Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: দেশ বিজয় ও এগিয়ে যাবার মূল সুরে আছে তরুণ। সবুজের জয়গান আজ পুরো বাংলাজুড়ে। তারুণ্যের এই স্বপ্ন, ভাবনা, সাফল্য, ত্যাগ, প্রচেষ্টা এবং আধুনিকতায় রয়েছে বিজয়। স্বাধীনতার মাসে তরুণদের বিজয় ভাবনা নিয়ে লিখেছেন রিয়াজ রিপন।

লাখো শহিদের বিনিময়ে অর্জিত একটি নাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশ নামটির পেছনে যে অবদান তা অনস্বীকার্য; বিশেষ করে শুধু ভাষার জন্য যে সংগ্রাম তা মূলত তৎকালীন সময়ে তরুণদের এগিয়ে আসার উচ্ছ্বাসের ঢেউয়ের বহিঃপ্রকাশ।

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এখন এই পথচলার বড় ভূমিকায় রয়েছে তারুণ্য । তাদের জয়গানে গোটা পৃথিবী এখন মুখরিত। তাদের স্বপ্ন, প্রচেষ্টা, সাফল্যসহ সব আধুনিকতায় বিজয় শব্দটি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

‘বিজয়’ শব্দটি হলো কোনো লড়াই বা প্রতিযোগিতায় জয়লাভ। বিজয়ের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি একটি জাতিকে চিরউদ্যমে স্বাধীনতা ভোগের পথ দেখায়। আর এর মূলে উৎসাহব্যঞ্জক হলো তরুণ সমাজ।

আজ হতে অর্ধশতাব্দী আগে আমাদের দামাল ছেলেরা পাক হানাদার ও দোসরদের হাত থেকে দেশকে রাহুগ্রাস মুক্ত করে আমাদের উপহার দিয়েছিলেন স্বাধীন রাষ্ট্র। ইতিহাস শুধু তরুণের পক্ষে সাক্ষী-ই দেয় না, বরং গেয়ে যায় তারুণ্যের জয়গান। তাদের পদধ্বনিতে মুখরিত হয় এই বাংলা। তাদের চেতনা আজ বেজে চলছে সকল তরুণের মাঝে। হয়তো এখন আর যুদ্ধের দামামা বাজছে না, বুলেটের ঢিঢিঢিঢিঢিঢিঢি… শব্দ শোনা যাচ্ছে না, কিন্তু জয়গান বেজে চলছে দিগ্বিদিক।

আমাদের বর্তমান তরুণ প্রজন্ম উপযুক্ত শিক্ষার আলোয়, সভ্যতার নতুন দিগন্তে ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় নিজেদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও চেতনায় এই প্রজন্ম কোনো অংশে পিছিয়ে নেই।

ঢাকার বারিধারার ডিওএইচএস পার্কে বিকালে প্রায়ই শিক্ষার্থীদের দেখা যায় খেলাধুলায় মেতে থাকতে। তারা খেলাধুলার পাশাপাশি মাঝে মাঝে তারা এখানে বসে শিক্ষা, সাফল্য ও লক্ষ্য নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনায়ও সামিল হয়। উঠে আসে দেশ, ইতিহাস ও উন্নয়নের কথা। খুদে কিশোর-কিশোরীরা লেখাপড়ার সাথে সহশিক্ষায় দক্ষ হয়ে নানান মননশীল চিন্তা চেতনায় ব্রত হচ্ছে দিন দিন।

এখানে কথা হয় কয়েকজন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীর সাথে। তাদের মধ্যে কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী তৌহিদ। বারিধারার স্থায়ী বাসিন্দা। কলেজ আর বাসার লেখাপড়ার খানিক বিরতিস্বরূপ দিন শেষে এই মাঠে আসে। কখনো বন্ধুদের সাথে হয় জম্পেশ আড্ডা। কখনো আবার খেলাধুলায় মাতামাতি। ফুটবল ও বাস্কেটবল খেলা তার প্রিয়। সামনে বিজয় দিবসটি নিয়ে আলোচনার খানিকক্ষণ পর দিবসটির গুরুত্ব জানতে চাইলে তার ভাষায় উঠে আসে- “আমরা ’৫২-র ভাষা আন্দোলন দেখিনি, ’৭১-এর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করিনি, রক্তাক্ত পথ স্বচক্ষে দেখিনি হয়তো, তাই বলে আমাদের দেশের প্রতি ভালোবাসা কোনো অংশে কম নেই। আমরা বইয়ের পাতায়, সিনেমায়, নানা গল্পে আমাদের যুদ্ধ ও বিজয়ের কথা শুনেছি, দেখেছি। কখনো আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছে শুনেছি। আমরা সবসময়ই এই দিনটিকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করি। আমাদের বিশ্বাস, আমরা একদিন দেশকে পৃথিবীর মাঝে সুপ্রতিষ্ঠিত করবো।’

