প্রকৌশলী আব্দুল্লা রফিক, ক্যালগেরি, কানাডা :: বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে আলোচনা করলেই প্রথমেই চলে আসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ( বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশও বটে, আমেরিকা) l পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জিডিপি – প্রায় ২২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার আরো একটু গভীরে গেলে বলতে হয় বাইশ লক্ষ কোটি ডলার, বাংলাদেশী টাকায় আর নাই বললাম, ইউ এস ডলার থেকে বাংলাদেশী টাকায় কনভার্ট করলে যে অংক আসে তা মাথায় ঢুকবে না l পুরো পৃথিবীর জি ডি পি ‘র পরিমান প্রায় ৯১ ট্রিলিয়ন ডলার মানে ৯১ লক্ষ কোটি ডলার l তার মানে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি (GDP) সারা পৃথিবীর জি ডি পি’র ২৪ শতাংশের একটু বেশী l পৃথিবীর জনসংখ্যার শতকরা ৫ শতাংশ এর কম জনসংখা নিয়ে গঠিত ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা (USA) ) পৃথিবীর ২০ শতাংশের বেশী আয় করে, অর্থাৎ সারা পৃথিবীর বাণিজ্য আমেরিকার সংগে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত l আমেরিকার অর্থনীতি ক্ষতির
মুখে পড়া মানে সারা পৃথিবীর অর্থনীতি ক্ষতির সম্মুখীন হবে l করোনার কারণে ২০২০ সালের প্রথম কোয়াটারে (জানুয়ারী – মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের
অর্থনীতি ৪.৮ শতাংশ সংকোচন হয়েছে যা ২০১৯ সালে একই সময়ে ২.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল l ২০২০ সালের দ্বিতীয় কোয়াটারে হয়তো আরো খারাপ হবে যা
সহজেই অনুমান যোগ্য l
আমেরিকার অর্থনীতির চক্রে ফেডারেল রিজার্ভ বা সেন্ট্রাল ব্যাংক (Federal Reserve) খুবই শক্তিশালী ভূমিকা রাখে, অত্যন্ত নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে
পারে l যেমন উদাহরণ স্বরূপ কিছুদিন আগে আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেট্রাল ব্যাংক (central bank) এর ইন্টারেস্ট রেট কমানো
নিয়ে একটি মন্তব্য করলে ফেডারেল রিজার্ভ পরিষ্কার ভাষায় বলে,’ তারা অর্থনীতি নিয়ে কাজ করার জন্য যথেষ্ট যোগ্যতা রাখে, কারো পরামর্শের দরকার
নাই’ l আবার এই ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার মনোনীত একজনকে ফেডারেল রিজার্ভ এর মেম্বার নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে যদিও সিনেটের অনুমোদনের
জন্য গেলে যোগ্যতার প্রশ্নে তা বাতিল হয়ে যায় l ফেডারেল রিজার্ভ এর বর্তমান চেয়ারম্যান জেরোমি পাওয়েল l
বর্তমান ফেড এর চেয়ারম্যান জেরোমি পাওয়েল এর মতে করোনার কারণে আমেরিকার অর্থনীতি দ্বিতীয় কোয়াটারে অনেক বেশি সংকুচিত হতে পারে যেটা সর্বোচ্চ
৩০ শতাংশ পর্যন্তও হতে পারে l তবে সে আশার বাণী শুনান যে – অর্থনীতি দীর্ঘ মেয়াদি মন্দার সম্মুখীন হবে না, দ্বিতীয় ও চতুর্থ কোয়াটারে
অর্থনীতি প্রবৃদ্ধির মুখ দেখবে তার আশাবাদ l আমেরিকার বেকারত্ব ১৯৩০ সালের মন্দাকেও ছেড়ে যাবে যেটা শতকরা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত উঠতে পারে l
বর্তমানে প্রায় ৪ কোটি কর্মজীবী মানুষ বেকার ভাতার জন্য আবেদন করেছে l
করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতে ২ ট্রিলিয়ন ডলার প্রণোদনা অনুমোদন করেছিল, যা দিয়ে পরিকল্পনা মোতাবেক সরাসরি আমেরিকানদের দেয়ার ছিলো, এবং স্বাস্থ
