Menu

বিভ্রম

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: ইলুশন ডিলুশন এন্ড হ্যালুসিনেশন ; বুঝলে দাদাভাই ? এই তিনটার পার্থক্য জানো তুমি ?

টুপুরের মজা লাগে যখন উনি খুব কঠিন শব্দ ব্যবহার করেন । হ্যালুসিনেশন কি ব্যাপারটা টুপুর জানে । দাদুভাই মাঝে মাঝে ভুলে যান দিদুন যে গত পাঁচ বছর ধরে নেই । দিদুন এর সাথে একা গল্প করেন । মাঝে মাঝে কথা শুনলে মনে হয় দিদুন সামনে বসে আছেন উনি দেখতে পাচ্ছেন । শীতকালে গায়ে চাদর দিতে বলেন ; সন্ধ্যার সময় এরোসল স্প্রে করতে বলেন ।বুয়া মশার কয়েল জ্বালালে রাগ করে বলেন জানোনা ওর শাসকষ্ট হবে এতে !টুপুরের কল্পনা ব্যাপারটা খুব খারাপ লাগে না । বাবা বলেন ডিমেনশিয়া ; দাদাভাই নাকি আস্তে আস্তে সব ভুলে যাবেন ।এইযে উনি গল্প করছেন সুন্দর সময় কাটাচ্ছেন এটা সত্যি না মিথ্যে এতো জানার প্রয়োজন কি ? আনন্দ কি আসল নকল হয় ?

বেশ সময় নিয়ে বুঝাচ্ছে দাদাভাই ।পনের বছর বয়সী টুপুর অনেক মজা পাচ্ছে । তার সঙ্গে বড়দের মতো আলোচনা একজন ই শুধু চালায় টুপুরের দাদাভাই । বাবা অনেক ব্যস্ত থাকে আজকাল বাসায় পাওয়া যাই না তাকে । মা সংসার অফিস সামলে সময় দেবার চেষ্টা করে সবাইকে । কিন্তু মার্ কাছে এখনো টুপুর সেই ছোট্ট টুপুর । এখনো ঘুমানোর সময় মাথা নেড়ে দিয়ে বলে টুপুনটুস । ইদানিং মা একেবারেই ওকে বুঝতে চেষ্টা করেন না । এই জন্য দাদার ঘরে দুপুরে গল্প করতে বেশ ভালো লাগে টুপুরের । ওর সব বন্ধুদের স্মার্টফোন ট্যাব আছে শুধু ওর এখনও বাবার পুরোনো পার্সোনাল কম্পিউটার । মা এর কথা অনুযায়ী টুপুর এখনো যথেষ্ট বড় হয়নি । গ্রেড টেন এ ভালো রেজাল্ট করলে উনি স্মার্টফোনে কিনে দেবেন ।
জন্মদিনে বাবা তাকে একটা নতুন ডায়েরি কিনে দিয়ে বলেছেন ,”ইয়ং লেডি প্রতিদিন কি করেছ লিখবে ।”
টুপুর জিজ্ঞেস করল,” এমনি এমনি লিখতে যাবো কেন ? তাছাড়া মা আর তুমি নিশ্চয়ই লুকিয়ে পড়বে।”

বাবা হাসতে হাসতে উত্তর দিলেন ,”প্রাইভেসী বলে একটা ব্যাপার আছে । তোমার ডায়েরি কেউ পড়বে না । নিশ্চিন্ত মনে লিখতে পার।”

