Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ সারা দেশে বেড়েছে মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। এ রোগ বাড়ার সাথে সাথে মানুষের মনে বাসা বেঁধেছে করোনা আতঙ্ক। কিছুটা ভয়, কিছুটা সংশয় এবং অসচেতনতায় বাড়ছে মৃত্যু ঝুঁকিও। ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথাসহ ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ। ভয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন না অসুস্থ হয়ে পড়া মানুষদের বড় অংশ। প্রাথমিক চিকিৎসাতেই ভরসা রাখছেন তারা।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই ভয়ে করোনা পরীক্ষা করাতে চান না। অনেকে কিছুতেই মানতে চান না যে তারা করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। অথচ এ রোগের উপসর্গ বয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। যাচ্ছেন বাজার-ঘাটে অনায়াসে।

গত কয়েক দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত মেয়েকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা উপজেলার মানশ্রী গ্রামের বাসিন্দা মুক্তা আক্তার। তিনি জানান, কয়েকদিন ধরে তার মেয়ের জ্বর। প্রথমে গ্রামের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ালেও তেমন কাজ না হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন তিনি। তবে করোনা পরীক্ষা করার দরকার নেই, তার যুক্তিতে এটা সিজনাল জ্বর। কিছু ওষুধপত্র খেলে এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।

মুক্তা আক্তারের মতো একই সুরে কথা বলেছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা বেশিরভাগ রোগীই। সবার কাছেই জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা একেবারে সাধারণ একটি রোগ। করোনার এই সময়েও গা ঝাড়া দিয়েই সেরে উঠতে চান তারা। তাই স্বেচ্ছায় করোনার পরীক্ষার প্রয়োজন মনে করছেন না কেউই।

আটপাড়া উপজেলার খিলা গ্রামের আমেনা আক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনিও কয়েকদিন ধরে ভীষণ জ্বরে ভুগছেন। শরীর বেশি খাপার লাগায় ডাক্তার দেখাতে এসেছেন তিনিও। তবে আবহাওয়াজনিত রোগ বলে তিনিও করোনা পরীক্ষার প্রয়োজন মনে করছেন না।

প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে চিকিৎসকের কক্ষের সামনে অপেক্ষা করছেন বড়কাশিয়া গ্রামের সারোয়ার হোসেন মিঠু ও বেতাম গ্রামের মাহবুবুর রহমান আশিক। তারা জানান, বেশ কয়দিন ধরেই প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছি। এখন কাশি, শ্বাস কষ্ট দেখা দিয়েছে। তাই চিকিৎসা নেয়ার পাশাপাশি করোনা পরীক্ষা করানোর জন্য আসলাম।

তারা আরো জানান, পরিচিতদের মধ্যে এমন জ্বরের রোগী অহরহ। শহরের থেকে গ্রামে জ্বরের রোগী আরো বেশি। প্রথমত সবাই ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খায়। যাদের শ্বাসকষ্টসহ সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে, তারাই কেবল চিকিৎসা নিতে আসছেন। পরীক্ষার পর করোনা ধরা পড়লে বাড়ি লকডাউন করে দেবে। কোথাও প্রয়োজনে বেরও হওয়া যাবে না। সেই ভয়ে কেউ করোনা পরীক্ষাও করতে চায় না।শহরের পৌরশহরের কয়েকটি ওষুধের দোকানে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি দোকানে জ্বরের ওষুধ বিক্রি ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে।

মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউটডোর ফার্মেসির ফার্মাসিস্ট শাহ আলম বলেন, সম্প্রতি জ্বরের রোগী বেড়ে গেছে। চিকিৎসকরা রোগী দেখার পর ওষুধের যে স্লিপ দিচ্ছেন তার প্রতিটাতেই প্যারাসিটামল লিখা রয়েছে। সকালে অন্যান্য ওষুধের পাশাপাশি দুই হাজার প্যারাসিটামল নিয়ে বসেছি। অন্য ওষুধ থেকে গেলেও বেলা ১২টা বাজার আগেই প্যারাসিটামল সব শেষ হয়ে গেছে।

জরুরি বিভাগে চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ডা. শাজাহান সিরাজ জানান, এক সপ্তাহ ধরে জ্বরের রোগীর ভিড়। যত রোগী দেখছি তার ৮০ শতাংশই জ্বরের। তবে তাদের অনেকেই করোনা পরীক্ষা করাতে আগ্রহী নয়।

ল্যাব সহকারী সাদ্দাম হোসেন বলেন, বর্তমানে করোনা পরীক্ষা কিছুটা বেড়েছে। গত এক সপ্তাহে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ৩০ জন করোনা সনাক্ত হয়েছেন। আজ সকালেই ৯টি নমুনা পরীক্ষা করে ৬জন করোনা সনাক্ত হয়েছেন । আরো অনেকগুলো নমুনা সংগ্রহ করা আছে সেগুলোর রিপোর্ট বিকালে পাওয়া যাবে । এ নিয়ে চলতি বছরে মোট সনাক্ত ৭১ জন । এ পর্যন্ত করোনার মারা গেছেন ৩ জন ।

আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুবির সরকার বলেন, গত এক সপ্তাহে যত রোগী আসছে তার ৮০ শতাংশই জ্বর, সর্দিকাশি নিয়ে এসেছিলেন। প্রতিদিনই এসব রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। আবহাওয়ার কারণেও এটা হতে পরে। তবে এলাকায় করোনা সংক্রমণের বিষয়টিও আমরা অবজ্ঞা করতে পারছি না। সবার করোনা পরীক্ষার ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ১০ জুলাই ২০২১ /এমএম

 


Array