বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: সকাল ১১টা। মিরপুর স্টেডিয়ামের ইনডোরে একই গাড়ি থেকে নামলেন আবাহনীর তিন ক্রিকেটার; সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও ওয়াসিম জাফর।
পরের দুই ঘণ্টায় প্রথম দুই জন ব্যাটিং, বোলিং করলেন। তৃতীয় জন কোচের ভূমিকায় নেটের পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে। হাত দিয়ে নানা কষরতে দেখালেন, নিজে শ্যাডো করলেন অনেকবার, মুখে বহুবার বলে বোঝালেন সৌম্যকে।
ওয়াসিম জাফর রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর হয়ে খেলার পাশাপাশি বাংলাদেশের তরুণদের সহযোগিতায় দুহাত প্রসারিত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৫৭টি সেঞ্চুরি করা এই ভারতীয় ক্রিকেটারের।
নেটে শেষে বের হওয়ার মুখে ওয়াসিম জাফর বললেন, ‘সৌম্য ভালো অবস্থানেই আছে। চিন্তার কিছু নেই। ও রান করবে।’ গত শুক্রবার বাঁহাতি এই ওপেনারকে নিয়ে একই বিশ্বাসের কথা জানিয়েছিলেন আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন।
ক্রিকেটাঙ্গন মুখর এখন বিশ্বকাপের আলোচনায়। টানা দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া সৌম্যর চোখে, বিশ্বকাপ একটা স্বপ্নের বিষয়। গতকাল একান্ত আলাপে এই তরুণ ক্রিকেটার বলেছেন, প্রিমিয়ার লিগের বাজে সময় ভুলে বিশ্বকাপে নতুন শুরু করতে চান। ব্যাট হাতে রাঙাতে চাইছেন বিশ্বকাপ। বোলিংয়েও দলের জন্য অবদান রাখতে আশাবাদী তিনি।
অধারাবাহিকতা, সম্প্রতি প্রিমিয়ার লিগে বড়ো রান না পাওয়ায় সৌম্যকে নিয়ে আলোচনার কমতি নেই ক্রিকেটাঙ্গনে। তবে টিম ম্যানেজমেন্টের তার প্রতি আস্থা অনেক। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে টপঅর্ডারে সৌম্যর সহজাত আক্রমণাত্মক ব্যাটিংটাই হতে পারে গোটা দলের জেগে উঠার বড়ো জ্বালানি।
সৌম্যর মন্দিরে বিশ্বকাপের অবস্থান সবসময় বিশেষ জায়গায়। গতকাল বিশ্বকাপ ভাবনা নিয়ে বাঁহাতি এই ওপেনার বলেছেন, ‘বিশ্বকাপ তো একটা স্বপ্নের জিনিস। চেষ্টা করবো স্বপ্নটা যেন ভালো হয়। খারাপ স্বপ্ন, না হয়। ওইটা ভালো করার চিন্তাই করি। এখন প্রিমিয়ার লিগ খেলার মাঝে আছি। ভালো হচ্ছে না, রান হচ্ছে না। চেষ্টা করবো বিশ্বকাপে যেন এই বিষয়টা না থাকে। যেন বিশ্বকাপে বিপরীত হয়।’
প্রিমিয়ার লিগে ১১ ম্যাচে ১৯৭ রান করেছেন তিনি। কিছুটা হলেও এই রান খরা প্রভাব ফেলছে সৌম্যর মনজগতে। তিনি বলেছেন, ‘একটু তো রেশ থাকেই। কিন্তু যেহেতু প্রিমিয়ার লিগ শেষেই বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু হবে, তো ওখানে যেন এটা ভুলে যেতে পারি। যত দ্রুত ভুলতে পারবো, আমার জন্য মনে হয় ততই ভালো। চেষ্টা করবো ভালো কিছু নিয়ে বিশ্বকাপে যাত্রা করতে পারি।’
বড়ো ইনিংস না আসলেও ব্যাটিংয়ে নিজেকে নিয়ে বিচলিত নন সৌম্য। কারণ তার বিশ্বাস, নিজের সহজাত ধরনটা অবলম্বনেই রান আসবে। ২৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার বলেছেন, ‘ধরেন এখন আমি রান করছি না। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে না যে, আমার ব্যাটে লাগছে না বা এটা হচ্ছে না। আমি আউট হয়ে যাচ্ছি দ্রুত। যদিও আমার যে খেলার ধরন ওইটা রাখার চেষ্টা করছি। ওইটা থেকে যেন না বের হই, তখন নিজের ক্ষতি হবে। চেষ্টা করছি আমার ইন্টেন্ট এর ভেতরে থাকি। যদি হয়, আমার এইভাবেই হবে।’
মনেপ্রাণে সৌম্য চাইছেন, বিশ্বকাপে ভালো কিছু উপহার দিতে। তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করছি, যেহেতু প্রিমিয়ার লিগ খারাপ হয়েছে, ওখানে গিয়ে যেন জিনিসটা খারাপ না হয়। একটা ভালো কিছু করতে পারি। এবং সবাই যেন সেটা অনেক ভালোভাবে নেয়। ভালো কিছু হয় এবং ভালো কিছু উপহার দিতে পারি।’
আক্রমণাত্মক ব্যাটিংই মানসিক স্বস্তি এনে দেয় সৌম্যকে। তার চাওয়া, রান যাই হোক, তা যেন দলের কাজে লাগে। বোলিংয়েও দলের প্রয়োজন মেটাতে প্রস্তুত তিনি। অবশ্য ৪১ ওয়ানডেতে দুটি সেঞ্চুরি করা সৌম্যর কাছে বিশ্বকাপের মঞ্চে ব্যাটিংয়েই বড়ো সার্ভিসটা চাইবে বাংলাদেশ।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/২১ এপ্রিল ২০১৯/এমএম