বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: আবারও রেলের যাত্রী পরিবহন ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণের শর্তে এ ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে খোদ রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ে বিভাগে ভিন্ন ভিন্ন মতে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য- ভাড়া বাড়িয়ে রেলের লাগাতার লোকসান কমানো সম্ভব নয়, যদি না মালামাল পরিবহন ও রেলের খালি জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসা না করা যায়। এর আগে ২০১২ ও ২০১৬ সালে দুইবার রেলের যাত্রী পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাতে লোকসানের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, দিন দিন রেলওয়েতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। একই সঙ্গে যাত্রীবান্ধব বিভিন্ন নতুন প্রকল্পও গ্রহণ করা হচ্ছে। ফলে রেলওয়ের যেমন সক্ষমতা বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে যাত্রীসেবাও।
এডিবির ঋণ শর্ত অনুযায়ী রেলে ভাড়া বৃদ্ধির কথা রয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। ইতিমধ্যে রেলের ভাড়া বাড়ানো সংক্রান্ত একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এডিবির ঋণচুক্তির শর্তানুযায়ী ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ৮.৩৩ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। ওই ঋণচুক্তির শর্তানুযায়ী স্থায়ী ট্যারিফ পদ্ধতি চূড়ান্তকরণ করে এডিবি।
শর্ত অনুযায়ী, প্রতি বছর যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নেয়া হয়। ইতিমধ্যে তৃতীয়বারের মতো ভাড়া বৃদ্ধি করতে একটি খসড়া প্রস্তাবনা তৈরিও করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অস্থায়ী প্রস্তাবনায় ট্রেন ও দূরত্ব অনুযায়ী গড়ে ২৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে। ফলে রেলের কিলোমিটার প্রতি ভিত্তি ভাড়া ৩৯ পয়সা থেকে বেড়ে হবে ৪৯ পয়সা হবে। প্রাথমিক প্রস্তাবনা অনুযায়ী শোভন চেয়ারে ভাড়া ২২ থেকে ৪৭, এসি চেয়ারের ভাড়া ৩৯ থেকে ৬৪ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাবনা করা হয়েছে।
একই সঙ্গে পণ্য পরিবহনের ভাড়া, কনটেইনার ও পার্সেল পরিবহন মাশুল বাড়ানোর প্রাথমিক প্রস্তাবনাও তৈরি করেছে রেলওয়ে। প্রাথমিক প্রস্তাবনায় বলা হয়, বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক মেটেরিয়াল, অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় রেলওয়ের ভাড়া বাড়ানো প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের সংস্কার প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসি (প্রাইস ওয়াটারহাউস কুপারস) প্রণীত ট্যারিফ স্ট্রাকচারের মতে, বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালন ব্যয় যত বাড়বে আনুপাতিক হারে ভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্যও করতে হবে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ জানান, উপযুক্ত পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী এবং জনগণের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ একটি বাহন হচ্ছে ট্রেন। এ কারণে রেল সব সময় অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা থাকলেও এ খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্টরা ঠিকমতো মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি করায় রেল লোকসান ঘুচাতে পারছে না। রেলে ভাড়া বাড়ানো মানেই সাধারণ মানুষের ওপর বোঝা চাপানো।
এ বিষয়ে রেলওয়ে ট্রাফিক বিভাগের পরিচালক মাহবুবুর রহমান জানান, রেলে ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাবনার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়। চূড়ান্ত খসড়া কিংবা প্রস্তাবনা হলেই কেবল বলা যায়, ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে চূড়ান্তভাবে আগানো হচ্ছে। বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কাজী রফিকুল আলম যুগান্তরকে বলেন, ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে ইতিমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত প্রস্তাবনা দেবে। প্রস্তাবনা যদি রেলপথমন্ত্রী গ্রহণ করেন, তাহলে আমরা আরও এগিয়ে যাব।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/২২ মার্চ ২০১৯/ইএন