Menu

বাংলানিউজসিএ ডেস্ক ::‘ব্র্যাক’ প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ, প্রিয় ‘আবেদ ভাই’। ২০ ডিসেম্বর ২০১৯, শুক্রবার রাত আটটা ২৮ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)। আমার কাছে তিনি একজন মহাপুরুষ। তাই এ মৃত্যু আমার কাছে এক ‘মহাপ্রাণের মহাপ্রয়াণ’।আমার জীবনের প্রথম চাকরি ব্র্যাক প্রধান কার্যালয়ে। ‘গুলশান’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা বের করব। ব্র্যাকে গেলাম বিজ্ঞাপনের জন্য।

আড়াই হাজার টাকার বিজ্ঞাপন পেলাম। বিজ্ঞাপন আর আনা হয়নি। পত্রিকাও ছাপা হয়নি। তার বদলে ব্র্যাকে চাকরি হল, যোগ দিলাম, জুন ১৯৮৯। টানা চার বছর আট মাস। এরপর পেশা বদল। ব্র্যাকের চাকরি ছাড়লাম। তবে যোগাযোগ রেখেছি, বছরে এক-আধবার।আমি যোগ দেই ব্র্যাকের ‘ব্র্যাক ব্রিফিং সেন্টার (বিবিসি)’ প্রকল্পে। কাজটা ছিল ঢাকার কানাডিয়ান হাইকমিশনের সঙ্গে। এক বছর পর হাইকমিশনের সঙ্গে চুক্তি আর নবায়ন করা হয়নি। আমাকে বদলি করা হল ট্রেনিং অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার- টার্ক, প্রধান কার্যালয়ে।

ব্র্যাক প্রধান কার্যালয় তখন মহাখালী পানির ট্যাংকির পশ্চিম পাশে বিশেষ ডিজাইনে নির্মিত লালরঙা পাঁচতলা একটি ভবন, যেটা এখন ইউনিভার্সিটি। আবেদ ভাই বসতেন তিনতলায়, বছরখানেক আমাদের শাখাও ছিল ওই ফ্লোরে। সুতরাং প্রতিদিনই আবেদ ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হতো।বিবিসি বন্ধ হওয়ার পর আমাকে বদলি করা হল টার্কে, আগেই বলেছি। এবার ব্র্যাক পানির ট্যাংকির উত্তর পাশের ইন্স্যুরেন্স ভবনটি ভাড়া নেয়। ‘টার্ক’ এবং এমডিপি (ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট সেন্টার), হেল্থ প্রোগ্রাম সেখানে স্থানান্তর করা হয়।

মূল ভবনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হল। আবেদ ভাইয়ের সঙ্গে নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ কমে গেল। তবে ব্র্যাকে যতদিন জব করেছি, সব সময় মনে হতো আবেদ ভাই পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। সদা কর্মচঞ্চল এ মানুষটি প্রতিটি ব্র্যাক কর্মীর মাঝে ‘কর্মস্পৃহা’ সঞ্চারিত করতে পেরেছিলেন বলে আমার ধারণা, এটাই তার সবচেয়ে ‘বড় গুণ’ বলে মনে করি।আবেদ ভাই ও ব্র্যাক নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি আছে। সেটা পরে কখনও সুযোগ হলে লিখব। সর্বশেষ তার সঙ্গে দেখা ২০১৭ বা ১৮ সালে, ‘অবিন্তা ফাউন্ডেশন স্কুল’র অনুষ্ঠানে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যার, মোকাম্মেল হক, স্যার ফজলে হাসান আবেদ, ভূতপূর্ব মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট।

চা-চক্রে আবেদ ভাইয়ের সঙ্গে কুশল বিনিময়, আলাপচারিতা হল। ভাবিও সঙ্গে ছিলেন। আবেদ ভাইয়ের মেমোরি খুব শার্প ছিল। অনেকদিন পর কথা বললেও চিনতে পারতেন। সাবলীল ও অতি আপন করে কথা বলতেন। আবেদ ভাইকে ‘বেরাইদ গণপাঠাগার’ এবং আমাদের ‘বেরাইদ’ গ্রাম (বর্তমানে ডিএনসিসি ৪২নং ওয়ার্ড) পরিদর্শনের দাওয়াত করি।বলেন, ‘বেরাইদের জমিজমার তো অনেক দাম হয়েছে। তোমরা ধনী হয়ে গেছো। এ গরিবকে তোমাদের বাড়ি নেবে নাকি?’ আমি হেসে ফেললাম। আবেদ ভাইয়ের রসিকতার তারিফ করতে হয়। বললাম, ভাই আমাদের জমিজমা তো সব ডেভেলপার কোম্পানি নিয়ে গেছে, যৎকিঞ্চিৎ আছে। আমরা টিকে আছি, ‘রেড ইন্ডিয়ান’দের মতো’।

আপনি একবার পদধূলি দিলে খুশি হব। এরপর একদিন অফিসে গিয়েছিলাম, আবেদ ভাইয়ের দেখা পাইনি। হঠাৎ পত্রিকায় দেখলাম, অসুস্থ হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি। তারপর চলে যাওয়া। প্রিয় আবেদ ভাইয়ের রুহের মাগফিরাত কামনা করি।

এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া : সভাপতি, বাংলাদেশ গ্রন্থসুহৃদ সমিতি

বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ /এমএম


Array