারবার্গারে বাঁধব কবে
আবার সেই বাসা…গোধূলি হবে
আর কি কোনো দিন তেমনি করে!

না যদি হয় হোক, স্মৃতি তো থাকে
একাল থেকে কালে চিরটাকালে,
পুনরাবৃত্তিতে উড়াব পালে
হারানো কথাগুলো—দুঃখটাকে :

তোমাকে পাব ফের কোন সে কালে
ফের কি দেব ভরে তোমাকে গানে?
অধুনা-ভাবি খুঁড়ে কোন ভাঙনে
বিষাদে ভরে যাবে উন্মাতালে!

কবির শব্দ
সালেহ আহমদ

কবিতা লিখতে শব্দ খুঁজছ মোটাসোটা অভিধানে
কবিতার শব্দ ঘুরছে দেখো, মিষ্টি হাওয়ার গানে।

গাছের পাতায়, খড়ের চালে, পুকুরের নীল জলে
শব্দেরা ঘুম, জাগিয়ে তোল, তোমারই করতলে।

নদীর জলে, মাছের সাঁতার, সুপুরিপাড়ের কাছে
কানামাছি শব্দ তোমার কাছে একদম বসে আছে।

পাহাড় আছে, ঘন পাইন বন, হাওড়ে বাউল মন
পাখির ডানায়, শব্দ জুড়োয় কবিতার অঙন।

সমুদ্রে যাও খোলা মন নিয়ে আকাশের মতো শব্দ
তোমার বুকে ঝাপটে পড়বে আচানক উপলব্ধ।

শব্দ তুমি খুঁজবে কেন? লুটাবে কবির পায়ে
শব্দ আসবে ক্লান্ত দুপুরে, নয়নতারার গায়ে।

বরমচালের রেললাইন ঘেঁষে লংলার ঘন বনে
শব্দেরা বসে মিলনমেলায় চুপচাপ আনমনে।

এইসব থেকে শব্দ খোঁজো—যদি কবি হতে চাও
অভিধানে থাকা শব্দের যত বন্দি হাত-পাও।

একত্র হওয়ার আগে মঞ্চ ভেঙে পড়ে
খালেদ হোসাইন

নাতিদীর্ঘ নয়, খুব ছোট এ ভ্রমণ
হৃদয়ে হৃদয়ে কিছু গমনাগমন।
দূরে থাকি, আরো দূরে নিয়ে যাও তুমি
চিত্র আর চিত্রকল্পে শিহরিত মন।

এ দূরত্ব ভূগোলের, অন্তরেরও বটে
অবিরাম ছুটে চলা আনে না নিকটে
মেঘের ওপরে মেঘ মৃদু অবকাশ
সবকিছু আঁকা যেন গূঢ় চিত্রপটে।

একত্র হওয়ার আগে মঞ্চ ভেঙে পড়ে
কিছু যায় গ্রামাঞ্চলে কিছু-বা নগরে।
দেশ-মহাদেশ ছেড়ে ছোটে মহাকাশে
কথা অপহৃত হয় দুপুরের পরে।

ঘাম-রক্ত থাকে তাতে আর সঞ্জীবনী
নীরবে রণিত হয় ধ্বনি-প্রতিধ্বনি।

পুরনো বই-বিপণিতে
মূল : ক্রিস্টোফার মর্লি
ভাষান্তর : কুতুব আজাদ

বইয়ের তাকে অপেক্ষারত গুপ্তধনের অনুমান করা দুঃসাধ্যপ্রায়,
যদিও সেখানে সম্ভব আসন্ন আশা-নিরাশার সরব উপলব্ধি
হয়তো বইয়ের মাঝে লুপ্ত মানুষের আর্ত চিত্কার
কিংবা হাসি-কান্নার সম্মিলিত স্বর,
মানুষের ন্যায় স্বকীয়তা নির্ণয় সেখানে বাহুল্যমাত্র।

পুরনো বইয়ের ক্রয়-বিক্রয় এক চলমান প্রক্রিয়া
এমন লেনদেনে আকস্মিকভাবে আসে অপ্রীতিকর নানা বিষয়—
শব্দরাশিই কেবল বাস্তব এবং ভাবনাচিন্তার খোরাক

কিংবা আমারই মতন সচেতন এক সত্তা।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ /এমএম