বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: ষাট-সত্তর বছর আগেও আমাদের দেশের নারীর জীবন ছিল খুবই সাধারণ। সংসার আর সন্তান প্রতিপালনই ছিল তখন তাদের প্রধান কাজ। এর মধ্যে অল্পসংখ্যক নারী উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পেলেও চাকরি বা পেশায় নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ ছিল খুবই সীমিত। আজকের ২০২০ সালে এসে নারীর জীবনযাত্রা পুরোটাই বদলে গেছে। নারী এখন আধুনিক, উপার্জনশীল ও নীতিনির্ধারক।
আজ এমন কোনো পেশা নেই যেখানে নারীর অংশগ্রহণ নেই। বিমান চালনা থেকে বিজনেস, ব্যাংকের হিসাব থেকে সংবাদের পাতা, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির পরিচালক কিংবা শোবিজের বিশাল জগৎ সব জায়গায় আজকের নারীর অবাধ পদচারণা।
ফ্যাশন, রূপচর্চা, সাজসজ্জা এমনকি রান্নার মতো বিষয়ও আজ নারীর জন্য তৈরি করেছে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সুযোগ। প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী কাজ করছে এবং সাফল্য অর্জন করছে। শুধু তাই নয়- দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন অঙ্গনেও ধীরে ধীরে বাড়ছে এ দেশের নারীদের অংশগ্রহণ। অর্থনীতি, রাষ্ট্র ও সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে। যোগ হচ্ছে নতুন সমীকরণ।
কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করলেও বাংলার নারীরা কিন্তু তার চিরকালীন ভূমিকা থেকে সরে আসেনি। এখনও সে মা-স্ত্রী, আবার একই সঙ্গে কর্মজীবী নারী। ফলে ঘরে-বাইরে দু-ই সামাল দিতে গিয়ে মহাব্যস্ততায় কাটে কর্মজীবী নারীদের প্রতিটি মুহূর্ত। তবে শত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের জন্য কিছুটা সময় রাখতে হবে। কারণ আপনি ভালো থাকলেই ভালো থাকবে আপনার পরিবার। আর ভালো থাকতে বা নিজের জন্য সময় বের করতে কর্মজীবী নারীরা কিছু সহজ সমীকরণ মেনে চলুন-
সময় বাঁচাতে
কর্মজীবী নারীরা দৈনন্দিন কাজকে সহজ করার জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করুন। এতে নিজের জন্য সময় বের করা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। কাজ সহজ করতে প্রথমেই কাজের প্রায়োরিটি লিস্ট তৈরি করুন। কাজগুলো দৈনিক, সাপ্তাহিক এবং মাসিক হিসেবে ভাগ করে নিন। রান্না চড়িয়ে সেরে ফেলুন ঘরের টুকিটাকি কাজ। রান্নার কাজ সহজ করতে বিভিন্ন ধরনের গেজেট ব্যবহার করতে পারেন। এতে অনেকটা সময় বাঁচবে।
পরিবার হোক সাহায্যকারী
বাইরের কাজ করলেও কর্মজীবী নারীদের ঘরের কাজও করতে হয়। অনেক পরিবারে স্বামী-সন্তানের স্ত্রী বা মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করলেও অধিকাংশ পরিবারেই এটি দেখা যায় না। এতে ঘরে-বাইরে সামাল দেয়া গেলেও নারীর নিজের জন্য অবসর থাকে না। তাই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই ঘরের টুকিটুকি কাজে অভ্যস্ত করুন। পাশাপাশি আপনার জীবনসঙ্গীর সঙ্গে এমনভাবে সম্পর্ক গড়ে তুলুন যাতে তিনি ঘরের কাজের সময় আপনাকে সঙ্গ দেয়। প্রয়োজনে তাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে সহযোগিতা করতে বলেন। দু’জনে মিলে ছোট ছোট কাজগুলো ভাগ করে নিলে আপনার জন্য তা অনেক বড় সহায়তা হবে।
দায়িত্ব সম্পন্ন হোন
ঘরে এবং বাইরের কাজের মধ্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলবেন না। ঘরের এবং বাইরের কাজ দুটিতেই দায়িত্ববোধের পরিচয় দিন। যখন ঘরের কাজ করবেন তখন শুধু সেটিকেই প্রায়োরিটি দিন। ঘরে ফিরে অফিসের কাজ বা অফিসের বিষয় নিয়ে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া মাথা ঘামাবেন না। আবার অফিসে থাকবেন যখন তখন শুধু অফিসের কাজকেই গুরুত্ব দিন।
নিজেকে ভালোবাসুন
কর্মজীবী নারীদের মানসিক চাপ এবং ব্যস্ততায় কাটে প্রতিটি মুহূর্ত। সবদিক সামলাতে গিয়ে নারী নিজের প্রতিই হয়ে ওঠেন সবচেয়ে অমনোযোগী। অথচ মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে নারীদের নিজের প্রতি যত্নবান হওয়া খুব জরুরি। তাই নিজেকে ভালোবাসুন। শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজের জন্য কিছুটা সময় রাখুন। জীবনটাকে উপভোগ করুন। ছুটির দিনে পরিবারের সদস্য কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে কাছে-দূরে কোথাও বেরিয়ে আসুন, পছন্দের সিনেমা দেখুন, প্রিয় লেখকের বই পড়ুন, গান শুনুন কিংবা পছন্দমতো অন্যকিছু করুন। এতে কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও আপনি থাকবেন ফুরফুরে।
পরিপাটি থাকুন
শত ব্যস্ততার মধ্যেও ত্বক, চুল ভালো রাখতে এবং পরিপাটি থাকতে চেষ্টা করুন। চেষ্টা করুন মাসে দু-একবার পার্লারে যেতে। ঘরে ঝটপট করা যায় এমন ধরনের রূপচর্চা করুন। কোথাও যাওয়ার আগে অল্প সময়ে হালকা সাজে নিজেকে গুছিয়ে বের হউন। প্রয়োজনে ব্যাগেই টুকিটাকি সাজগোজের কিছু জিনিস রেখে দিন, যাতে অফিস থেকে হালকা সেজে বেরিয়ে যেতে পারেন।
খাদ্যাভ্যাসে সচেতন হোন
গৃহিণী এবং কর্মজীবী নারীদের অনেকেই ব্যস্ততার কারণে নিজের খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেন না, যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সুস্থ থাকতে পরিবারের সদস্যদের খাবার-দাবারের পাশাপাশি নিজের খাবারের ব্যাপারে সচেতন হোন। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন। সকালে শত তাড়াহুড়া থাকলেও নাস্তা খাওয়া বাদ দিবেন না। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় আমিষ এবং ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার রাখুন। রাতে হালকা খাবার খান। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
শরীরচর্চা করুন
শরীরচর্চা প্রয়োজন গৃহিণী এবং কর্মজীবী নারী সবার জন্যই। কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও কিছুটা সময় বের করুন শরীরচর্চার জন্য। কর্মজীবী নারীরা চাইলে কাজের মধ্যেই সেরে ফেলতে পারেন ব্যায়াম। অফিসে লিফট থাকলেও সব সময় লিফটে না উঠে চার-পাঁচতলা পর্যন্ত হেঁটেই উঠুন। অফিস থেকে ফেরার পথে কিছুটা পথ হেঁটেই আসুন। অফিসে একনাগাড়ে বসে না থেকে মাঝে মধ্যে উঠে একটু হাঁটাহাঁটি করুন। কাজের ফাঁকে এ ধরনের শরীরচর্চা আপনাকে রাখবে ফিট।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ০৩ মার্চ ২০২০ /এমএম