টুপুর আসলেও লিখছে । কিন্তু সবটা লেখে না। এই যেমন সে একটি ফেইসবুক প্রোফাইল খুলেছে।ফেইসবুক এ তার ভালো নাম অর্থাৎ স্কুল এর নাম এর একটা প্রোফাইল আছে যেটার নাম সোফিয়া আহমেদ । কিছুদিন হলো ওখানে তার একজন নতুন বন্ধু হয়েছে । ছেলেটা অন্য একটা স্কুল এ পড়ে এবং তার সব পছন্দ অপছন্দ সব টুপুরের সাথে মিলে যায় । এই যেমন এখন তারা দুইজনেই সিডনি শেলডন এর বই খুব মন দিয়ে পড়ছে আবার মায়ের লাইব্রেরি থেকে হুমায়ুন আহমেদ পড়ছে ।এই ছেলেটাই বলেছে ওকে আরেকটা একাউন্ট খুলতে যেখানে তারা কথা বলবে ।ব্যাপারটাই এক ধরণের নিষিদ্ধ আনন্দ পেয়েছে টুপুর। ক্লাস এর ফার্স্ট গার্ল পারফেক্ট মেয়ে এই প্রথম বাবা মার্ কাছে লুকিয়ে কিছু করছে ।

রুমানা আন্টি আর আম্মুর হাসাহাসির শব্দ ভেসে আসছে লিভিং রুম থেকে । টুপুর উঠে তাদের সঙ্গে দেখা করতে গেল ।বাবা আর অর্ণব কাকু একপাশে চুপ করে বসে ছিলেন । টুপুর তাদের সালাম দিয়ে চুপচাপ বসল।

মা বলছেন, ” বুঝলি রুমানা পৃথিবীর সব মেয়ে কিন্তু শাবানা হয় না কেউ কেউ চম্পাও হয় । কালো ফিটেড পোশাক পরে ঢিসুম ঢিসুম করে বেড়ায়।”

এর উত্তরে রুমানা আন্টি বললেন,” মাথায় বাধা কালো রুমাল এর কথা ভুলে গেলি ?আমি প্রতিশোধ চাই| “বলেই খিল খিল করে হাসতে থাকলেন উনি। হাসির দমকে চোখের কোন পানি জমে গেছে। উনি সবসময় হাসেন আর রান্না করতে ভালোবাসেন ।সুন্দরী রুমানা আন্টিকে মা খুব পছন্দ করেন । উনারা একসঙ্গে বেইলি রোড এ নাটক দেখতে যান একসঙ্গে শপিং এ যান ; মায়ের স্কুল জীবনের বান্ধবী ।
টুপুর এসব কথার মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝলো না ।

বাবা বললেন,” কি রুচি দেখলি ?বাংলা সিনেমার গল্প । এর চেয়ে বরং এস ম্যাজিক দেখাই।”

অর্ণব কাকু বলে উঠলেন ,” আচ্ছা ম্যাজিক দেখি । নাহলে দুই পাগলের বকবক শুনতে হবে ।”

রিনি হাসিমুখে জবাব দিলেন ,” এখন পাগল তাই না ?এক সময় আমার বান্ধবীর সঙ্গে গল্প করার জন্য ঘুষ দিয়ে ডেকে আনতেন আমাকে।”

টুপুর এর সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বাবা শখের ম্যাজিসিয়ান ও বটে । উনি এখন কয়েন বের করে উধাও করে দেখাচ্ছেন । টুপুর ক্রিস এঞ্জেলস এর জাদু দেখে জানে এটাকে পামিং বলে । ম্যাজিসিয়ান দের জাদুর মাঝখানে রহস্য বলে দেয়া দুর্দান্ত অভদ্রতা এটাও টুপুর জানে তাই সে হাততালি দিয়ে উঠল।
টুপুরের শখ বড় হয়ে ক্রিস এঞ্জেলস এর জাদু দেখতে লাস ভেগাস যাবে। বিশেষ করে লুক্সর এর পিরামিড এর ওপরে যে জাদু ওটা দেখার অনেক ইচ্ছে।
টুপুরের নতুন ফেইসবুক আইডি তে ছেলে তা মেসেজ করেছে ” বৃস্টি পরে টাপুর টুপুর নদেয় এলো বান।”
Emon
টুপুর লিখল ,” এটা আমার মায়ের প্রিয় গান ।”

উত্তর আসল,” আমি জানি । এটাও জানি তোমার ও প্রিয় । কারণ এগানে তোমার নাম আছে ।”

