বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সুবীর নন্দীকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন অনেকে। ছবি: প্রথম আলোকেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সুবীর নন্দীকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন অনেকে। ছবি: প্রথম আলোকফিনের ঢাকনা খুলতেই দেখা গেল সেই মুখ। বছরের পর বছর যে মুখটি বাংলা সংগীতের অনুরাগীদের চেনা। যে মুখে সদা হাসি লেগে থাকত। নিথর সারা শরীর ঢাকা। বুকের ওপরে গাঁদা ফুল। অত্যন্ত প্রশান্ত মুখ। কোনো কষ্টের লেশমাত্র নেই তাতে। প্রিয় মানুষ সুবীর নন্দীকে দেখতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অগণিত মানুষের ভিড়। তাঁদের অনেকের হাতেই ফুল।
একুশে পদক পাওয়া জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পী গতকাল মঙ্গলবার ভোররাত সাড়ে চারটায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। শিল্পীর মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে আজ বুধবার সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মরদেহ সকালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর গ্রিন রোডের বাসায়। সেখান থেকে নেওয়া হয় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে।
বেলা ১১টার দিকে সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে গুণী এই শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে আগে থেকেই নানা পেশার অসংখ্য মানুষ জড়ো হন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হন তাঁর ভক্ত-অনুরাগীসহ একসময় তাঁর সঙ্গে কাজ করা সংগীত ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সুবীর নন্দীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জাতীয় সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য কবি মুহাম্মদ সামাদ, ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, চিত্রনায়ক উজ্জ্বল ও চিত্রনায়িকা নূতন, গীতিকার রফিকুজ্জামান, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, কবির বকুল; সংগীতশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, খুরশীদ আলম, তিমির নন্দী, ফকির আলমগীর, কুমার বিশ্বজিৎ, এন্ড্রু কিশোর, রবি চৌধুরী, শুভ্র দেব, নকিব খান, ফোয়াদ নাসের বাবু, বাদশা বুলবুল, এস ডি রুবেল, ক্লোজআপ ওয়ান তারকা নিশিতা বড়ুয়া, কিশোর, মুহিন, সাব্বির, কিশোর, রাশেদ প্রমুখ।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা বলেন, সুবীর নন্দী একটি প্রতিষ্ঠানের নাম। তাঁকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের আধুনিক গানের ইতিহাস লেখা যাবে না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নতুন বাংলাদেশের স্বতন্ত্র সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিচয় গড়ে তুলতে যে শিল্পীরা অবদান রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে কণ্ঠের জাদুকর সুবীর নন্দী অগ্রগণ্য। তিনি শুধু একজন ভালো শিল্পীই ছিলেন না, ছিলেন একজন ভালো মানুষ। তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আরেকটি নক্ষত্রের পতন হলো। তাঁর গান আগামীর প্রজন্মকে ধারাবাহিকভাবে অনুপ্রাণিত করে যাবে।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সুবীর নন্দীর মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নেওয়া হবে এফডিসি ও চ্যানেল আই কার্যালয়ে। সেখান থেকে নেওয়া হবে রামকৃষ্ণ মিশনে। দুপুরে সবুজবাগে বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশানে একুশে পদক পাওয়া সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দীর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।
গত ৩০ এপ্রিল থেকে সিঙ্গাপুরেই চিকিৎসাধীন ছিলেন সুবীর নন্দী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তাঁকে সেখানে নেওয়া হয়।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ মে ২০১৯/ এমএম