আহমেদ শাহীন :: ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু’র মতো আরও অনেক রূপান্তরিত ভাইরাস সংক্রমণ ও মহামারী সামনে আসতে পারে। সেইএপিডেমিক বা প্যান্ডেমিকের কারণে লাখো মানুষ মারা যেতে পারে। সুতরাং পৃথিবীর সব দেশকে সংঘবদ্ধভাবে তা মোকাবেলাকরার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কোনো অঞ্চল বা দেশে ভাইরাস সংক্রমণ দেখা দিলে তা ওই অঞ্চল বা দেশে সীমাবদ্ধ থাকবেনা। কারণ প্রতিদিন ৩০ লাখ এবং বছরে ৩০০ কোটি লোক এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়, এক দেশ থেকে অন্য দেশ, একমহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে ভ্রমণ করছে। কভিড ১৯ ঠিক এ কারণেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে এখনোকোনো কার্যকর ওষুধ বা ভ্যাকসিন নেই। ভাইরাসের গঠন ও চরিত্র বোঝা না গেলে ওষুধ বা ভ্যাকসিন উদ্ভাবনও সম্ভব নয়।লকডাউন বা যাতায়ত ব্যবস্থা বন্ধ করে বা বর্ডার ক্লোজ করে দিয়ে কভিড ১৯ ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু ভবিষ্যতে আপনিকতবার লকডাউন, যাতায়াত নেটওয়ার্ক বন্ধ, কারফিউ জারি বা বর্ডার ক্লোজ করে পার পাবেন? আর মহামারী দেখা দিলেশতসহস্র রোগী সামলানোর ক্ষমতা কী আমাদের আছে, না আমেরিকার আছে? করোনা সবাইকে বুঝিয়ে দিল- তাকে মোকাবেলাকরার সাধ্য আমাদের কারোই নেই। আর ধ্বংসপ্রাপ্ত অর্থনীতির কারণে সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট, ভোগান্তি ও কোলেটারাল মৃত্যুকীভাবে ঠেকাবেন?
তাহলে উপায়? উপায় বের করার দায়িত্ব চিকিৎসা বিজ্ঞান, ধনী-দরিদ্র দেশ, নীতিনির্ধারক ও সাহায্যকারীসংস্থাগুলোর। দরকার সমন্বিত প্রচেষ্টার। দরকার বিশ্বব্যাপী পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যসেবক তৈরি, ভাইরাস শনাক্তকরণেসাজসরঞ্জাম, দরকার পর্যাপ্ত হাসপাতাল, ক্লিনিক স্থাপন ও চিকিৎসাসেবা উন্নয়নকল্পে ওষুধ বা ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে বিলিয়নবিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ। কভিড ১৯ কোথায় গিয়ে থামবে তা এখনো অজানা। জেনেটিক মডিফিকেশনের মাধ্যমে কভিডেরচেয়েও ভয়ংকর ভাইরাস সামনে আসবে এ ব্যাপার নিশ্চিত থাকতে পারেন। তখন কী হবে? তাই এখন থেকেই তা নিয়েভাবনাচিন্তা করা ও সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার। তাতে যত দেরি হবে, তত বড় খেসারত আমাদের দিতে হবে।
কভিড ১৯ সারা বিশ্বের ভিত কাঁপিয়া দিয়েছে। কিছু দেশের অবস্থা অবর্ণনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। মৃত্যুহার প্রতিদিন বাড়ছে।কভিড ১৯ এর তান্ডব কবে থামবে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। সারা বিশ্বে বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দা আসছে।আজ শুনলাম- যুক্তরাষ্ট্রে এ বছরের প্রথম কোয়ার্টারে জিডিপি ২৪ শতাংশ কমার সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যদি এ অবস্থা হয়তাহলে অন্যসব দেশের কী হবে তা সহজে অনুমেয়। তবে আজ এটা আমার লেখার বিষয়বস্তু নয়। আমি ভাবছি- কভিড ১৯ এরতান্ডব আজ হোক কাল হোক থেমে যাবে। কিন্তু তারপর কী হবে? আমরা কী অন্যসব আরও ধ্বংসাত্মক রূপান্তরিত ভাইরাস বাসংক্রামক রোগ থেকে নিরাপদ হয়ে যাব? না।
গত ৩৭ বছরে বিশ্বে ৩৯ নতুন সংক্রামক রোগের উৎপত্তি হয়েছে এবং সেগুলোভয়ংকর রুপে আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এইডস, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, ইবোলা, মারস, সারস, মারবার্গ, ডেগু, চিকুনগুনিয়া, নিপাহ, জিকা, কভিড ১৯ ইত্যাদি। এসব কথা লেখার এখন সময় নয়। অনেকেই মনে করতেপারেন- মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা কেন দিচ্ছেন। লিখছি আগাম সতর্কসংকেত জানানোর জন্য। কভিড ১৯ এর জন্য আমাদেরমতো পৃথিবীর বহু দেশ প্রস্তুত ছিল না। তাই এই ক্যাটাস্ট্রপিটা আমাদের দেখতে হচ্ছে।কভিড ১৯ কে নিয়ে যদি আগ থেকে ভাবাহতো, প্রথম থেকে চিনের মতো সিরিয়াসলি নেয়া হতো, তাহলে বিশ্বব্যাপী এত মৃত্যু আমাদের দেখতে হতো না। আমরা যদি সতর্ক না হই, পৃথীবিতে আমাদের অস্তিত্ব একদিন হুমকির সম্মুখীন হবে সন্দেহ নাই।
(লেখক: কানাডার ক্যালগেরির টমবেকার ক্যানসার সেন্টারের এর ক্লিনিক্যাল রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর ।)
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ১০ মে ২০২০/এমএম