টুপুর লিখল,” সরি এখন ঘুমুতে যাচ্ছি। কালকে কথা হবে ।”

রিনি আর কৌশিক , টুপুরের মা আর বাবা , বারান্দায় বসে গল্প করছে। কৌশিক কিছু একটা নিয়ে ভাবছে ; দৃষ্টি একদিকে কিছুটা অন্যমনস্ক ।

রিনি হাত নেড়ে একটা হাসির গল্প বলছে হঠাৎ থেমে বলল,” তখন থেকে কি নিয়ে ভাবছো বলতো ?গোপনে প্রেম করে বেড়াচ্ছ নাকি ?”

কৌশিক হাসিমুখে বললেন ,” তোমার মত গোয়েন্দা বাড়িতে থাকলে কার সাধ্য বল দুই চারটা প্রেম করার ?”

” তাহলে কি নিয়ে ভাবছ? আমি অনেকক্ষন ধরে খেয়াল করছি তুমি অন্যমনস্ক ।”

” টুপুর একটু চুপচাপ হয়ে গেছে দেখেছ? খানিকটা খিটখিটে মনে হল ?”

” এটার নাম বয়োসন্ধি বুঝেছ? তোমার মেয়ে এখন মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে ঘুমাতে পারে না ।”

” উহু । আমার কাছে অন্যকিছু মনে হল।”

” তোমার মনোবিজ্ঞানী হবার দরকার ছিল ? সবাইকে এনালাইজ করে বসে আছ। ওকে ঠিক আছে।কালকে ওকে নিয়ে বাইরে যাব বোঝার চেষ্টা করব কোনো সমস্যা আছে কিনা । এবার হল ? একটু হাসতো। তোমাকে রাম গরুড়ের ছানা মনে হচ্ছে ।”

