প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: করোনাভাইরাসে প্রবীণরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ও মৃত্যুবরণ করছেন। সাধারণত তাদের দেহে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কম থাকে। একদিকে বয়স, অপরদিকে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার ও যথাযথ চিকিৎসার সুযোগ নিশ্চিত করতে না পারায় তাদের শরীরে রোগ এসে বাসা বাঁধে। বৃদ্ধ বয়সে তাদের স্বাভাবিক খাবারের চাহিদাও কমে যায়। এ ঘাটতি পূরণে তাদের বেশি বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের প্রয়োজন। পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক নিয়মিত ওষুধ সেবনের বিষয়টি প্রতি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমান সরকার বয়স্ক ভাতা দিয়ে প্রবীণদের অনেকটা সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আনতে সক্ষম হয়েছে। অথচ সরকারি কর্মচারী, যারা বর্তমান বেতন স্কেলের আগে অবসরগ্রহণ করেছেন, তাদের পেনশন ভাতা নতুন পেনশনভোগীদের চেয়ে অতি নগণ্য। বর্তমান পেনশনভোগী ৩য়, ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীরা এককালীন ৫০ শতাংশ হস্তান্তর করেও কমপক্ষে ২০-৩০ লাখ টাকা পেয়ে থাকেন। কারণ বর্তমান সরকার সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ করেছে। সিনিয়র পেনশনভোগীদের কর্মকালীন বেতন স্কেল ছিল দুঃখকষ্টের মাঝে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়ে’র মতো। না হতো সঞ্চয়। অসচ্ছল অবস্থায় পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হতো। চাকরির সময়ে সিনিয়ররা জুনিয়রদের চেয়ে বেতন বেশি পেয়ে থাকেন। এটাই স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে চলে আসছে। অথচ পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রে উল্টো নিয়ম। সরকারি কর্মচারীরা পেনশনে গেলে ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে মৃত্যু পর্যন্ত চিকিৎসা ভাতা ২ হাজার ৫০০ টাকা পেয়ে থাকেন। যারা ১০০ শতাংশ পেনশন নিয়ে গেছেন, তাদের অনেকে আজ সব হারিয়ে পথে বসেছেন। তাদের একমাত্র ভরসা, প্রতি মাসে চিকিৎসা ভাতা ২ হাজার ৫০০ টাকা।
সরকার তাদের ১৫ বছর পর পেনশন পুনঃস্থাপনের এক মহতী যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তাতে কিছুসংখ্যক কর্মচারীর সুবিধা হয়েছে। কারণ ৫৯-৬১ বছরের পর আরও ১৫ বছর খুব কমসংখ্যক মানুষ বেঁচে থাকেন। ফলে সরকারের এ প্রশংসনীয় উদ্যোগ অনেকটা শুভঙ্করের ফাঁকির মতো হয়ে পড়েছে। প্রতি বছরই ওষুধের দাম বাড়ছে। এক্ষেত্রে চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাবের যৌক্তিকতা ভেবে দেখা জরুরি। প্রবীণ পেনশনভোগীদের শেষ জীবনটা সচ্ছল ও আনন্দমুখর থাকুক-রাষ্ট্রের কাছে এ প্রত্যাশা করা কি অন্যায়? মুক্তিযোদ্ধাদের ২০১০ সালে চাকরির বয়স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পিআরএলে গমনকারীদের সময়কে কর্মকালীন হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। অথচ অন্যান্য কর্মচারীর চাকরির বয়স বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ সুযোগ দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে কর্মচারীরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হন। উচ্চ আদালত অবসরপ্রাপ্ত সাধারণ কর্মচারীদের মুক্তিযোদ্ধা কর্মচারীদের মতো পিআরএলের সময়কে কর্মকালীন গণ্য করার নির্দেশ দেন। সরকারপক্ষ থেকে এ বিষয়ে আপিল করা হয়নি। ফলে ধরে নেওয়া যায় সরকারের এ রায়ে কোনো আপত্তি নেই। অথচ দীর্ঘ সময় গড়িয়ে গেলেও হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে।
প্রবীণ পেনশনভোগীদের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে আসন্ন বাজেটে কতিপয় সুপারিশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ২০১১ সালের পিআরএল গমনকারীদের মুক্তিযোদ্ধাদের মতো কর্মদিন হিসাবে হাইকোর্টের রায় দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক। শতভাগ পেনশন গ্রহণকারীদের পেনশন পুনঃস্থাপন ১৫ বছরের স্থলে ১০ বছর করা হোক। সিনিয়র পেনশনভোগীদের ভাতা জুনিয়র পেনশনভোগীদের সঙ্গে সমন্বয় করা হোক। চাকরিজীবীদের মতো অর্থপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমতা রক্ষা করা হোক। পেনশন গ্রহণকারীদের চিকিৎসা ভাতা ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হোক। পেনশন গ্রহণকারীদের সিনিয়র সিটিজেন হিসাবে গণ্য করে সরকারি হাসপাতালের কেবিনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভাড়ামুক্ত রাখা হোক। বেসরকারি হাসপাতালে ৫০ শতাংশ আর্থিক সুবিধা দেওয়া হোক। রেল, লঞ্চ, বাস ও বিমানে ৫০ শতাংশ ভাড়া মওকুফের সুবিধা দেওয়া হোক। প্রতি বছর চিত্তবিনোদনের জন্য তাদের ১ মাসের মূল বেতন প্রদান করা হোক ।
মো. সিদ্দিকুর রহমান : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৮ মে ২০২১ /এমএম