খাত উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীদের দেয়ার কথা ছিল ! তখন মার্কিন প্রশাসন ধারণাও করতে পারেনি করোনার ভয়াবহতা এবং এর ফলে অর্থনীতি কতটা
ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে l আর তাই ওই কংগ্রেস অনুমোদিত ২ ট্রিলিয়ন ডলার খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায় — লক ডাউন এর ফলে l ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান একের পর এক
বন্ধ হতে থাকে, বেকারত্বের হার দ্রুত বাড়তে থাকে এবং সে কারণেই ফেডারেল রিজার্ভ এবং কংগ্রেস আরো ৩ ট্রিলিয়ন প্রণোদনা প্যাকেজ পুরো
অনুমোদনের অপেক্ষায় l প্রদেশগুলো এবং কেন্দ্র শাসিত টেরিটরিগুলো অর্থনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হওয়ার পথে লক ডাউন এর ফলে, তারাও ফেডারেল
গভর্নমেন্ট কাছে আরো প্রণোদনা আবেদন করছে l
সরকার বড় ধরণের বাজেট ডেফিসিট এ পরে এবং ক্যাশ ফ্লো ঠিক রাখার জন্য মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় ব্যাংক এবং প্রাইভেট উৎস থেকে থেকে ৩ ট্রিলিয়ন
ডলার ঋণ গ্রহণ করার পরিকল্পনা করে যা দিয়ে এপ্রিল, মে এবং জুন এই তিন মাস চলবে l আবার জুলাই – সেপ্টেম্বরের জন্য ৬৭৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণের
পরিকল্পনা করছে l ১৯৩০ সালের মহামন্দার পর আমেরিকা আর কখনো এতো বড় মন্দার কবলে পড়েনি l
ফেডারেল গভর্নমেন্টের ( সরকারি কোষাগার ) ঋণের পরিমান অস্বাভাবিক পরিমান বেড়ে গেলেও ফেডারেল রিজার্ভ বা আমেরিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি
কোষাগারের এই ঋণ গ্রহণ করে ঋণের খরচ কমিয়ে রাখছে, লিমিট ছাড়া ফেডারেল বন্ড কিনছে l বর্তমান ফেড চেয়ারম্যান জেরোমি পাওয়েল ব্যপক পরিমান
কেন্দ্রীয় সরকারের ঋণ গ্রহণের বিপক্ষে ছিলো কিন্তূ তার মতে এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার জন্য আমেরিকার অর্থনীতির শক্তিশালী
কাঠামোকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ব্যবহার করার এখনই সময় l মার্কিন অর্থনীতি অলরেডি অনেক সূচকের লাল বাতি অতিক্রম করেছে l
বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা (USA) বা যুক্তরাষ্ট্র করোনার কারণে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ l বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর অস্থিরতায় আমেরিকার অর্থনীতির ক্ষতিগ্রস্থ চেহারা বোঝা যায় l বর্তমান অবস্থায় অর্থনীতি লক ডাউন কে আর নিতে পারছে না, আর সে জন্যই প্রেসিডেন্ট সবকিছু খুলে দেয়ার পক্ষে ! অর্থনীতিকে সচল রাখতে আর কোনো বিকল্প নেই l
অদৃশ্য শক্তি করোনা সারা পৃথিবীর অবস্থা তছনছ করে ফেলেছে l মনে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের নিচে পরে আছে l সারা বিশ্ব এই স্তূপ
থেকে বের হয়ে আলোর মুখ দেখার চেষ্টায় রত, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর পুঁজিবাদের উত্থান এতোটা হুমকির মুখে পরে নাই l পুঁজিবাদতন্ত্রের বিকাশে
মুক্তবাজার অর্থনীতি বিশ্বকে উন্নয়নের এক অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে বলেই মনে হচ্ছিলো এবং বারংবার এক শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামোর কথাই জানান
দিচ্ছিলো
কিন্তূ সত্যিকার অর্থে বিশ্ব মুক্তবাজার অর্থনীতি করোনার মত মহামারীর কবলে পরে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে কিনা নতুন করে ভাবনার সময় এসে গেছে ?
চলবে……!
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ৩১ মে ২০২০/এমএম





