আহসান রাজীব বুলবুল :: “গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে একজন ভদ্রলোক” উদ্ধারের প্রচেষ্টায় কয়েকটি ডিপার্টমেন্ট। যারাই সহযোগিতা করতে আসছেন, তারাই একের পর এক বলে যাচ্ছেন, না, না এটা আমাদের ডিপার্টমেন্টের কাজ নয়।
পুলিশ বলছে যেহেতু গাছের নিচে এটা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের, গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বলছে যেহেতু এটা রাস্তার পাশে সেহেতু এটা সড়ক ও জনপথ বিভাগের, সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে রাস্তার পাশে চাপা পড়ায় তদন্তের জন্য প্রয়োজন পুলিশ প্রশাসনের। এটি একটি মঞ্চ নাটকের দৃশ্য। আমারও সৌভাগ্য হয়েছিল এই দৃশ্যটি অবলোকন করার। ঢাকার মঞ্চে বুঁদ হয়ে দেখছিলাম নাটকটি। পুরো নাটকটি ঘিরে আবর্তিত হয় গাছের নিচে চাপা পড়া লোকটি উদ্ধারের কাহিনী।
কিন্তু দায়িত্ব না নিয়ে একজন আরেকজনের উপরে চাপানোর এই প্রক্রিয়ায় শেষ পর্যন্ত লোকটি আর উদ্ধার হয়নি। যতদূর মনে পড়ে প্রয়াত এসএম সোলায়মান ভাই নাটকটিতে অভিনয় করেছিলেন। নাটকের নাম এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। তবে নাটকটি তৎকালীন সময়ে ঢাকার মঞ্চে বেশ জনপ্রিয় ছিল।
এবার আসি আমাদের বাস্তব জীবনের রঙ্গমঞ্চে।বাংলাদেশ আকারে খুব বড় নয়। অনেকেরই সুখ-দুঃখের খবর প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজন জানে। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলাদেশের মানুষ যেমন আন্তরিক তেমনি অতিথি পরায়ণ।যা অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। এজন্যই হয়ত আমাদের দেশের কবি সাহিত্যিকরা লিখেছেন —এমন দেশটি কোথাও পাবে নাকো তুমি……….।
প্রবাসীদের মন সারাক্ষণ ই পড়ে থাকে বাংলাদেশে। প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে আসা মানুষগুলো মনের অগোচরে সারাক্ষণ ই খুঁজতে থাকে আপনজনদের। উন্নত টেকনোলজি ব্যবহার করে মুঠোফোনে অথবা মেসেঞ্জারে চলতে থাকে প্রিয়জনদের সাথে আলাপচারিতা। আর দৃষ্টি থাকে দেশের সংবাদপত্রের দিকে।
সুখদুঃখ, হাসিকান্না, প্রিয়জন আর প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে আসা প্রবাসীরা আপনজনদের মঙ্গলে নিয়োজিত। ফেলে আসা প্রিয় মানুষগুলো ভালো থাকুক এমনটাই হয়ে উঠে প্রবাসীদের পত্যাশা। কিন্তু বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক কালের কিছু ঘটনা সত্যিই ব্যথিত করে আমাদের। সম্প্রতি একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাটি নাড়া দিয়েছে প্রবাসীদেরকেও। দেশ সেবায় নিয়োজিত এ সকল মানুষের মৃত্যু খুবই বেদনাদায়ক! এই মৃত্যু আমাদেরকে জানিয়ে দেয় সভ্য সমাজের কোন স্তরে আমরা?
কিছু অমানবিকতা, নৈতিকতার স্খলনে আমাদের রঙ্গমঞ্চের চরিত্রগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃত ঘটনা। সমবেদনা সহমর্মিতা ও মানবিক মূল্যবোধের অভাবে হারিয়ে ফেলছি কিছু স্বজন, মেধাবী প্রতিভাবান ও কিছু ভালো মানুষ।
সমাজের এ অবস্থার কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে নিয়োজিত মানুষগুলি যখন একজন আরেকজনের দোহাই দিতে থাকে ততক্ষনে হারিয়ে যায় প্রকূত ঘটনা। সময়ের আবর্তনে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। মঞ্চ নাটকের ঐ চরিত্রের মতই গাছের নিচে চাপা পড়ে ফাইল, চলতে থাকে রোলিং- ফাইভ, ফোর, থ্রি ,টু ওয়ান ——তারপর একদিন চলমান গতি থেমে যায়—নো
এ্যকশন।
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ১৯ নভেম্বের ২০২০/এমএম





