Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: আমাদের জীবনে যত পাবলিক পরীক্ষা আছে, তার মধ্যে এইচএসসি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেশ-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা ভবিষ্যৎ চাকরির বাজারেও এইচএসসির রেজাল্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তবে অব্যশই তা জীবনের চেয়ে বেশি নয়। মনে রাখতে হবে, সবার আগে জীবন, শিক্ষা নয়। তাছাড়া একটিমাত্র পরীক্ষা মূল্যায়নের পরিমাপক নয়। পত্রিকা মারফত প্রায় ১৫ দিন আগেই জানতে পারি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলবেন না বলে জানিয়েছেন।

আবার শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে এক বছর নষ্ট হয়ে যাবে, সেটাও চান না তিনি। উভয় দিক আমলে নিয়ে বিকল্প কী করা যায় সেই বিষয়ে ভাবছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে পরীক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দ্বিতীয় দফা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও শঙ্কিত। শীতে করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এইচএসসি একটি বড় পাবলিক পরীক্ষা। এবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা ছিল প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর। সেই সঙ্গে শিক্ষক, পরীক্ষক, অভিভাবক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডার মিলিয়ে প্রায় অর্ধকোটি মানুষ এর সঙ্গে জড়িত। পরীক্ষা নেয়ার জন্য যদি অর্ধকোটি থেকে মাত্র ১ শতাংশও করোনায় আক্রান্ত হয়, তাহলে সংখ্যাটি দাঁড়াবে ৫০ হাজার।

তাছাড়া একজন শিক্ষার্থী আক্রান্ত হওয়া মানে পুরো পরিবারটি সংক্রমণের ঝুঁকিতে পড়া। এছাড়া অনেকে শিক্ষার্থী, শিক্ষক বা অভিভাবকের হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, ডায়াবেটিস বা উচ্চরক্তচাপ আছে, যারা সংক্রমিত হলে মৃত্যুঝুঁকি সর্বাধিক। পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা রাষ্ট্রের কাছে বেশি জরুরি হবে এটাই স্বাভাবিক। এইচএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে যদি একজন শিক্ষার্থীও করোনাভাইরাসে মারা যায়, তাহলে এর দায়ভার কে নেবে?

তবে পরীক্ষা না হওয়ায় সামনে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হবে, যা সরকারকেই সমাধান করতে হবে।

যেমন- ১. আন্তর্জাতিকভাবে বা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বছরের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন কেমন হবে?

২. ইতিহাসে শতভাগ পাস এবং ১৪ লাখ শিক্ষার্থী এই প্রথম। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বাড়বে ব্যাপক হারে। সেক্ষেত্রে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান সরকারকে রক্ষা করতে হবে।

৩. ১৪ লাখ শিক্ষার্থী এতদিন উদ্বিগ্ন থাকলেও গতকাল তা কেটে গেছে। তাই দীর্ঘদিন ঘরবন্দি শিক্ষার্থীরা এবার ছোটাছুটি করার চেষ্টা করবে। এর ফলে বাড়তে পারে করোনা সংক্রমণ।

৪. ভবিষ্যৎ চাকরির বাজারে ২০২০ ব্যাচের কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন হবে- এ নিশ্চয়তা সরকারকেই দিতে হবে।

৫. গতবার যারা ফেল করেছে তাদের মূল্যায়ন এবং অনেকে এসএসসিতে বিভাগ পরিবর্তন করেছে, তাদের মূল্যায়ন কিছুটা কঠিন হবে।

৬. শিক্ষার্থীরা তাদের কাছ থেকে পরীক্ষা গ্রহণের রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ গ্রহণ করা টাকা কিভাবে ফেরত পাবে?

৭. যে শিক্ষার্থী জেএসসিতে জিপিএ-৩.৫ এবং এসএসসিতে-৪.৪৬ পেয়েছে, তার গড় ফলাফল আসবে জিপিএ ৩.৯৮। রাইজিং শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন কিভাবে করা হবে?

এবারের এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হল রাইজিং শিক্ষার্থীরা। তাই তাদের ফলাফল কিছুটা ভিন্ন ধাচে মূল্যায়ন করা উচিত।

যেমন, যে শিক্ষার্থী জেএসসিতে ৩.৫ থেকে এসএসসিতে ৪.৪৬ পেয়েছে তার জিপিএ বেড়েছে ০.৯৬ বা ২৫.৬ শতাংশ। এই গ্রোথরেট হিসাব করলে গড়ের সঙ্গে গ্রোথরেট গুণ করলে তার প্রত্যাশিত বা কাম্য রেজাল্ট পেয়ে যাবে।

অন্তত এবারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত হবে এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ সমন্বয় নম্বর তুলে দেয়া, যাতে রাইজিং শিক্ষার্থীরা নম্বরে পিছিয়ে না যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলো যদি আন্তর্জাতিক মানের ও বিশ্বাসযোগ্য হয়, তাহলে এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ার ক্ষতির অনেকটাই পুষিয়ে যাবে।

নাজমুল হক : প্রভাষক, বনানী বিদ্যানিকেতন কলেজ; ত্রয়োদশ শিক্ষক নিবন্ধন (ঘঞজঈঅ) পরীক্ষায় ফিন্যান্স বিষয়ে ১ম স্থান অর্জনকারী

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০৯  অক্টোবর ২০২০/এমএম


Array