কৌশিক চশমা খুলে মুছতে মুছতে বললেন ,” ঠিক আছে কালকে ওকে Bengal বই তে নিয়ে যাও । আমাকে গত সপ্তাহে নিয়ে যেতে বলেছিল।আর ম্যাডাম আমি আপনাকে ছাড়া কাউকে এনালাইজ করি না |”
রিনি বেশ সময় নিয়ে রেডি হচ্ছে বাইরে যাবার জন্য আর গুন্ গুন্ করে গান গাচ্ছে।লাল লম্বা টপ আর ফিটেড জিন্স পরেছে। আজকে শুধু Bengal বই না কফি ওয়ার্ল্ড এ কফি খাবে আইস ক্রিম খাবার ও প্ল্যান আছে।সব সময় দায়িত্ব এড়িয়ে চলে কৌশিক ।এরকম গোয়েন্দাগিরি মোটেও পছন্দ না রিনির।
বেঙ্গল বই থেকে ঘুরে রিনির মনে হল জ্ঞানকোষ যাওয়া দরকার । ঝুম্পা লাহিড়ীর নতুন কি একটা বই এসেছে কৌশিক পড়তে চায়। টুপুরের একটুও ভালো লাগছে না ফুটপাথ ধরে হেটে যেতে।আজেবাজে স্পর্শ থেকে মা সাবধানে বাঁচিয়ে তাকে নিয়ে হেটে যাচ্ছে ।
বই কেনা শেষে জিজ্ঞেস করল মা, ” কিংস এ যাবে? তোমার জন্য চিকেন প্যাটিস আর আমি কেক খাব ।”
এবার টুপুর বাগড়া দিয়ে বললো সে আর হাটবে না ।
রিনি একটু মন খারাপ করলেও হাসি দিয়ে বললেন , ” আচ্ছা ঠিক আছে। চল কফি ওয়ার্ল্ড এ বসি।”
হট চকলেট খেয়ে টুপুর খুব খুশি। টুপুর ওয়াশরুম এ যেতে রিনি ভাবল কৌশিক অতিরিক্ত চিন্তা করছে ।এইতো এতক্ষন গল্প করল কোনো অস্বাভাবিক কিছু চোখে পরেনি। টুপুরের ফোন এ একটা নোটিফিকেশন আসল মেসেজ ফ্রম আবির হাসান। প্যাটার্ণ জানা নেই রিনির আর অন্যের ফোন চেক করার মতো রুচিও নেই কিন্তু চিন্তা করে পেল না আবির হাসান কে? এই নাম এর কোনো বন্ধুর কথা মনে পড়ছে না আবার টিচার ও নেই । হতে পারে পিয়ানো ক্লাস এর বন্ধু ।
সারাদিন ঘুরাঘুরি শেষে গাড়িতে ঘুমিয়ে গেলো টুপুর মার্ কাঁধে মাথা রেখে আর রিনির মনে হলো ছোট্ট টুপুর যার গায়ে সব সময় জনসন এর বেবি পাউডার এর সুগন্ধ।
বাড়িতে ফিরেই ফেইসবুক এ ঢুকলো টুপুর । ছেলেটার ছবি দেয়া নেই প্রোফাইল এই জন্য ছবি চেয়েছে ।
উত্তর আসল , ” ওকে পাঠাচ্ছি ।”
পাতায়া বিচ এর ধারে তোলা বেশ কিছু ছবি। টুপুরের গাল লালচে হয়ে গেলো আর আর মনে হচ্ছে হাজার প্রজাপতি উড়ছে। হি ইস সো কিউট।
কৌশিক আর রিনির বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে সব বন্ধুরা বেড়াতে এসেছে। আজকে সারাদিন অনেক যত্ন নিয়ে রান্না করেছে রিনি আর অ্যাসিস্ট্যান্ট কৌশিক। বেকারি থেকে কেক আর একটা অর্কিড এনেছে রিনির জন্য ।
অর্ণব হঠাৎ বলল,” আচ্ছা রিনি একটা সত্যি কথা বলত ? তোমার মত এতো ইন্টারেষ্টিং মানুষ কৌশিক এর মত vegetable এর প্রেমে পড়ল ?আমি নিশ্চিত ইউনিভার্সিটি তে তোমাকে অনেকেই পছন্দ করত।”সন্ধেবেলায় সবাই আগেই চলে গেছে । শুধু রুমানা আর অর্ণব রয়ে গেছে । রুমানা গোছগাছ করতে সাহায্য করছে ।রিনি ফ্রিজ এ খাবার তুলছে আর অর্ণব কেক খাচ্ছে ।
রিনির মুখে কঠিন উত্তর এসেছিল সেটা সাবধানে গিলে ফেলে বলল ,” আসলে সবার রুচি কি এক বলুন ? ধরুন কেউ খুব শখ করে বিরিয়ানি খাচ্ছে অথচ জানে না হাড়িতে থাকার সময় সেটাতে বেড়ালে মুখ দিয়ে গেছে।সবার তো আর এটো কাঁটা ভালো লাগে না ।”
