বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: অর্থমন্ত্রীর দৃঢ় অবস্থানের পরও খেলাপি ঋণ আদায়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না। ব্যাংকিং খাতে আদায় অযোগ্য খেলাপি বা কুঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮০ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকায়।
গত এক বছরে এ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১৬ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। আর ঋণ অবলোপন করা হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এর ফলে দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত। জানা গেছে, মাত্রাতিরিক্ত কুঋণের কারণে প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে ১৫টি ব্যাংক।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির নাম প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকেরই রয়েছে চার খেলাপি প্রতিষ্ঠান। বস্তুত খেলাপি ঋণ বাড়লে প্রভিশন ঘাটতি বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।
এর সঙ্গে বাড়বে ঋণ অবলোপনের পরিমাণও। কাজেই খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরা অত্যন্ত জরুরি। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এরপরও সম্প্রতি অবলোপন নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। আগে যে ঋণ ৫ বছর পর অবলোপন করার নিয়ম ছিল, বর্তমানে তা কমিয়ে ৩ বছর করা হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এর ফলে বড় ঋণখেলাপিরা সহজে আড়ালে চলে যাবেন। এমনটি মোটেই কাম্য নয়।
দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ব্যাংকের টাকা জনগণের টাকা, এ টাকা নিলে ফেরত দিতে হবে। সরকারি বা বেসরকারি যে ব্যাংক থেকেই ঋণ নেয়া হোক না কেন, ঋণের অর্থ ফেরত দিতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে তিনি যেসব সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে দ্রুত ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করা হবে। এ আইনের সব ধারা ও উপধারার দুর্বলতা শনাক্ত করে এতে সংশোধনী আনা হবে। এছাড়া ইতিপূর্বে অবলোপন করা ঋণ পর্যালোচনা করতে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন করার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কেন ও কী কারণে ঋণখেলাপি হয়েছে এবং তা অবলোপন করা হয়েছে এবং এর পেছনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পৃক্ততা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখবে এ কমিটি। অর্থমন্ত্রীর এসব সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।
বিগত সময়ে দেখা গেছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ঋণ পুনঃতফসিল, ঋণ অবলোপন ইত্যাদির মাধ্যমে ঋণখেলাপির দায় থেকে মুক্ত থেকেছেন। কিন্তু এর মাধ্যমে খেলাপি ঋণ সমস্যার স্থায়ী সমাধান আসেনি, বরং তা ঋণ আদায় প্রক্রিয়াকে আরও প্রলম্বিত করেছে। তাই খেলাপি ঋণসহ ব্যাংকিং খাতের সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানের পদক্ষেপ নেয়া দরকার। সমাধানটি এমন হওয়া উচিত যাতে ঋণখেলাপিরা যত বড় প্রভাবশালীই হোন, তাদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি নিশ্চিত হবে।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/১৫ মার্চ ২০১৯/ইএন