বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: মাথায় ওপর ৩১৫ রানের বড় লক্ষ্য। তবে এজবাস্টনে এই রান তাড়া করা সম্ভব ছিল টাইগারদের। বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার সাবধানী শুরুও করেন। এরপরই সেট হয়ে আউট হন তামিম-সৌম্য। একপাশে সাকিবকে রেখে মুশফিক, লিটন এবং মোসাদ্দেকও আউট হন। সাকিব ফিফটি করে ফিরলে সাইফউদ্দিন ব্যাটে বেশ কিছু পথ পাড়ি দেয় বাংলাদেশ। তোলে ২৮৬ রান। শেষ পর্যন্ত হারে ২৮ রানে। এই হারে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো।
প্রথমে ব্যাট করে ভারত ৯ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রান তোলে। জবাবে তামিম ইকবাল ফেরেন ২২ রান করে। সৌম্য সরকার ৩৩ রানে ক্যাচ দেন। সাকিবের সঙ্গে ৪৭ রানের জুটি গড়ে ফেরেন মুশফিকও। তিনি করেন ২৪ রান। দারুণ খেলা সাকিব আল হাসান বিদায় নেন ৬৬ রান করে। বাংলাদেশের স্বপ্ন ওখানেই শেষ হয়ে যায়। তার আগে লিটন দাস ২২ রান করে আউট হন। এরপরই ফিরে যান মোসাদ্দেক।
সাকিব দলের ১৭৯ রানে আউট হন। লক্ষ্য তখনও অনেক দূরে। সম্মানজনই হারই ভালো বলে মনে হচ্ছিল। তবে সাইফউদ্দিন এবং সাব্বির রহমান দারুণ এক জুটি গড়েন। তাদের ব্যাট থেকে আসে ৬৬ রান। সাব্বির রহমান ৩৬ বলে ৩৬ করে ফেরেন। কিন্তু ৫১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়েন সাইফউদ্দিন। দারুণ ইনিংস খেলার পথে সাইফউদ্দিন নয়টি চার মারেন। বাংলাদেশ দল দুই ওভার থাকতে অলআউট হয়।এর আগে ভারতের হয়ে রোহিত শর্মা খেলেন ১০৪ রানের ইনিংস। মাত্র নয় রানে তামিম তার ক্যাচ মিস করেন। দলের রান তখন ১৯। তারই খেসারত দিতে হয় দলকে। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে রোহিত চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন। তার ওপেনিং সঙ্গী কেএল রাহুল খেলেন ৭৭ রানের ইনিংস। দু’জনে গড়েন ১৮০ রানের জুটি। এবারের বিশ্বকাপে যা সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি। এছাড়া রোহিত ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ২৩০ ছক্কা মারার রেকর্ড গড়েন। আগের সর্বোচ্চ ধোনির ২২৮। ঋষভ পান্তের ব্যাট থেকে আসে ৪৮ রান।
বাংলাদেশের হয়ে মুস্তাফিজুর রহমান এ ম্যাচে ৫৯ রান খরচা করে ৫ উইকেট নেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এটি তার চতুর্থ পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তি। এর মধ্যে ভারতের বিপক্ষে তিনবার পাঁচ উইকেট নিলেন বাঁ-হাতি এই পেসার। সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার এবং রুবেল হোসেন নেন একটি করে উইকেট।বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানরা এ ম্যাচে হার্ডিক পান্ডিয়ার কাছে পা হড়কায়। তার তোপ দাগা বলগুলো তেড়ে ফুলে মারতে গিয়ে সৌম্য, সাকিব এবং লিটন উইকেট বিলিয়ে আসেন। এছাড়া বুমরাহ নেন শেষ দিকের চার উইকেট। তার চার উইকেটের চারটিই আসে ব্যাটসম্যানের স্ট্যাম্প উড়িয়ে। মোসাদ্দেক, সাব্বিরের পরে রুবেল-মুস্তাফিজকে বোল্ড করেন বুমরাহ। এছাড়া ভুবনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ শামি এবং যুজবেন্দ্র চাহাল নেন একটি করে উইকেট।ভারত ৩১৪/৯ রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল উদ্বোধনী জুটিতে ১৮০ রান করে ভারতকে রানের পাহাড় গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন ভেঙে দেন মোস্তাফিজুর রহমান।
স্লো ওভারে অসাধারণ বোলিং করেন কাটার মাস্টার। তার গতির মুখে পড়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ৩১৪ রানে ইনিংস গুটায় ভারত।ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ১০৪ রান করেন রোহিত শর্ম। আজ সেঞ্চুরি করার মধ্য দিয়ে বিশ্বকাপের এক আসরে চারটি সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন ভারতীয় এ ওপেনার।
