Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::  বাংলাদেশের ভারত সফর ঘিরে অনেক আগে থেকেই হুমকি দিয়ে আসছিল ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। তাই নিরাপত্তা বিষয়টি বড় খবর হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। প্রথম টেস্টের পর দ্বিতীয় টেস্টের আগেই নিরাপত্তা নিয়ে হুমকি পেয়েছিল বাংলাদেশ।এই পরিস্থিতিতে বাড়তি নিরাপত্তা দিয়ে শুক্রবার মাঠে গড়িয়েছে বাংলাদেশ-ভারত টেস্ট। সেই নিরাপত্তার মাঝেই কানপুরে বাংলাদেশি সুপার ফ্যান টাইগার রবির ওপর হামলা চালিয়েছে ভারতীয় দর্শকরা। ভারতীয়দের টার্গেট হামলার শিকার রবি এখন হাসপাতালে ভর্তি।

ভারত কর্তৃপক্ষ খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা দিতে পারলেও বাংলাদেশি সমর্থকদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদাসীন তারা। আইসিসি ফ্যামিলির সদস্য রবির ওপর হামলায় সেটিই প্রমাণিত। চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্ট থেকেই রবিকে টার্গেট করে ভারতীয়রা। ভারতীয় সমর্থকদের বিদ্রূপ-হুমকির মুখে এমনকি মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হন তিনি। এ কথা সংবাদমাধ্যমে বলেও নিজের নিরাপত্তা পাননি রবি।বরং শুক্রবার কানপুরে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথমি দিন গ্যালারিতে হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছে রবিকে, কিন্তু পুলিশ বলছে, পানিশূন্যতার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন রবি। তাকে কেউ হেনস্তা করেনি।

সুপার ফ্যান রবির ওপর হামলার ঘটনা সাড়া ফেলেছে ক্রিকেটমহলে। বাংলাদেশি সমর্থকরা তার সমর্থনে কথা বলছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।বাংলাদেশ দলের প্রায় সব ম্যাচেই গ্যালারি থেকে টাইগারদের সমর্থন জুগিয়ে যান রবি। মুখসহ সারা গায়ে নানা রঙ মেখে, গায়ে কালো আর হলদে বাঘের পোশাক জড়িয়ে গ্যালারি থেকে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন দিয়ে যান তিনি। তার নামটাই শেষ পর্যন্ত হয়ে যায় টাইগার রবি। তার এই ভূমিকার জন্য তাকে আইসিসির ফ্যামিলি মেম্বার করা হয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে, যাদের খেলা দেখতে টিকিট লাগে না।

সেই রবি কানপুরে হামলার শিকার হলেন ভারতীয়দের। রবির অভিযোগ, শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ম্যাচের শুরু থেকেই তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগলি করছিল ভারতীয় সমর্থকরা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে গ্যালারির এক কোণে সরে যান রবি। সেখানে বসেই খেলা দেখছিলেন তিনি।কিন্তু এতেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। প্রথম সেশনের খেলা শেষে রবি যখন গ্যালারির নিচের দিকে নামেন, তখন তাকে মারধর করে ভারতীয় সমর্থকরা। ভারতীয়দের কিল-ঘুষিতে রবি সেখানেই পড়ে যান। স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে মাঠেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করে। এরপর তাকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনো হাসপাতালেই আছেন রবি। বাংলাদেশি এক সংবাদমাধ্যমকে রবি জানান, মধ্যাহ্নভোজ বিরতির সময় বৃষ্টি নামতে শুরু করলে গ্যালারির ভেতরের দিকে চলে যান তিনি। তখন স্থানীয় কয়েকজন সমর্থকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় তার। পরে মারধরের ঘটনা ঘটে।আহত অবস্থায় টাইগার রবি নিজের ওপর হামলার কথা স্থানীয় পুলিশকে জানান। পাঁজরের নিচের অংশে আঘাত লেগেছে বলেও জানান তিনি। কিন্তু পুলিশ হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।এদিকে শুক্রবার বিকালে টাইগার রবির ফেসবুক পেজে তার হাসপাতালে শোয়া একটি ছবি পোস্ট করে দোয়া চাওয়া হয়।

এর আগেও চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্টে ভারতীয় সমর্থকদের বিদ্রূপের মুখে পড়েন টাইগার রবি। তখন তিনি পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মাঠ থেকে সরে পড়েন। পরে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে জানান সেই কথা। তিনি লেখেন, ‘ভারত কখনো বাংলাদেশের বন্ধু হয় না, শত্রু। প্রয়োজনে আফগানিস্তানকে সাপোর্ট করেন সেটা অনেক ভালো, কিন্তু ভারতকে করবেন না।’

মাঠ থেকে বেরিয়ে একটি গণমাধ্যমকে ভারতে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে টাইগার রবি বলেন, ‘রাস্তায় আমি হাঁটতে গেলে আমাকে মওকা মওকা বলে গালি দেয়। আমি হিন্দি ভাষা কিছুটা বুঝি, কিন্তু চেন্নাইয়ে তামিল ভাষায় গালি দিচ্ছে সেটা কিছুই বুঝি না। একজন বাঙালি ছিল তিনি বলেছেন আপনাকে খারাপ ভাষায় গালি দিচ্ছে।’

‘আমাকে মারতে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে’ উল্লেখ করে টাইগার রবি আরও বলেন, ‘আমাকে পতাকা উড়াতে দেয় না। আমি দেখিয়েছি আমি টিকিট নিয়ে এসে মাঠে ঢুকেছি। আমিও আইসিসি ফ্যামিলি মেম্বার। তারপরও আমি টিকিট দিয়ে ঢুকেছি। মুশফিকুর রহিম আমাকে টিকিট দিয়েছে। বাংলাদেশ কিংবা অন্য যেকোনো দেশে আমার ও শোয়েবের টিকিট লাগে না। তারপরও আমি আইনকে সম্মান করি। টিকিট দিয়ে ঢোকার পরও সেই ইজ্জত পাইনিএখানে।’

‘ভারত কখনো বাংলাদেশের বন্ধু হয় না’ দাবি করে এই টাইগার সমর্থক বলেন, ‘তারা কোনোদিন বাংলাদেশের ভালো চায় না। প্রয়োজনে আফগানিস্তানকে সাপোর্ট করেন সেটা অনেক ভালো, কিন্তু ভারতকে করবে না। আমি সিকিউরিটির কাছে সাহায্য চেয়েছি, কিন্তু পাইনি। কিন্তু তারা বাংলাদেশে গেলে অনেক সাহায্য করি, সুধীরকেও করি। তারা আমার মা-বোন তুলে গালাগালি করেছে। তারা বলে বাংলাদেশের সব খেলোয়াড় নাকি আমার বাপ।’

ভারতীয়দের এত সব হেনস্তার পরও, এমনকি গুলি চালালেও মাঠে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানো থামবে না বলে দৃঢ়প্রত্যয় রবির। বলেন, ‘আমি লাল-সবুজের পতাকা উড়াবোই, তাতে যদি আমার বুকে গুলিও চালায়। আমি সহ্য করতে না পেরে একটা সময় বলেছি, আমি আমার মার দোয়া নিয়ে এসেছি, আপনারা গুলি চালান, গুলি চালান, তবুও আমার পতাকা উড়ানো থামবে না। যদি তারা গুলি চালায় চেন্নাইয়ের মাঠে, আমি পতাকা উড়াবোই। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে।’

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ২৭ সেপ্টেম্বর  ২০২৪ /এমএম