Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: বায়ুদূষণে বিশ্বের ১২৪টি শহরের মধ্যে ঢাকা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। দূষণে ঢাকার বাতাস ভারি হয়ে যাচ্ছে। এই বাতাসে বুকভরে শ্বাস নেওয়াই কঠিন। শ্বাসের সঙ্গে যেসব দূষিত বায়ু দেহে প্রবেশ করে, তা মানুষকে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলছে। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট।কিন্তু রায়ের পাঁচ বছর পার হলেও সেই নির্দেশনার বাস্তবায়ন হয়নি। এমতাবস্থায় ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালতের দেওয়া ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও দুই সিটি করপোরেশনসহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের ৯ দফার মধ্যে ঢাকা শহরে মাটি, বালু, বর্জ্য পরিবহণ করা ট্রাক ও অন্য গাড়িতে মালপত্র ঢেকে রাখা, নির্মাণাধীন এলাকায় সব নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, সিটি করপোরেশন রাস্তায় পানি ছিটানো, রাস্তা, কালভার্ট, কার্পেটিং, খোঁড়াখুঁড়ির কাজে দরপত্রের শর্ত পালন নিশ্চিত করা, সড়ক পরিবহণ আইন অনুসারে গাড়ির চলাচল সময়সীমা নির্ধারণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধ করা, পরিবেশগত সনদ ছাড়া চলমান টায়ার ফ্যাক্টরি বন্ধ করা, মার্কেট-দোকানের প্রতিদিনের বর্জ্য ব্যাগে ভরে রাখা এবং বর্জ্য অপসারণ নিশ্চিত করার বিষয়গুলো রয়েছে। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে আদালত ২০ বারেরও বেশি সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে তলব করেছেন। তবু কোনো কাজ হয়নি।

সর্বশেষ গত ১২ জানুয়ারি ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে ১০ ফেব্র“য়ারি আদালতে প্রতিবেদন দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে ২০১৯ সালে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) হাইকোর্টে রিট করে।রিটকারী জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করায় ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা কিছুটা কমে। পরবর্তী সময়ে নির্দেশনাগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন না হওয়ায় ঢাকা শহর আবারও বায়ুদূষণের শীর্ষ শহর হিসাবে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

তিনি বলেন, এ অবস্থায় আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন চেয়ে সম্পূরক আবেদনটি করা হয়। গত ১২ জানুয়ারি শুনানি নিয়ে আদালত আগামী সাত দিনের মধ্যে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে ১০ ফেব্রুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান। তিনি বলেন, সর্বশেষ ১২ জানুয়ারি ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পরিবেশ অধিদপ্তর ও দুই সিটি করপোরেশনসহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেখানে তারা বলেছে, আদালতের নির্দেশের পর প্রায় চারশ গাড়িকে পরীক্ষা করে ৮০টি গাড়িকে জরিমানা করা হয়। তাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মামলাটি কার্যতালিকায় আসলে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এ মামলায় বিআরটিএকে বিবাদী করা দরকার।

আদালতের রায় বাস্তবায়ন না হওয়াকে দুঃখজনক বলে মনে করেন জাতীয় আইনজীবী সমিতির সভাপতি শাহ মো. খসরুজ্জামান।তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে ঢাকার বায়ু দূষণ হতো না। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। সারা দেশে ৬টি পরিবেশ আদালতে বর্তমানে ৫ হাজারের ওপরে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে ২৯টি মামলা। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন ১ হাজার ৫৮৮টি মামলা। আর ঢাকার পরিবেশ আপিল আদালতে বর্তমানে বিচারাধীন ১ হাজার ৬৭১টি মামলা। এখানে উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে ৪৪টি মামলা।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ /এমএম