এছাড়া ৭৭ রান করেন লোকেশ রাহুল। ৪৮ রান করেন রিশব প্যান্ট। ৩৫ রান করেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। বাংলাদেশ দলের হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান ৫৯ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন।মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের বার্মিংহামের এজবাস্টনে বাংলাদেশের বিপক্ষে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত।ইনিংসের শুরু থেকেই অনবদ্য ব্যাটিং করে যান রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। অবশ্য ১৮ রানেই ব্রেক থ্রু পাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের।ইনিংসের পঞ্চম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে ছক্কা হাঁকাতে চেয়েছিলেন রোহিত। কিন্তু ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে দৌড়ে গিয়েও ক্যাচটি মুঠোয় জমাতে পারেননি তিনি। দলীয় ১৮ ও ব্যক্তিগত ৯ রানে জীবন ফিরে পান রোহিত শর্মা।
এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রোহিতকে। ক্রমে আক্রমণাত্মকে হয়ে ওঠেন ভারতীয় এই ওপেনার। পাওয়ার প্লের প্রথম ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৯ রান সংগ্রহ করেন ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল।১৭.২ ওভারের স্কোর বোর্ডে বিনা উইকেটে ১০০ রান সংগ্রহ করেন তারা। ২০ ওভারের ভারতের সংগ্রহ বিনা উইকেটে ১২২ রান।
উদ্বোধনী জুটিতে ক্যারিয়ারের ২৬তম এবং বিশ্বকাপের এক আসরে চতুর্থ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন রোহিত। শতরানের মাইলফলক স্পর্শ করার পর বাংলাদেশের অনিয়মিত বোলার সৌম্য সরকারের বলে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ তুলে দেন রোহিত। তার আগে ৯২ বলে সাতটি চার ও ৫টি ছক্কায় ১০৪ রান করেন তিনি।রোহিত শর্মার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ২৯.২ ওভারে ১৮০ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙে ভারতের। ৩০ ওভারে ১৮১/১ রান করে ভারত। এরপর অন্য ওপেনার লোকেশ রাহুলকে সাজঘরে ফেরান রুবেল হোসেন।তার গতির বলে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ তুলে দেয়ার আগে ৯২ বলে ছয়টি চার ও এক ছক্কায় ৭৭ রান করেন রাহুল।
১৫ রানের ব্যবধানে রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুলের উইকেট শিকারের মধ্য দিয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। সবশেষ পাঁচ ম্যাচে টানা ফিফটি তুলে নেয়া বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলিকে আউট করেন মোস্তাফিজ।তার আগে ২৭ বলে ২৬ রান করেন কোহলি। ব্যাটিংয়ে নেমে মোস্তাফিজের কাটারের দ্বিতীয় শিকার হার্দিক পান্ডিয়া।
২৩৭ রানে রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি ও হার্দিক পান্ডিয়ার বিদায়ের পর জুটি গড়েন মহেন্দ্র সিং ধোনি ও রিশভ প্যান্ট। পঞ্চম উইকেটে তারা ৪০ রান যোগ করেন।সাকিব আল হাসানের বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের হাতে ক্যাচ তুলে দেন প্যান্ট। তার আগে ৪১ বলে ছয়টি চার ও এক ছক্কায় ৪৮ রান করেন রিশব।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত: ৫০ ওভারে ৩১৪/৯ (রোহিত ১০৪, রাহুল ৭৭, রিশব ৪৮, ধোনি ৩৫, কোহলি ২৬; মোস্তাফিজ ৫/৫৯)।
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৮৬/১০ (সাকিব ৬৬, সাইফউদ্দিন ৫১*, সাব্বির ৩৬, সৌম্য ৩৩, মুশফিক ২৪, লিটন ২২)।
ফল: ভারত ২৮ রানে জয়ী।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা / ০৩ জুলাই ২০১৯/ এমএম





