প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: সংখ্যালঘুর ওপর হামলা নতুন কোনো ঘটনা নয়। গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন শরিফ অবমাননার অভিযোগ তুলে হামলা করে একদল মানুষ। এর জের ধরে রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ, মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
বলা বাহুল্য, ১৯৭১ সালসহ অতীতে বিভিন্ন সময়ে ধর্মকে ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়িয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হামলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। ১৯৪৭, ১৯৫০, ১৯৬৪, ১৯৯০, ১৯৯২ ও ২০০১ সালে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি এ থকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ফায়দা লোটা হয়েছে, যে ধারাবাহিকতা আজও বহমান।
দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অধিকাংশ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের এখন পর্যন্ত শাস্তি হয়নি। এমনকি কোথাও কোথাও তাদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। আর এই বিচারহীনতার সংস্কৃতিই পরবর্তী সময়ে আবার অপরাধ সংঘটিত করতে মদদ জুগিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালানোর নতুন অস্ত্র হিসাবে যোগ হয়েছে ‘ফেসবুক গুজব’, যার উদাহরণ কক্সবাজারের রামুতে অবস্থিত শত বছরের প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দির ভাংচুর করাসহ সেখানে বসবাসরত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ এবং পাবনার সাঁথিয়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, মন্দির ভাঙা ইত্যাদি ঘটনা। ‘ফেসবুক গুজব’ নামক নতুন এই অস্ত্র দিয়ে বর্তমানেও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। কিন্তু এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। কারণ, বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে সংঘটিত মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ছিল একটি সমতাভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
এখানে সমতা বলতে ধর্মীয় অধিকারের সমতাসহ সব ধরনের সমতাকেই বোঝানো হয়েছিল। দেশমাতৃকার মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে এ দেশের সংখ্যালঘুদের এক বিরাট অবদান রয়েছে, যা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। অথচ অনেকে তাদের এসব অবদান স্বীকার করে না বা স্বীকার করতে চায় না। সংবিধানের ২৮(২) অনুচ্ছেদে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সুতরাং এদেশের নাগরিক হিসাবে সংখ্যালঘুদের শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা, নির্বিঘ্নে ধর্মীয় রীতিনীতি ও সংস্কৃতি পালন করা, নিশ্চিতভাবে জীবনযাপন করা, চলাচল করা, বাক্স্বাধীনতা, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন অধিকার পাওয়া তাদের সাংবিধানিক অধিকার। অন্যদিকে তা মানবাধিকারও বটে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি স্বাধীন দেশের প্রত্যেক মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। দেশের জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। আর এদেশের জনগণ হিসাবে তাদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যথাযথভাবে নিশ্চিত করা রাষ্ট্রেরই কর্তব্য। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার কারণে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন্ন হয় মারাত্মকভাবে। কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে জড়িত বেশ কয়েকজনকে ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেছে, মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, যারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করে কিনা।
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু : বিভাগীয় প্রধান, আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৭ অক্টোবর ২০২১ /এমএম





