Menu

মো. মাহমুদ হাসান, ক্যালগেরি, কানাডা :: বিশ্ব মানব ইতিহাসের অধ্যায়ে হয়তো বা ২০১৯ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর একটি কালো দিবস হিসেবে ই চিত্রায়িত হয়ে থাকবে। ঐ দিন টি তে-ই বিশ্ব অর্থনীতির মোড়ল চীনের উহানে একজন মাত্র মানুষের মাঝে নিউমোনিয়া সদৃশ কিছু লক্ষন দিয়ে যার যাত্রা শুরু, একই ভূখণ্ডে ১১ জানুয়ারি ২০২০ আরও একজন মানুষের অন্তিম শয়ানের মধ্যদিয়ে পৃথিবীব্যাপি যে শবযাত্রা শুরু হয়েছিল দুনিয়ার প্রতিটি দেশে দেশে আজও তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

WHO এর তথ্য মতে, COVID- 19 নামধারী এই অদৃশ্য ভয়াল করালগ্রাসে অদ্যাবধি ( অগাস্ট ১) পৃথিবীব্যাপী আক্রান্ত ১৭ ৩৯৬ ৯৪৩, মৃত্যু ৬৭৫ ০৬০। আক্রান্ত আর মৃত্যুর বিবেচনায় আমেরিকা আর ইউরোপের দেশগুলোতে সংখ্যাধিক্য থাকলেও পৃথিবীর সব অঞ্চল ই এর ভয়াবহতায় দুর্দান্ত ব্যতিব্যস্ত।

আমার নিবাস কানাডায় অদ্যাবধি আক্রান্ত ১১৫৭৯৯, মৃত্যু ৮৯২৯, জন্মভূমি প্রিয় বাংলাদেশে আক্রান্ত ২৩৭৬৬১, মৃত্যু ২৭৭২। প্রিয় দেশে শব মিছিলের সংখ্যাটি তুলনামূলক বিশ্লেষণে সস্তিদায়ক হলেও এই করোনাকালে বাংলাদেশ হারিয়েছে প্রগতির বাতিঘর জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, উন্নয়ন পরিকল্পনায় দিকপাল খ্যাত প্রতিথযশা প্রকৌশলী অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর মতো জাতির অনেক শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। এমনকি তাদের শেষ যাত্রায় হাজার হাজার অনুসারীর অনুপস্থিতি, সে তো জীবন নিয়ে চরম উৎকন্ঠার ই বহিঃপ্রকাশ।

গোটা দুনিয়ার সব রাষ্ট্রনায়ক রা ই আজ জীবন রক্ষা আর অর্থনীতি নিয়ে ব্যতিব্যস্ত, জনসাস্ত্য বিশেষজ্ঞ আর অনুজীববিজ্ঞানী রা উৎকন্ঠিত দ্রুত এই করোনা মহামারী প্রতিরোধের উপায় অনুসন্ধানে। এই করালগ্রাসে আমার প্রিয় দেশে দৃশ্যমান নানাবিধ সামাজিক অনাচার, সমাজ বিজ্ঞানীদের জন্য ও এক চরম উৎকন্ঠার বিষয়, তাতেও বা সন্দেহের অবকাশ কোথায়।

পৃথিবী জুড়েই মানব সমাজ অাজ এক কঠিন সময় পার করছে। ছোট- বড়,বিত্তহীন-বিত্তশালী, আগ্রাসী- উদারতাবাদী, নিকৃষ্ট -উৎকৃষ্ট, মানবতাবাদী -নিষ্ঠুরতম,একমতাবলম্বী -বহুবাদী, খ্যাতিমান -খ্যাতিহীন, ক্ষমতাবান-ক্ষমতাহীন কে না আজ উৎকন্ঠিত!! মৃত বাবার মুখাগ্নিতে সন্তানের অনীহা, বয়োবৃদ্ধ মাকে সন্তানের জংগলে ফেলে রাখা, লাশবাহী ভ্যান নিয়ে বটতলায় পরিবারের সদস্যদের হাহাকার, তালাবন্ধ ঘরে এক সময়কার,পরিবারের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তির ছটফঠিয়ে মৃত্যু এর সবই তো জীবন নিয়ে চরম উৎকন্ঠার ই নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।

আর এই উৎকন্ঠাকে পূঁজি করে জেএমবির নকল মাস্ক, সাহেদ-সাবরিনার কভিড কান্ড সহ অর্থলিপ্সু পাপিষ্ঠদের কত কান্ড ই না দেখতে হচ্ছে আমাদের। ব্যতিক্রম বাদে তথাকথিত জনতার নেতারা যখন স্বেচছা গৃহবন্দী, বিপরীতে প্রজাতন্ত্রের অামলারা রোদে পূড়ে বৃষ্টিতে ভিজে জীবনের মায়াকে পেছনে ফেলে জনসচেতনতায় ব্যস্ত, নীতিনির্ধারকদের ঘনঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাস্তবায়নকারী সেবক আমলারা যখন ব্যতিব্যস্ত, বহুকালের নিন্দিত পুলিশ ই যখন শেষ বিদায়ের একমাত্র ভরসা, সেরকম এক উদ্বেগাকূল সময়ে উৎকন্ঠিত না হওয়ার বিকল্প ই বা কি অাছে।

