বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: বাংলা কথাসাহিত্যের এক নতুন সূর্য ছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। বলা যায়, তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম প্রধান। তিনি একাধারে ছিলেন ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, গীতিকার, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যেরও তিনি পথিকৃৎ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে তাকে গণ্য করা হয়। তিনি দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর বাংলার পাঠক সমাজকে কলমের জাদুতে একরকম মোহাবিষ্ট করে রেখেছিলেন। জাদুকর যেমন তার হাতে থাকা কালো ছড়ি বা লাঠি ঘুরিয়ে দর্শকদের অন্য জগতে নিয়ে যায়, হুমায়ূন আহমেদও তেমনি নিজের হাতে থাকা কলমটি সাদা কাগজের ওপর ঘুরিয়ে আমাদের বারবার অন্য জগতে নিয়ে গেছেন।
প্রথম উপন্যাসেই বাজিমাত করেছেন এমন লেখক পৃথিবীতে বিরল। হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন সেই বিরল লেখকদের একজন। ১৯৭২ সালে তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশিত হলে তা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তিনি তার জীবনকালে ২০০টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। আর তার প্রায় সব বই-ই ছিল দেশে বেস্ট সেলার। তার বেশকিছু গ্রন্থ’ নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। তার পারিবারিক ডাকনাম ছিল কাজল। ছোটবেলায় হুমায়ূন আহমেদ খুব ভালো ছাত্র ছিলেন না। তবে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ওঠার পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পড়াশোনার প্রতি তার ভালোবাসা সৃষ্টি হতে থাকে। এরই ফলস্বরূপ এসএসসি পরীক্ষায় তিনি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। এইচএসসিতেও তিনি খুব সহজেই মেধা তালিকায় স্থান করে নেন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে।
১৯৭২ সালে রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করে প্রথমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের রসায়ন বিভাগেই প্রভাষক হিসেবে নিযুক্ত হন। আমেরিকার নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার সায়েন্সে পিএইচডি ডিগ্রি নেন তিনি। পরবর্তীকালে তিনি তার লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় অধ্যাপনার পেশা থেকে অব্যাহতি নেন। যদিও শিক্ষক হিসেবেও তিনি ছাত্রছাত্রীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন।
হুমায়ুন আহমেদের বাবা ফয়জুর রহমান আহমদ একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। হুমায়ূন আহমেদের অনুজ মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশের একজন বিজ্ঞান শিক্ষক ও কথাসাহিত্যিক। সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা আহসান হাবীব একজন জনপ্রিয় রম্যলেখক এবং জনপ্রিয় কার্টুন ম্যাগাজিন উন্মাদের সম্পাদক। তিনি নিজেও একজন খ্যাতিমান কার্টুনিস্ট।
হুমায়ূন আহমেদের প্রথম চলচ্চিত্র মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ‘আগুনের পরশমনি’। তার ‘শ্যামল ছায়া’ ছবিটি ২০০৬ সালে সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে অস্কারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। তার পরিচালনায় সর্বশেষ সিনেমা ছিল ‘ঘেটুপুত্র কমলা’। তার চলচ্চিত্রগুলো বেশ কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কৃত হয়েছে। তার ছবিগুলোর সব গান মোটামুটিভাবে তিনি নিজেই রচনা করতেন। গানগুলো বেশ জনপ্রিয়তাও পায়।
তিনি তার জীবনে বহু সম্মানজনক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই এই নন্দিত লেখক ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হয়ে অন্য ভুবনে চলে যান। আজ আমাদের মাঝে হুমায়ূন আহমেদ নেই। কিন্তু তার লেখনী, তার চিন্তা, তার চলচ্চিত্র এখনও আমাদের সঙ্গে আছে। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক মুকুটবিহীন সম্রাট।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা / ২১ জুলাই ২০১৯/ এমএম