Menu

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলোর বেশিরভাগই জামিন হয়ে আছে
• তিনটি মামলার জামিন বাকি আছে
• নতুন মানহানির মামলায় গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে

খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্ত করতে বিএনপি সরকারের সঙ্গে গোপনে সমঝোতার চেষ্টা করছে এবং এর বিনিময়ে দলটি সংসদে যোগদান করবে বলে যে আলোচনা বা গুঞ্জন চলছে, সেটাকে নাকচ করে দিয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। তাঁদের দাবি, দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের এই পর্যায়ে সরকার খালেদা জিয়ার বিষয়ে নতুন কূটকৌশল করছে। যার ফলে সম্প্রতি এই আলোচনাকে সামনে আনা হয়েছে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের কারামুক্তির ব্যাপারে তাঁরা এখনো আইনি পথের ওপরই ভরসা রাখছেন। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলোর মধ্যে অধিকাংশেরই জামিন হয়ে আছে। যে তিনটি মামলার জামিন বাকি আছে, তার মধ্যে একটির আজ রোববার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ধার্য আছে। এর বাইরে নতুন একটি মানহানির মামলায় গত সপ্তাহে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, যেটাকে জামিনযোগ্য সাধারণ মামলা বলছেন আইনজীবীরা।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, কিছুদিন ধরে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির (নির্বাহী আদেশে মুক্তি) জন্য সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হচ্ছে বলে যে প্রচার চলছে, সেটা ঠিক নয়। খালেদা জিয়ারও এমন সমঝোতার ব্যাপারে কোনো আগ্রহ নেই। তবে তিনি যাতে জামিন পেয়ে সুচিকিৎসার সুযোগ পান, সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে কিছু চেষ্টা–তদবির আছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল শনিবার খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট নৌ থানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘প্যারোল পেতে হলে তাঁকে (খালেদা জিয়া) একটি সুনির্দিষ্ট কারণ দর্শিয়ে আমাদের কাছে আবেদন করতে হবে। আবেদন করলে আমরা তখন চিন্তা করব।’

এই বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তো প্যারোল চাইনি। এ ধরনের সিদ্ধান্তও আমাদের নেই। আমরা মনে করি, এসব মামলায় উনি এমনিতে জামিন প্রাপ্য।’

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতাদের মতে, দুটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া এক বছরের বেশি সময় কারাগারে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে থাকা অন্য মামলাগুলো যে অবস্থায় আছে, তাতে আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়া দ্রুত জামিন পেতে পারেন। কিন্তু তাঁর কারাবাস দীর্ঘায়িত করার জন্য সরকার আইনের মারপ্যাঁচকে ব্যবহার করছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্যারোলে মুক্তি ও সরকারের সঙ্গে গোপন সমঝোতার কথা সামনে এসেছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরাও মনে করেন, প্যারোলে মুক্তিতে সরকারের একটা অনুকম্পার বিষয় থাকে। এমন মুক্তিতে হেনস্তা করার সুযোগ আছে।

খালেদা জিয়ার পরিবারের ঘনিষ্ঠজন ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়ার জন্য প্যারোল বা কোনো ধরনের সমঝোতায় আমরা বিশ্বাসী নই। দেশে যদি আইনের শাসনের সামান্যতম অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তিনি আইনি প্রক্রিয়ায়ই জামিন পাবেন। তাঁকে আটকে রাখাটাই অমানবিক।’

আইনজীবীদের কাছ থেকে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এখন ৩৩টির মতো মামলা আছে। এর মধ্যে দণ্ড হওয়া দুই মামলা জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুনীতির মামলার আপিল ও জামিন আবেদন উচ্চ আদালতে আছে। একটি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রলবোমা হামলা মামলায় হাইকোর্ট গত বছরের অক্টোবরে খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছিলেন। এর বিরুদ্ধে সরকার আপিল করে। আপিল বিভাগ জামিন বহাল রেখে জজ আদালতের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আসতে বলেন। পরবর্তী সময়ে জজ আদালত জামিন নামঞ্জুর করলে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট গত ৭ মার্চ এই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করলে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার জজ আদালত তা স্থগিত করেন। এ নিয়ে আজ আপিল বিভাগে শুনানির দিন ধার্য আছে।

খালেদা জিয়ার একজন আইনজীবী জানান, এর মধ্যে গত মাসে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মানহানির আরেকটি মামলা হয়। কুমিল্লার মামলায় হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করার পর মানহানির ওই নতুন মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের অন্যতম কায়সার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, দেশে যদি আইনের শাসন কার্যকর এবং সাংবিধানিক অধিকারগুলো সমুন্নত থাকত, তাহলে হাইকোর্ট গত বছরের ১২ মার্চ যখন জামিন দিয়েছিলেন, তখনই খালেদা জিয়া বের হতে পারতেন। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তখন সরকারের রাজনৈতিক বিবেচনা খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এখনো তাঁর কারাবাসকে দীর্ঘায়িত করতে কূটকৌশল প্রয়োগ করা হচ্ছে।


Array

এই বিভাগের আরও সংবাদ