প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ স্মৃতিকাতর হতে থাকে। সময়ের সঙ্গে স্মৃতির পাতাগুলো একটু ঝাপসা হয়ে এলেও মন থেকে একেবারে মুছে যায়না। টুকরো টুকরো হয়ে মনের কোনে জমে থাকে। সময়ে-অসময়ে নস্টালজিয়ায় ভোগায়!ঈদ নিয়ে আমার তেমনই কিছু স্মৃতি আছে যা কখনো ভুলতে পারবোনা। আমি মাঝে মাঝেই সেসব স্মৃতি রোমান্থন করে স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠি।
একটা সময় ছিল, যখন ঈদুল ফিতর না পেরোতেই ঈদুল আজহার অপেক্ষার প্রহর গুনতাম। ব্যাকুল কন্ঠে সবাইকে জিজ্ঞেস করতাম, কোরবানির ঈদ আসতে আর কয়দিন বাকি? আমার বারংবার এই একই প্রশ্নে পরিবারের লোকজন রীতিমত বিরক্ত হয়ে যেত।
টিফিনের দু’চার টাকা বাঁচিয়ে কিছু টাকা জমা হলে তা দিয়ে ঈদ কার্ড কিনতাম। সেগুলোতে ঈদ সম্পর্কিত বিভিন্ন ছন্দ লিখে বন্ধুদের দিতাম। দেখা যেত, এত আগ্রহ করে দাওয়াত দেওয়া সত্ত্বেও দু-একজন ছাড়া আর কেউই আসত না। তখন তীব্র অভিমানে কিছুদিন কথা বলাও বন্ধ রাখতাম।
ঈদের চার পাঁচদিন আগে সাধারণত প্রতিবেশীদের গরু কেনা হত। তখন আমরা বন্ধুরা দলবেঁধে এ বাড়ি-ও বাড়ি গরু দেখতে যেতাম। আমাদের গরু কেনা হত ঈদের আগের দিন কিংবা তার আগের দিন।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই দুই একদিন পুরো সময়টাই আমি গরু দেখাশোনা করে কাটাতাম। এই অল্প সময়ে গরুর প্রতি এত মায়া জমে যেত যে ঈদের দিন গরু জবাইয়ের সময় কান্না আটকে রাখতে পারতাম না। আহা ছেলেমানুষি আবেগ…!
ঈদের খুশিতে নতুন মাত্রা যোগ করত আতশবাজি। পরিবারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বন্ধুদের নিয়ে বাজি ফুটাতাম। বাজি ফোটার বিকট শব্দে পাড়া-প্রতিবেশীরা অতিষ্ঠ হয়ে যেত। তবু কেউ কিছু বলতে পারতো না। বাচ্চাদের ঈদের খুশি বলে কথা। সব মিলিয়ে বেশ আনন্দেই কাটতো শৈশবের ঈদগুলো।
এরপর অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পদার্পণ করেছি।
এখনো ঈদ আসে। তবে অন্য সাজে। এখন আর ঈদগুলো তেমন আনন্দমুখর হয়না। ঈদের কার্ড দিয়ে বন্ধুদের দাওয়াত দেয়া হয় না। ঈদ এলেই আর কোন প্রতিবেশী আমাদের আতশবাজির বিকট আওয়াজে বিরক্ত হওয়ার আশঙ্কা করে না। স্কুল ছেড়ে মাদ্রাসায় চলে এসেছি।
আমাদের দেশের অধিকাংশ মাদ্রাসার অন্যতম আয়ের উৎস কোরবানির পশুর কালেকশনকৃত চামড়া। এই খাতে যা টাকা আসে তাতে মাদ্রাসার লিল্লাহ ফান্ড চলে। গরীব অসহায় ছাত্রদের খাবারের ব্যবস্থা হয়। তাই চামড়া সংগ্রহ করার জন্য মাদ্রাসায় ঈদের দিন কাটাই।
মাদ্রাসার নিয়ম চামড়া সংগ্রহে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। ব্যাপারটা মোটেই এক রকম নয়। বরং মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করি।
সারাদিন ঘুরে ঘুরে গরু-ছাগল জবাই করি। চামড়া সংগ্রহ করি। সব চামড়া একত্রিত করে ট্যানারিতে পৌঁছে দেই। বাহ্যিকভাবে কষ্ট হলেও, ভেতরে যে স্বর্গীয় প্রশান্তি লাভ করি, তার কাছে এই কষ্ট ম্লান হয়ে যায়। ভেতরে এক আশ্চর্য ভালোলাগা কাজ করে।
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৪ জুলাই ২০২১ /এমএম