সদ্য উদীয়মান অর্থনীতির দেশে জীবন কে তুচ্ছ বিবেচনায় প্রনোদনা প্রাপ্তির সুপ্ত বাসনায় লিপ্ত, শিল্প সমিতির কলকারখানা চালুর অকস্মাৎ সিদ্ধান্ত, শিল্পের প্রাণ শ্রমিকদের পদব্রজে ঢাকার পথে সারিবদ্ধ লাইন এর সবই তো ছিলো উৎকন্ঠা প্রশমনের সাময়িক প্রতিচ্ছবি।

প্রিয় শহর ঢাকার ভারী শিসা নিয়তঃ গ্রহণ করে ও যে বন্ধুটি সারাদিন ব্যতিব্যস্ত দিন কাটাতো, অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে সৃষ্ট জ্যাম এ যানবাহনের হ্যান্ডেল ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা শরীরে ঘাম ঝড়াতো, প্রতিনিয়ত ধুলোমাকা বাতাসে সারাক্ষণই নাক দিয়ে জলরাশী বহমান থাকতো, বছরের পর বছর অজান্তে বিষাক্ত ফরমালিন গ্রহণ ও যাকে আতংকিত করেনি, সামান্য ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইটের শরীরের তাপমাত্রা তাকেও আজ উৎকন্ঠিত করে।

একটি মাএ প্যারাসিটামল যখন শরীরের সামান্য তাপমাত্রা বৃদ্ধির উপশম ঘঠাতে পারতো, সেখানে একমাত্র সন্তানের আদুরে পুত্রবধূ, অামার প্রিয় বোনটি তার অতি প্রিয় শাশুড়ীর শরীরের তাপমাএা বাড়ার বেদনায় বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বিনিদ্র রজনীতে উৎকন্ঠায় রাত কাটায়।

কম’স্তলের ফটকে বারোটি প্রশ্নমালার উত্তরদান, কপালে ঠেকিয়ে ডিজিটাল মেশিনের ক্ষমতা পরীক্ষা, ডাক্তার মশাইয়ের অফিসে অভ্যত্রনাকারী সেবিকার সকল প্রশ্নের জবাবে জরাগ্রস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে” না বোধক ” উত্তর প্রত্যাশা – এর সবই তো সাময়িক উৎকন্ঠা প্রশমণের ই উপায়!!

বেহাল চিকিৎসা ব্যবস্তার দেশে, সেবা দিতে গিয়ে যেখানে প্রায় শতাধিক বিজ্ঞ মেধাবী চিকিৎসক প্রান হারায়, সেদেশে বসে, আমার দু’সপ্তাহের বেশি “বাধ্যতামূলক অবসর ” এর খবর শুনে প্রিয় শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুদের উৎকন্ঠিত হওয়া অগনিত ফোনকল, তা তো মোটেই অবাস্তব নয়।

অজানা এক মহা আতংকের নাম COVID-19. এর মাঝে বছর ঘুরে ফিরে এলো ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধমী’য় উতসব ঈদূল অাজহা। শারীরিক নিরাপত্তার জন্য আরোপিত সকল বিধিবিধান মেনে যুগ যুগের রীতি কোলাকুলি আর, দলভিত্তিক আপ্যায়ন কে ত্যাগ করে

বিধাতার কৃপা, আর মুক্ত জীবনের প্রত্যাশায় ই পার করেছে পবিত্র এই দিনটি। সারা দুনিয়ার লাখ লাখ মুসলমান প্রথম বারের মতো সকল মানসিক প্রস্তুতি সত্ত্বেও, পবিত্র কাবা শরিফের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হয়ে কি চরম উৎকন্ঠায় ই না দিন পার করছে। প্রত্যাশা করি, মানবজাতি পরিপূ্র্ণ সহজাত জীবনে ফিরে আসবে শিগগিরই তবে, শংকা, উৎকন্ঠা আর উদ্ধেগ কে পূজি করে যারা বিত্তের পাহাড় গড়ায় এখনো নেশাগ্রস্ত, তাদের হীন মানসিকতার চির বিদায় ই কাম্য!!!

ঈদ মোবারক।

মোঃ মাহমুদ হাসান
সাবেক উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ০৩ আগস্ট ২০২০/এমএম


Array