মনে মনে খুশি হলো রিনি যে এসব বাক্য বিনিময় কৌশিক বা রুমানার কানে যায়নি।গেলে মন খারাপ করত ।
অর্ণব এবার হেসে ফেলল,” এই তুমি কিন্তু মাইন্ড করেছ। আই এম সরি ।”
রিনি পাল্টা হাসি দিয়ে বলল ,” বাট আই এম নট। ”
মনে মনে খুশি হলো রিনি যে এসব বাক্য বিনিময় কৌশিক বা রুমানার কানে যায়নি।গেলে মন খারাপ করত ।
গ্রীষ্মকালীন ছুটির পর স্কুল খুলেছে । বাবা মায়ের সঙ্গে এবার প্রথম বান্দরবানে গেছিল টুপুর । অবশ্য একদিক থেকে স্কুল খুলে খুবই খুশি টুপুর কারণ আবির এর সঙ্গে দেখা হবে । কিভাবে দেখা করবে পুরো প্ল্যান আবির করে দিয়েছে।
প্ল্যান মোতাবেক বাবার স্বাক্ষর নকল করে টুপুর একটা চিঠি লিখেছে যে ডাক্তার এপয়েন্টমেন্ট এর কারণে বৃহস্পতি বার আগে বাসায় যাবে। আবির এটাও বলেছে স্কুল ইউনিফর্ম পরে থাকলে সমস্যা তাই এক্সট্রা কাপড় স্কুল ব্যাগ এ নিয়েছে । মা কে যাবার আগে বলেছে ওর বন্ধু সামান্থার বাসায় আজকে একটা group স্টাডি সেশন তাই আসতে দেরি হবে ।
রিনির অফিস এ ভীষণ ব্যস্ত সময় যাচ্ছে । যেখানে ও চাকরি করে সেখানে একাউন্টেন্টদের দম ফেলবার সময় নেই। অফিস থেকে ফিরতে অনেক দেরি হচ্ছে রোজ এই জন্য কৌশিক টুপুর কে স্কুল এ নিয়ে যাচ্ছে ।রিনির অফিস এ ভীষণ ব্যস্ত সময় যাচ্ছে । যেখানে ও চাকরি করে সেখানে একাউন্টেন্টদের দম ফেলবার সময় নেই। অফিস থেকে ফিরতে অনেক দেরি হচ্ছে রোজ এই জন্য কৌশিক টুপুর কে স্কুল এ নিয়ে যাচ্ছে ।
টুপুর অনেক্ষন ধরে অপেক্ষা করছে কিন্তু আবির এর খবর নেই । খুব বেশিক্ষন বাইরে থাকা যাবেও না কারণ মা সামান্থার বাসায় ফোন কোলেই বিপদ হবে । মাথা নিচু করে ফোন এ মেসেজ করছে টুপুর ওর সামনের চেয়ার এ কেউ এসে বসল । ভর দুপুরে অর্ণব কাকু এখানে কি করছে ? টুপুরের শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। এখন মা কে ফোন করে বললে কি হবে সেটা ভাবতে পারছে না সে ।
অর্ণব এর মুখে ধূর্ত হাসি । আস্তে করে বললেন,” রিলাক্স। আমি কাউকে কিছুই বলব না ।বাই দা ওয়ে তুমি কিন্তু এতদিন আমার সঙ্গেই কথা বলেছ আমিই আবির।”
টুপুরের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে । ও ফোন এর দিকে তাকিয়ে ভাবছে কি করবে ।
অর্ণব আস্তে করে আবার বললেন,” কাউকে বলার এই ভুল টা আশা করি তুমি করবে না । তোমার বাবা বা মা জানতে পারলে তুমি কিন্তু অনেক সমস্যায় পরবে। নকল চিঠি লেখার জন্যে স্কুল থেকে বের ও করে দিতে পারে । কিন্তু আমি তোমাকে আসলেও ভীষণ পছন্দ করি ।এখন তো সব আড়াল চলে গেল । ভালোই হয়েছে কি বল ?”
টুপুরের ভীষণ পানি পিপাসা পেয়েছে । মনে হচ্ছে কেউ তাকে জোড় করে চেয়ার এ বসিয়ে রেখেছে । কতক্ষন পেরিয়ে গেছে বুঝতে পারছে না আধ ঘন্টা নাকি আরো বেশি।টুপুরের ভীষণ পানি পিপাসা পেয়েছে ।
