প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: ফেনী জেলার একটি বড় অংশের মানুষ এখন বন্যার পানিতে জিম্মি। এ জিম্মিদশা কবে কাটবে, তা নির্ভর করছে বন্যার পানির মতিগতির ওপর। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১ জায়গায় ভাঙন ধরেছে এবং তাতে সৃষ্টি হয়েছে বন্যা। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। বন্যাকবলিত মানুষ সামান্য সম্বল নিয়ে ছুটছে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে। কেউ কেউ সঙ্গে নিচ্ছেন গবাদিপশু। আশ্রয়কেন্দ্রেও দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও সুপেয় পানির অভাব। তবে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় কয়েকটি এলাকার পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে বটে। ওদিকে বৃহস্পতিবার থেকে বন্যার্ত এলাকায় সেনাবাহিনী ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে।
শুধু ফেনী নয়, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, সেনবাগ, সুবর্ণচর ও কবিরহাটে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ওদিকে চারদিন ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালি উপজেলা সদরসহ চার ইউনিয়ন। খাগড়াছড়ির একটি ইউনিয়ন এখন প্লাবিত। রাঙামাটির লংদুর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, ভোলা ও বান্দরবানেও টানা বর্ষণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে, দেশের অনেক অঞ্চলের মানুষ এখন বিপদগ্রস্ত। ফেনীর কথাই আগে বলা যাক। সেখানকার বাঁধগুলো যে ভেঙে গেল, এর কারণ নিশ্চয়ই এগুলোর নির্মাণ ঠিকমতো না হওয়া। বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি যে হয়েছে, তা বোঝাই যায়। অথচ শক্তপোক্ত বাঁধ নির্মাণ করা হলে মানুষ রক্ষা পেত বন্যার কবল থেকে। পানির তোড়ে যেন কোনো বাঁধ ভেঙে না যায়, সেভাবেই নির্মাণ করতে হবে বাঁধ। বর্তমানে ভেঙে যাওয়া বাঁধগুলোর পুনর্নির্মাণও জরুরি। দেশের যেসব অঞ্চলে ভারী বর্ষণ কিংবা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বন্যার কবলে পড়েছে মানুষ, সেসব অঞ্চলের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে অবশ্যই। শুধু ত্রাণসামগ্রী দিয়ে অসহায় মানুষের প্রাণ বাঁচালেই চলবে না, বন্যার কারণে রাস্তাঘাটসহ যেসব স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেগুলো মেরামত করতে হবে। পুনঃসংযোগ স্থাপন করতে হবে বিদ্যুতের। বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনের কাজও এগিয়ে নিতে হবে আন্তরিকতার সঙ্গে। ভারী বর্ষণ প্রাকৃতিক নিয়মেই হয়, একে ঠেকানো যায় না; কিন্তু বন্যা ঠেকানোর জন্য নির্মিত বাঁধ কেন ভেঙে যায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে। এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর ব্যবস্থাপনা। খাবার ও সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে যত্নবান হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ১২ জুলাই ২০২৫ /এমএম