বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: কওমি মাদ্রাসা, হেফাজতে ইসলাম ও আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে নিযে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের সংসদে দেয়া সাম্প্রতিক বক্তব্যকে ‘ধৃষ্টতা’ আখ্যায়িত করে তা এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা-৬ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ।
রোববার (১০ মার্চ) সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন দাবি জানান জাতীয় পার্টির এ সাংসদ।
ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্য, যিনি আগে মন্ত্রী ছিলেন, এই সংসদে ধান ভানতে শিবের গীত গেয়েছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। কওমি মাদ্রাসা নিয়ে তিনি অনেক বেহুদা কথা বলেছেন। কওমি মাদ্রাসা নাকি একটা বিষবৃক্ষ! অথচ এই সংসদে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা দাওরায়ে হাদিসের স্বীকৃতি দিতে সর্বসম্মতক্রমে আইন পাস করেছি।
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা সবাই মিলে এ সংসদে তা করেছি। এটা তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। এটা একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এজন্য সব কওমি মাদ্রাসার পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দনও জানানো হয়েছে। এখানে তো কোনও মোল্লাতন্ত্র সৃষ্টি বা দেশ দখলের ষড়যন্ত্র হয় না। ’
প্রসঙ্গত, গত ৩ মার্চ সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণে আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা অংশ নিয়ে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন দাওরায়ে হাদিসের স্বীকৃতি প্রদান, হেফাজতে ইসলাম ও আল্লামা আহমদ শফীর কঠোর সমালোচনা করেন। এ সময় তিনি কওমি শিক্ষাকে বিষবৃক্ষ ও আলেমদের মোল্লাতন্ত্র বলে মন্তব্য করেন।
রাশেদ খান মেননের এমন বক্তব্যে দেশজুড়েই সমালোচনার ঝড় ওঠে। হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামী দলগুলো মেননের সংসদ সদস্যপদ বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। অনতিবিলম্বে বক্তব্য প্রত্যাহার না কঠোর আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
বিষয়টি এতদিন রাজপথে থাকলেও রোববার তা সংসদে তুলেন জাতীয় পার্টির সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ। রাশেদ খান মেননের সমালোচনার পাশাপাশি তিনি কওমি মাদ্রাসার অবদানও তুলে ধরেন সংসদে।
ইসলাম বিরোধী বক্তব্য দেয়া বামপন্থীদের রাজনৈতিক ফ্যাশন উল্লেখ করে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘কিছু বামপন্থী নেতা রয়েছেন তারা ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলাটাকে ফ্যাশন মনে করেন। ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বললেই বোধ হয় আলট্রা মর্ডান হয়ে গেলাম! মানুষ মনে করবে, আমি সব থেকেই বড় বিপ্লবী বামপন্থী কমরেড হয়ে গেলাম!’
আল্লামা শফীর মতো একজন বৈশ্বিক ধর্মীয় নেতাকে নিয়ে সংসদে কটাক্ষ করে দেশের শান্ত পরিস্থিতি বিনষ্ট করা হচ্ছে জানিয়ে জাপার এ সাংসদ বলেন, ‘হেফাজতের আমির, তিনি একজন বর্ষীয়ান নেতা। সারাজীবন মাদ্রাসায় শিক্ষাকতা করেছেন। তাদের অনেক ছাত্র-ভক্ত রয়েছে। তাকে নিয়ে এই সংসদে কটাক্ষ করে কথা বলা হয়েছে।
‘তেঁতুল হুজুর’ বলে তাকে কটাক্ষ করা হয়েছে। বিদ্রুপ করা হয়েছে। আমরা মনে করি এ ধরনের ধৃষ্টতা সংসদে উচিত নয়। সংসদে নেই, সংসদে কথা বলতে পারেন না, সংসদে আসতে পারেন না। তাদের নিয়ে সংসদে আমরা এ ধরনের কথা কেন বলবো? দেশ তো শান্ত আছে, শান্তিতে আছে। এখন তো কোথাও অশান্তি দেখিনা না। আমরা কেন শান্তির মধ্যে একটি অশান্তির ঢিল ছুড়ে দেবো?’
কওমি মাদ্রাসা আদর্শ নাগরিক গড়ে তুলছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানে ২০ হাজার কওমি মাদ্রাসা আছে। ২০ লাখ ছাত্র এতে কোরআন-হাদিস নিয়ে পড়াশোনা করেন। কঠিন ইসলামিক ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে তাদের চলতে হয়। রাত সাড়ে তিনটার সময় তাদের ঘুম থেকে ওঠতে হয়। প্রথমে তারা তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে। তারপর কোরআন শরীফের হিফজ করে। এভাবে তাদের দিন শুরু হয়। রাত ১০টার মধ্যে তাদের ঘুমিয়ে যেতে হয়। রাতজেগে ফেসবুক বা ইন্টারনেটে তারা সময় পার করে না। স্কুল-কলেজের ছাত্রদের মতো ঘি-মাখন-রুটি-পরাটা খেয়ে স্কুলে যায় না। যা জোটে তা-ই খায়।
কওমি মাদ্রাসার পরিবেশ সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত জানিয়ে ফিরোজ রশীদ সংসদে বলেন, মাননীয় স্পিকার,কওমি মাদ্রাসা সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত। মাদক, ইয়াবা, গাজা,ফেনসিডিল এখানে নিষিদ্ধ। ধূমপান এখানে চলে না। এগুলো কোথায় চলে? আমাদের স্কুল-কলেজ, ইউনিভার্সিটি ও বাড়িঘরে এই মাদক ঢুকে পড়েছে। কিন্তু কওমি মাদ্রাসায় ঢুকতে পারে না। আমরা যদি এক হাজার মাদরাসা ছাত্রের রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করি, আর অন্য ছাত্রদের রক্ত নিয়ে পরীক্ষা করি, তাহলে দেখা যাবে মাদরাসা ছাত্রদের রক্ত পিওর এখানে কোন মাদকের চিহ্ন পাওয়া যাবে না। আর অন্য ছাত্রদের রক্ত ৫০ শতাংশ পিওর পাব না। এতো মাদক ঢুকছে।
রাশেদ খান মেননের বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার অনুরোধ জানিয়ে স্পিকারকে উদ্দেশ করে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসার বিরুদ্ধে বলে আলেম সমাজের নেতা আল্লামা শফী সাহেবের বিরুদ্ধে কথা বলে উনাকে অপমান করা হয়েছে। অথচ এই সংসদেই আমরা তাদের জন্য আইন পাস করেছি। এখানে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার দরকার ছিল না। এই কথাগুলো এক্সপাঞ্জ করবেন। অশান্ত পরিবেশ থেকে আমরা মুক্তি পাবো।’
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/১১ মার্চ ২০১৯/ইএন