বিদ্যালয়, উচ্চবিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় পরে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীরা স্বশিক্ষায় এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। তাদের বিজ্ঞানমনস্কতা, ব্যবসা ভাবনা কিংবা সাহিত্যচিন্তা যা-ই বলা হোক না কেন, তাদের মাঝে রয়েছে চিরন্তন সুর আর তা হলো সত্যের পথে চলা ও সাফল্য অর্জন করা যার মূলে থাকে বিজয় ছিনিয়ে আনা।

মাধ্যমিকের ইংরেজি ভার্সনে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝেও কোনো বিবর্ণ সুর খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেকেই বলে থাকেন যে ইংরেজি ভাষায় পড়ে শিক্ষার্থীরা দেশপ্রেমী হয় না, দেশের সংস্কৃতি ও ইতিহাস জানে না। কিন্তু বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে তা পাওয়া গেল না। যে সকল শিক্ষার্থী দেশের মর্ম বোঝে, দেশের মানুষকে ভালোবাসে তাদের আত্মসংস্কৃতি অবমাননার ভাবনা কোনোভাবেই আসতে পারে না। কথা বললাম স্থানীয় বিদ্যালয়ের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের সাথে। তাদের ভাষায় রয়েছে একই টান- দেশের প্রতি ভালোবাসা।

আধুনিক ব্যক্তিত্বসুলভ আশাবাদী তরুণ মুত্তাকিন জানায়, “একাত্তরে অনেক তরুণ জীবন বাজি রেখে দেশকে বিজয় এনে দিয়েছে। আমরা সেই প্রেরণায় গা ভাসিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলছি। আমাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আশা জাগিয়ে তুলেছে ওই সময়ে লাখো মানুষ যার মধ্যে অনেক তরুণ প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছে। তাদের অবদান আমরা কখনো ভুলতে পারবো না। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আমরাও সত্যের পথে চলছি। আমাদের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে অনবরত চলছি।”

একই প্রতিষ্ঠানের ডজনখানেক গুণে গুণান্বিত শিক্ষার্থী সায়মা মুত্তাকিনের সাথে একাত্ম হয়ে আরো যুক্ত করে, “সংস্কৃতি আমাদের সভ্য হতে শেখাচ্ছে। আমাদের দেশের জাতীয় ও ধর্মীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি আমাদের যোগ্য মানুষ করে তুলছে। আমরা চিরঋণী আমাদের শহিদ ভাইদের কাছে যারা আমাদের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। আমাদের বড়রা ইতোমধ্যে বিভিন্ন আবিষ্কারে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তাদের নাম লিখে ফেলেছেন। আশা করছি, আমরাও পারবো সভ্যতার স্বর্ণশিখরে পৌঁছতে।’

পার্কে খেলার মাঠের পাশে গিটারের ধ্বনিতে মিষ্টি সুরে দেশাত্মবোধক গানের শেষে হাসিমাখা মেধাবীমুখ ফারহান জানায়, “সব কথাই ঠিক। তবে আমাদের কিছু বিচ্ছিন্ন ক্ষুদ্র ভুল রয়েছে। যদি সেগুলো অতিক্রম করা যায় তাহলে সত্য ও সুন্দরকে পুঁজি করে সামনে এগিয়ে যেতে পারবো। আমাদের মেধাশক্তিকে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে তুলে ধরতে হবে এবং সাফল্য ছিনিয়ে আনতে হবে। দেশরক্ষার্থে আমাদের পূর্বপুরুষেরা যেমন অকুতোভয় ছিলেন, আমাদেরও তেমনি সাহসী হতে হবে। এতে সাফল্য অনিবার্য।’

আজকের প্রজন্মের কাছে উদাহরণস্বরূপ যে ক’জন শিক্ষার্থী তাদের চিন্তা, উদ্যম, সাফল্য ও দেশের কথা উল্লেখ করেছে তার সারমর্মে হলো দেশপ্রেম। জাতি নতুন প্রজন্মকে দাউ দাউ করে জ্বালিয়ে দিয়েছে, যার দরুন আমাদের তরুণ সমাজ সামনের দিকে ছুটে চলছে। অচিরেই অর্জিত পতাকা হাতে নিয়ে আমাদের তরুণরা চূড়ায় পৌঁছবে- এমনটাই বিশ্বাস করেন অভিভাবক-শিক্ষক ও সুশীল সমাজ।

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৬ মার্চ ২০২১ /এমএম


Array