Menu

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: চীনের উহান প্রদেশ থেকে ১ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর বিমানে ৩১২ বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। তাদের মাধ্যমে যাতে অন্য কেউ সংক্রমিত হতে না পারে সেজন্য সবাইকে আশকোনায় হজ ক্যাম্পে আইসোলেশনে ১৪ দিনের জন্য রাখা হয়েছে। ৩১২ জনের মধ্যে সাতজনের গায়ে সামান্য জ্বর থাকায় তাদের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাদের শরীরে করোনাভাইরাস নেগেটিভ।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন পর্যন্ত একজনও করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত করা হয়নি। এদিকে উহানে আরও ১৭১ বাংলাদেশি আটকা পড়ে আছেন। তারা দেশে ফিরতেও চাচ্ছেন। কিন্তু সরকারিভাবে তাদের ফিরিয়ে আনা এ মুহূর্তে সম্ভব হচ্ছে না নানা কারণে। এর মধ্যে অন্যতম হল সেদেশে পাঠানো বিমানের পাইলটদের বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা। এতে করে দেশের পাইলটদের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন। বিমানের পাইলটরাও এ মুহূর্তে চীনে যেতে আগ্রহী নন।

এখন পর্যন্ত চীনসহ বিশ্বের ২৬টি দেশে করোনাভাইরাসের জীবাণু প্রবেশ করেছে। ২০ হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪৯০ জন ইতিমধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন। চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত ফিলিপাইন ও হংকংয়ে দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও ইতিমধ্যে করোনাভাইরাস নিয়ে জরুরি সতর্কতা জারি করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, যদিও দেশে এ ভাইরাস এখনও আসেনি; কিন্তু তা প্রতিরোধ করতে বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত?

৩১ জানুয়ারি বিকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক করোনাভাইরাস নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভাইরাসটি প্রতিরোধে বাংলাদেশের উদ্যোগগুলো তুলে ধরেছেন। একইসঙ্গে চীনে আক্রান্ত উহান প্রদেশের ৩১২ বাংলাদেশি নাগরিককে নিজস্ব অর্থায়নে ফিরিয়ে আনার কথা জানিয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ব্রিফিংকালে দেশের সব বন্দর ও বিমানবন্দরে জরুরি স্ক্যান মেশিন বসানোসহ সব ধরনের পদক্ষেপ তুলে ধরেন। জরুরি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, করোনাভাইরাসের তথ্য গাইডবই বিমানবন্দরের সব যাত্রীকে প্রদানের উদ্যোগ থেকে জরুরি চারটি হটলাইন (০১৯৩৭-০০০০১১/০১৯৩১১-৭১১০০১১/ ০১৯২৭-৭১১৭৮৪/ ০১৯২৭-৭১১৭৮৫) সার্বক্ষণিক খোলা রাখার কথা জানান।

পরবর্তী সময়ে উহান থেকে ৩১২ বাংলাদেশি নাগরিককে উত্তরার আশকোনার হজ ক্যাম্পে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেনটাইন করে বর্তমানে সেইফ জোনে রাখা হয়েছে। আশার কথা, এখন পর্যন্ত একজনও বাংলাদেশির শরীরে করোনাভাইরাসের জীবাণু পাওয়া যায়নি। দেশের মানুষকে করোনাভাইরাস নিয়ে সর্বদা আপডেট তথ্য জানাতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সার্বক্ষণিক আশকোনা হজ ক্যাম্পে একটি এবং বিমানবন্দরে অন্য একটি মিডিয়া সেন্টার খুলে দিয়েছেন।

প্রতিদিনই সেখান থেকে দেশবাসী আপডেট তথ্য জানতে পারছেন। সর্বশেষ, ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে নির্ধারিত কেবিনেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে করণীয় কিছু সতর্কতামূলক নির্দেশনা প্রদান করেছেন, যাতে করে এ ভাইরাস দেশে আসতে না পারে। নির্দেশনা অনুযায়ী চীন থেকে আগত যে কোনো ব্যক্তিকে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

দেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই স্বাস্থ্য খাতের সংশ্লিষ্ট সব শাখায় নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আপডেট তথ্য জানাচ্ছেন। পাশাপাশি দেশের সর্বত্রই সতর্ক ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চীন থেকে আগত সব যাত্রীকে বিশেষভাবে স্ক্যানিংসহ সামান্য সন্দেহেও ১৪ দিনের কোয়ারেনটাইন ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যে কোনো সময় যে কোনো স্থানে করোনাভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে বিশেষভাবে নির্ধারিত হাসপাতালে আইসোলেটেডে রাখা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সার্বক্ষণিক হটলাইন সেবা এবং প্রতিদিনের আপডেট তথ্য প্রদানের বিশেষ উদ্যোগ তো রয়েছেই। সবশেষে এটুকুই বলা যায়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যতটা সচেতনতা ও করণীয় উদ্যোগ রাখা প্রয়োজন, দেশের স্বাস্থ্যখাত ততটাই প্রস্তুত রয়েছে।মো. মাইদুল ইসলাম প্রধান : তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ /এমএম


Array