অর্ণব আস্তে করে বলল ,” আমার ধানমন্ডি তে একটা বন্ধুর বাসা আছে যেখানে আমরা এখন যাবো। খুব বেশি দূরে না কফি ওয়ার্ল্ড থেকে পাঁচ মিনিট লাগবে । তার পর আমি তোমাকে সামান্থার বাসায় নামিয়ে দেব।”
অর্ণব উঠে দাঁড়িয়ে টুপুর কে উঠতে ইশারা করল। উঠে দাঁড়িয়ে দেখে অর্ণব এর মুখ ছাই এর মত সাদা হয়ে গেছে । পেছনে ঘুরে বাবা কে দেখে দৌড় দিয়ে তার কাছে গেল টুপুর ।
অর্ণব হড়বড় করে বলতে লাগল,” আসলে কফি ওয়ার্ল্ড এ এসেছিলাম হঠাৎ দেখি টুপুর বসে আছে ।”
কৌশিক কিছুক্ষন স্থির চোখে তাকিয়ে বললেন, ” টুপুর তুমি গাড়িতে যাও।”
অর্ণব এর দিকে তাকিয়ে বললেন,” বস । তোমার সঙ্গে আমি পরিষ্কার কিছু কথা বলতে চাই । আজকের পর থেকে তুমি আমার বা রিনির সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ করবে না । টুপুরের আশেপাশে বা ওর স্কুলে গিয়ে কোনো রকম ঝামেলা করলে আমি তোমাকে পুলিশ এ দেব ।”
অর্ণব বলল ,” ছিঃ তুমি এসব কি বলছ?”
কৌশিক বলল ,” আমি কি বলছি তুমি খুব ভালো করেই জানো। তোমার চিকিৎসা হওয়া দরকার | you are a pedophile তোমার বাড়ির কাজের মেয়েকে ড্রাইভার এর সঙ্গে প্রেমের অপবাদ দিয়ে যে হুট্ করে বিদায় করেছিলে আমার তখুনি সন্দেহ হয়েছিল ।নকল চিঠির প্ল্যান টা কাজেই লেগে যেত যদি স্কুল থেকে আমাকে ফোন না করত। তুমি বোধ হয় জানো না যে টুপুরের ফোন এ লোকেশন সার্ভিসেস অন করা আছে আর ওর ফোন এর আপেল আই ডি টা আমার একাউন্ট। আমার মেয়ে নিয়ে আমি যথেষ্ট প্রোটেক্টিভ তোমার এ ব্যাপারটা মনে রাখা উচিত ছিল। ”
আধা ঘন্টা পরে বাবা পার্কিং এ নামলেন । টুপুর কাঁদছে । বাবা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
বাড়ি গিয়ে পুরো ঘটনা রিনি কে বলতেই সে কেঁদে ফেলল । ও চিন্তাও করতে পারছে না ওই মুহূর্তে যদি কৌশিক বুদ্ধি করে চেক না করত তাহলে কি সর্বনাশ হয়ে যেত ।রিনি সবসময় মেয়েকে বাইরের পুরুষ নোংরা দৃষ্টি থেকে সরিয়ে রেখেছে সেখানে ওর নিজের বাড়িতে মেয়েকে নিরাপত্তার অভাব হল।কৌশিক টুপুরের কাছ থেকে চ্যাট হিস্ট্রি আর ফেইসবুক একাউন্ট এর ডিটেলস নিল। এরপর সাইবার ক্রাইম ইউনিট এ যোগাযোগ করল আই ডির আসল মালিক কে খুঁজে বের করতে । দেখা গেল ফোন একটা সাইবার café থেকে খোলা একাউন্ট যে কারণে আই পি এড্রেস দিয়ে কাউকে দোষী সাবস্ত করা গেল না ।
এই ঘটনার পর টুপুর খুব ভয় পেত। ছোট বেলার মত মার্ সঙ্গে ঘুমাতো। বাবা ওকে তানিয়া আহমেদ নাম এর একজন কাউন্সেলর এর কাছে নিয়ে গেলেন। ওনার সঙ্গে বেশ কিছু সেশন এর পর টুপুর এর ভয় কাটলো।
বছরের শেষ মাসে অনেক শীতের পাখি এসেছে । স্কুল থেকে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি তে একটা স্টাডি টুর এ যাবার কথা ।রিনি বলেছে টুপুর কে না জানিয়ে ওরাও যাবে কিন্তু আশে পাশে থাকবে ।টুপুর কে স্কুলে দিয়ে মত বদলালো কৌশিক বলল চলো আজকে আমরা দিনে দিনে শ্রীমঙ্গল থেকে ঘুরে আসি।

লেখকঃ ফারহানা সিন্থিয়া

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯/ এমএম