
বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষকের যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে ২৬ টাকা কেজি দরে আরও আড়াই লাখ টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর আগে একই দামে দেড় লাখ টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
নতুন সিদ্ধান্তের ফলে চলতি বোরো মৌসুমে মোট চার লাখ টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত হল। প্রয়োজনে আরও দু-এক লাখ টন ধান কেনা হতে পারে।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকসহ দুই মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এবার বোরোর ফলন ‘অনেক উদ্বৃত্ত’ হয়ে গেছে।
দেশের খাদ্যগুদামগুলোর ধারণক্ষমতা ১৯ লাখ ৬০ হাজার টন। আর এখন গুদামে আছে ১৪ লাখ টন খাদ্যশস্য। সোমবার প্রধানমন্ত্রী দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা আরও আড়াই লাখ টন ধান কৃষকের কাছ থেকে কিনব। এতেও বাজার না উঠলে (ধানের) পরিমাণ আরও বাড়াব, যেন কৃষক ন্যায্যমূল্য পান।
এই আড়াই লাখ টনের বাইরে প্রয়োজনে আরও এক বা দুই লাখ টন ধান কৃষকের কাছ থেকে কেনা হবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ মার্চ খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধান কমিটির (এফপিএমসি) বৈঠকে চলতি বোরো মৌসুমে মোট ১২ লাখ ৫০ হাজার টন ধান-চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ এপ্রিল শুরু হওয়া সংগ্রহ অভিযান চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
এর মধ্যে এক লাখ ৫০ হাজার টন বোরো ধান, ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল এবং এক লাখ ৫০ হাজার টন আতপ চাল থাকবে। আর প্রতি কেজি বোরো ধানের সংগ্রহমূল্য ২৬ টাকা, প্রতি কেজি সিদ্ধ চালের দাম ৩৬ টাকা এবং আতপ চালের দাম ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
কিন্তু সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয় শুরু হতে দেরির কারণে ফড়িয়ারা সেই সুযোগ নেয়। তারা ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করলে ধান নিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েন কৃষকরা। উৎপাদন খরচ না ওঠায় অসন্তোষ থেকে পাকা ধানে কৃষকের আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটে।
এ পরিস্থিতিতে কৃষককে বাঁচাতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে মন্ত্রণালয়কে বেশি ধান কেনার ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। পাশাপাশি চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্ক বাড়ানো হয়।
খাদ্যমন্ত্রী জানান, এখন পর্যন্ত কৃষকের কাছ থেকে ৩০ হাজার টন বোরো ধান কেনা হয়েছে। এক লাখ ২০ হাজার টন ধান কেনা এখনও বাকি আছে।
আরও দেড় লাখ টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত হওয়ায় এবার সব মিলিয়ে মোট চার লাখ টন বোরো ধান কৃষকের কাছ থেকে কিনবে সরকার।
এদিকে ধানের দাম বৃদ্ধির জন্য চাল আমদানি নিষিদ্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ২৯ মে বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক নির্দেশনায় বলা হয়, কৃষকের ধানের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিতের লক্ষ্যে চালের পরিবর্তে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি এবং বিদেশ থেকে চাল আমদানি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সানুগ্রহ নির্দেশনা প্রদান করা যেতে পারে।
জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বোরো ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করায় বাজারে ধানের মূল্য উৎপাদন খরচের চেয়ে কম।
ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ বৃদ্ধি এবং সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার দাবি উঠেছে। এ অবস্থায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চাল আমদানি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়। এতে সম্মতি দেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে খাদ্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ১২ জুন ২০১৯/ এমএম




