Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শৃঙ্খলাপরিপন্থী ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে এ বার্তাটি পৌঁছে দিয়েছেন। বাসস জানিয়েছে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে মঙ্গলবারের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে বলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন বাংলাদেশ বিগত এক দশকে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে একটি রোল মডেল হয়েছে এবং এই বিষয়ে প্রচেষ্টার কারণে দেশটি সমাজে একটি প্রশংসনীয় পরিবর্তন অনুভব করছে। সে সময় বাংলাদেশে নারীরা কতদিক থেকে অমানবিক, অনিরাপদ, অস্থিতিশীল ও অপ্রীতিকর অবস্থায় রয়েছেন সে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য কি তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের এসব কর্মকাণ্ড সম্পূরক নয়? যদিও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ডা. মুরাদ হাসানকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক ছিল বলে তার কর্মফলের দায় কিছুটা হলেও ভাগ করে নিয়েছেন।

গত রোববার রাতে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের একটি টেলিফোন আলাপের অডিও টেপ ভাইরাল হওয়ার পরদিন তা টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয় এবং দেশজুড়ে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন মহল থেকে তার বিচার ও পদত্যাগের দাবি ওঠে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও সমালোচনায় মেতে উঠেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন প্রতিমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে ‘অশোভন এবং নারীবিদ্বেষী’ অ্যাখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে নারীদের সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাকে অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের শিষ্টাচার বিবর্জিত এসব কর্মকাণ্ড গত কয়েক দিন ধরেই টানা আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলো : ইউটিউবে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের একজন নারী সদস্যকে নিয়ে অশালীন বক্তব্য সংবলিত একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে তিনি খালেদা জিয়ার নাতনি জাইমা রহমান সম্পর্কে ‘অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ’ মন্তব্য করেছিলেন বলে ও অভিযোগ ওঠে। নারী অধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ তার ওই বক্তব্যের সমালোচনায় সোচ্চার হয়েছিলেন। মুরাদ হাসানকে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবিও উঠেছিল।

বেসরকারি টেলিভিশনের এক টকশোতে সাবেক এক নারী সাংসদকে ‘মানসিক রোগে আক্রান্ত’ বলে মন্তব্য করেন। তথ্য প্রতিমন্ত্রী গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে নিয়েও ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করতে শোনা যায়।গত রোববার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ডা. মুরাদ হাসানের আরও একটি ফোনকল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়ে। চিত্রনায়ক ইমন ও চিত্রনায়িকা মাহির সঙ্গে তার সেই কথোপকথনেও অশালীন কথা বলতে শোনা যায়। মাহিকে হোটেল সোনারগাঁওয়ে তার ভাড়া করা রুমে আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তিনি না এলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে তাকে তুলে আনা হবে। ওই সময় তাকে যৌন সহিংস অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ কথা বলতেও শোনা গেছে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নাম ব্যবহার করে এ ধরনের হুমকি প্রদানের কারণে তাদের ইমেজ সংকট সৃষ্টি হবে তা বলাই বাহুল্য।ডা. মুরাদ বেশ কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক ছাত্রলীগের নারী নেত্রীদের নিয়েও অশোভন, নারীবিদ্বেষী ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। ছাত্রলীগ নেত্রীদের নিয়ে তার বক্তব্যের ভিডিওটিও নাকি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

যা ঘটে গেছে তা নিয়ে গণমাধ্যম সরব থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ডা. মুরাদের বিরুদ্বে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। এছাড়াও সরকারকে এ ধরনের অপরাধ আইন আমলে নিয়ে ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ সমতা আনায়নের ক্ষেত্রে সরকারের এক দশকের অৰ্জনগুলো প্রশ্নবিদ্ব হবে। লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে (দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে) প্রথম স্থান অর্জনে বাংলাদেশকে সাহায্য করেছে পরপর দ্বিতীয় বছর ২০১৭ সালে জেন্ডার গ্যাপ সূচকে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম কর্তৃক প্রণীত সূচকে ও শিক্ষা, অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ, স্বাস্থ্য এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন পরিমাপ করা হয় যে কোনো দেশের লিঙ্গ সমতা পরিমাপ করার জন্য। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী এবং তাদের অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীদের অগ্রগতি নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নীতি কৌশলগুলোও সরকারি নীতিতে প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন; যাতে নারী সমাজে আত্মমর্যাদাশীল হয়, তাদের জীবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। সমাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী এবং সম্মানী হিসেবে একটি প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করতে পারেন।এমন একটি ক্রান্তিকালে জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে একটি সময়োপযোগী সিদ্বান্ত নিয়েছেন এর জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০৮ ডিসেম্বর  ২০২১ /এমএম

 


Array