Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ অনেকেই খুব বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন, অদ্ভূতরকম লকডাউন দেয়ার কারণে। এখনো অনেকেই করছেন, আমাকেও কেউ কেউ ইনবক্সে নক দেয়, এই লকডাউন দেয়ার কি আদৌ কোন প্রয়োজন ছিল?এ কেমনতর লকডাউন, গণপরিবহন বন্ধ অথচ বইমেলা চলবে? ঈদের আগে মার্কেট খোলা রাত ১০টা পর্যন্ত!

স্কুল-কলেজ বন্ধ অথচ কোনও কোনও অফিস, সব গার্মেন্টস আর শিল্প কারখানা খোলা। রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া যাবে না; কিন্তু ঠিকই শপিং মলে ইফতার পার্টি। দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস-ট্রেনের খবর নাই অথচ প্রাইভেট মাইক্রো আর ফেরি চলাচল হচ্ছে? খুবই আজব কাণ্ড!

পারতপক্ষে বাইরে থেকে এহেন লকডাউন আজব লাগে বইকি! কিন্তু এই আজব কাণ্ডের ফলে আমি আমার নিজ পরিবারে এক অদ্ভূত পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। গোটা রমজান মাসে আম্মুকে ব্যাংকে চাকরিতে যেতে হয়েছে সপ্তাহে দুইদিন। ঈদের পর এখন প্রতিদিন যেতে হচ্ছে কিন্তু ছুটি দিয়ে দেয়া হয় প্রায় ঘন্টা তিনেক আগেই। অবসরপ্রাপ্ত আব্বু আগে মার্চ পর্যন্ত সারাদিনই বলা যায় বাইরে ঘুরাঘুরি করত, সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা। লকডাউনের কারণে সে মাস দুয়েক বাসাতেই আছে, ফোনে আড্ডা দিচ্ছে ভিডিও কলে। আমার ছোট ভাই ফজরসহ ৫ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে পড়ে। লকডাউনের সময়েও মসজিদে যাচ্ছে, তবে সে সতর্কতাবশতঃ মসজিদের বাইরের মাঠে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে নিচ্ছে।

আমার বোন এবং বোনজামাই প্রাইভেট চাকরি করছে ঘরে বসেই, তাদের সপ্তাহে একদিন সশরীরে উপস্থিত থাকলেই চলে। আমি নিজে প্রচুর বাইরে ঘুরাঘুরি করতাম। লকডাউনের কারণে নিজেকে নিজেই গুটিয়ে নিয়েছি, শেষ কয়েকদিন বইমেলায় যাইনি, অনলাইন শপিং করেছি, অসুস্থ না হলেও আমার প্ল্যান ছিল যা করব আপাতত ঘরে বসেই করব।

বুয়া এবং ড্রাইভার এলে তাদেরকে আলাদা মাস্ক পরতে হয়, হাতমুখ ধুয়ে তবেই কাজ শুরু করতে পারছে, যে অভ্যেসটা গত নভেম্বরে করোনা সংক্রমণ কমে গেলে শিথিল করা হয়েছিল। কিন্তু লকডাউন দিয়ে দেয়ার পর আবার সেই অভ্যেস চালু হয়। দেখুন, সবাই কিন্তু সব কাজই করছে। কারো কোনো কাজ থেমে নেই। শুধু কাজ করার প্রসিডিওর এবং পদ্ধতি কেবল পরিবর্তন হয়েছে!

এখন আপনি প্রশ্ন করতেই পারেন, লাভটা কী হল? বেশি দূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। লাভটা নিজের পরিবার থেকেই হিসেব করতে পারেন। আইসিইউ পর্যন্ত যাচ্ছে মূলত বয়স্ক রোগীদের একটি গ্রুপ। এই বয়স্ক ব্যক্তিদের যদি বাসায় রাখা যায়, করোনা প্রকোপ অনেকটাই কমে আসতে বাধ্য। আমরা বাঙালিরা কোন ভালো অভ্যেসই নিয়মিত পালন করতে নারাজ। মাঝে প্রকোপ কমে যাওয়ায় তো মাস্ক পরাই বন্ধ করে দিয়েছিল ৭০% মানুষ। এই জাতিরে কঠোর শৃংখলার মধ্যে আনতে হলেও, খানিকটা ভয়ভীতি আর নিয়মের মাঝে রাখতে হয়, নাহলে এরা নাছোড়বান্দা (আপনি-আমিসহ), জি হ্যাঁ

তাও অনেকে জিজ্ঞেস করবেন, কিছু খোলা, কিছু বন্ধ, এমন উদ্ভট লকডাউন কেন?

গার্মেন্টস, কারখানা, অফিস, ব্যাংক, সবকিছু কেন বন্ধ করে লকডাউন দিচ্ছে না?

এবার, গত বছর হাসপাতালে ডিউটি করার সময় আমার ছোট্ট একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। এক মধ্যবিত্ত রোগীর লোককে আর না পারতে রেগে গিয়ে বলেছিলাম, ‘বের হচ্ছেন কেন, ঘরে থাকতে পারেন না? লজ্জা নাই, করোনায় মরার ভয় নাই আপনাদের?’

তিনি বললেন, ‘আপা, করোনায় মরার আগে ক্ষুধায় কিংবা না খেয়ে মরতে চাই না’। এরপরে আমার আর কিছু বলার ছিল না!

এ পর্যন্ত আমাকে যারাই ইনবক্সে নক দিয়ে বলেছেন, এমন আজব লকডাউন দিয়ে কী লাভ হল? আমি শুধু বলেছি, অনেক লাভই হইসে এবং হবে। ২৩ এপ্রিল (প্রায় ১০০+) আর ২৩ মে (২৮) এর করোনার বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা দেখলেই প্রমাণ হয়ে যাবে, একটা দেশের মানুষকে ভাতে না মেরেও করোনায় মরার হাত থেকে রক্ষা করা যায়!

আপনি-আমি তো এপডেমিওলোজিস্ট না। কখন কী করতে হবে, তা আমার আর আপনার চেয়ে বিশেষজ্ঞগণই ভালো বুঝবে,তাই নয় কি? লকডাউন মেনে চলুন, মাস্ক পরুন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন, কাজ করুন, সুস্থ থাকুন, বেঁচে থাকুন।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৫ মে ২০২১ /এমএম

 


Array