প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: ভিটামিন ডি চর্বিতে দ্রবণীয়, যা শরীরের ক্যালসিয়াম, ফসফেট ইত্যাদির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ভিটামিন ডি হাড়ের কাঠামো তৈরি এবং ঘনত্ব বৃদ্ধিতে প্রভূত ভূমিকা রাখে।
নাম শুনে ভিটামিন মনে হলেও ভিটামিন ডি আসলে একটি স্টেরয়েড হরমোন। অন্যান্য ভিটামিন যেখানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বা কো-এনজাইম হিসেবে কাজ করে, সেখানে ভিটামিন ডি জিন এক্সপ্রেশন নিয়ন্ত্রণ করে, অর্থাৎ দেহে প্রোটিন তৈরিতে নিয়ন্ত্রণকারীর ভূমিকা পালন করে।
প্রাণিজ ও উদ্ভিদজাত স্টেরল ও ফাইটোস্টেরল থেকে সূর্যালোকের অতি বেগুনি রশ্মি দ্বারা রূপান্তরিত হয়ে দেহে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। ভিটামিন ডি-২ ও ভিটামিন ডি-৩ মানবদেহে থাকে।
শিশুদের মধ্যে ভিটামিন ডি’র অভাবে রিকেটস রোগ (হাড় বাঁকা ), পেশি খিঁচুনি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, হাপানি, চর্মরোগ হয় এবং এসব শিশুর দেহে ক্যালসিয়ামের স্বল্পতাও দেখা দেয়। এ কারণে শীতপ্রধান দেশের শিশুরা এসব রোগে ৪০ শতাংশ বেশি আক্রান্ত হয় গ্রীষ্মপ্রধান দেশের চেয়ে। কারণ সেখানে শিশুরা রোদ থেকে ভিটামিন ডি’র জোগান খুব কম পায়। খাবার থেকে ভিটামিন ডি গ্রহণ করা হলেও অনেক সময় ঠিকমতো হজম শক্তির অভাবে বণ্টিত হয় না (ব্রিটেনে প্রতি পাঁচজনে একজন ভিটামিন ডি’র স্বল্পতায় ভুগে থাকে)।
ভিটামিন ডি’র তীব্র অভাব থাকলে শিশুর মস্তিষ্কের খুলি, পায়ের হাড় নরম হয়ে বা বাঁকা হয়ে যায়। সামান্য একটু চাপে পায়ের হাড়ের যন্ত্রণায় শিশুরা কাঁদে, যা পেশি যন্ত্রণা বা পেশি দুর্বলতার লক্ষণ। এটাই রিকেটস।
শিশুর জন্মের ৩ থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত যদি তার শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি’র জোগান দেয়া না হয় তাহলে তার পা বা হাত বেঁকে যেতে পারে। তাই শিশুদের ভিটামিন ডি-জাতীয় খাবার দেয়া অত্যন্ত জরুরি। সেই সঙ্গে ভিটামিন ডি-৩-এ পৌঁছানোর জন্য প্রতিদিন সকালে ১৫-২০ মিনিট শিশুকে রোদে রাখা উচিত।
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ভিটামিন ডি’র অভাব দেখা দিলে অস্টিওমেলাসিয়া-জাতীয় অসুখ হবে এটা নিশ্চিত। এ ক্ষেত্রে সাধারণভাবে দেখা যায় পেশির দুর্বলতা, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে কষ্ট অনুভব করা, মেঝে বা চেয়ার থেকে উঠতে ভীষণ কষ্ট পাওয়া, বিশেষ করে ঊরু ও পায়ের মাংসপেশি হাড়ের সঙ্গে জড়িয়ে ধরার মতো মনে হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ইত্যাদি রোগের সঙ্গেও ভিটামিন ডি’র অভাবের যোগসূত্র আছে।
হাড়ের ক্ষয়জনিত রোগে শুধু ভিটামিন ডি ব্যবহার করা হলে তা একেবারেই কাজ করে না বলে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। হাড়ের ক্ষয়রোধ করতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন ডিসহ চিকিৎসা দিলে কয়েক বছরের জন্য ক্ষয় কিছুটা রোধ করা সম্ভব হয়। বয়স ৫৫ বছরের বেশি হলে ভিটামিন ডি, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসজাতীয় খাবারের দিকে একটু বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।
ভিটামিন ডি’র উৎস : শরীরে ভিটামিন ডি’র চাহিদার ৮০ শতাংশের বেশি আসে ত্বকে পতিত সূর্যরশ্মি থেকে। আর খাদ্যের মধ্যে স্যামন, সার্ডিন, টুনা ইত্যাদি সামুদ্রিক মাছ, মাশরুম, সেদ্ধ ডিম, টকদই, গরুর কলিজায় প্রচুর ভিটামিন ডি পাওয়া যায়।
ডা. শাহজাদা সেলিম : সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০৬ নভেম্বের ২০২০/এমএম