Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: পানি আগ্রাসনের শিকার পৃথিবীর একমাত্র দেশ বাংলাদেশ। বণ্যায় ডুবে যায় আর খরায় শুকিয়ে যায়। পানি আগ্রাসন দুই ভাবেই হয়ে থাকে। আকস্মিক বাঁধ ছেড়ে দেওয়ার ফলে বণ্যায় তলিয়ে যায় আবার শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকিয়ে রেখে দেশের নদী সমূহ শুকিয়ে মারা হয়। পৃথিবীর কোন দেশেই বাংলাদেশের মতো পানি আগ্রাসনের শিকার হয় না।

প্রথমত: আমাদের দেশের সমতলভূমির পাশেই ভারতের পাহাড়ি এলাকা। সেখানে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে বৃষ্টির সব পানি বাংলাদেশের সমতল ভূমিতে চলে আসে। এর ফলে বাংলাদেশ বন্যাকবলিত হয়। উপরন্তু পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে ভারত তার প্রয়োজনে পানি আটকিয়ে রাখে আর অতিবৃষ্টি হলে বাঁধ ছেড়ে দেয়। এর প্রভাবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ বিশেষ করে ফেনী, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা পানির নীচে। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহ বণ্যা।

দ্বিতীয়ত: ভারত থেকে আসা ৫৪টি এবং মিয়ানমার থেকে তিনটিসহ মোট ৫৭টি নদী শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশে একসময় ১২০০- এর বেশি নদী ছিল কিন্তু এখন ২০০ নদীও সচল নেই। সব শুকিয়ে চিকন মরা খালে পরিণত হয়েছে। চিহ্নই থাকছে না। আমাদের তিন দিক দিয়ে ঘেরা বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারত আন্তর্জাতিক নদীর সকল নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন করে একতরফাভাবে উজানে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করছে।

রাজশাহীর পশ্চিম সীমান্তে অন্যতম প্রধান নদী পদ্মার ১৯ মাইল উজানে মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা নামক স্থানে ভারত ১৯৬১ সালে বাঁধ দেয়ার কাজ শুরু করে এবং ১৯৭৪ সালে ফিডার কেনেলসহ নির্মাণকাজ শেষ করে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে। ফারাক্কা বাঁধ চালুর আগে বাংলাদেশে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের কাছে শীত মৌসুমে ৪৭ হাজার কিউসেক পানি প্রবাহ থাকত এখন তা শুধুই অতীত, ফলে বাংলাদেশের নদী এখন মরুভূমি। পানি আগ্রাসন থেকে বাংলাদেশকে নিজস্ব সক্ষমতায় দাঁড়িয়ে যেতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তির অবকাঠামো নির্মাণ করে নিন্মোক্ত এর স্থায়ী সমাধান করা যায়।

ক. যেহেতু তিস্তা পানি আগ্রাসন হচ্ছে বড় হাতিয়ার সেহেতু তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। তিস্তা মহাপরিকল্পনা আদলেই সারাদেশে নদী সমূহে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।

খ. দেশের অভ্যন্তরে সকল নদী সরু করে একটি স্থায়ী ম্যাপ করা তারপর নদী গুলো ড্রেজিং করে নদীর দুই ধারে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা। ফলে ফসলি এবং বসতি জমি উদ্ধার হবে। দুইধারে কৃষি সেঁচে বিপ্লব আসবে। নদী গভীর হলে নৌ রুট বৃদ্ধি পাবে। নদী গভীর হলে ভরা মৌসুমে ভারত বাঁধ ছেড়ে দিলেও গভীর নদী সেই পানি প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হবে। ফলে বন্যা থেকে বাঁচবে বাংলাদেশ।

গ.নদীতে বালুর পরিমাণ বেশি হলে চর জেগে যায়। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন স্পটে ড্রেজিং অব্যাহত রাখতে হবে এবং ড্রেজিং এর বালি দিয়ে ব্লক ইট তৈরি করা যেতে পারে ফলে কৃষি জমির মাটির উপর চাপ কমবে। সেক্ষেত্রে নদীর দুইধারে বিভিন্ন ব্লক ইট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে ড্রেজিং এবং ইট কারখানা করার ব্যবস্থা করে দেওয়া।

ঘ. পানি আগ্রাসন রোধে জলবায়ু খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেক্ষেত্রে নদীর দুইধারে স্থায়ী বনায়ন সৃষ্টি করা।

ঙ. নদীর আদলে খাল সমূহ উদ্ধার করে সব খাল প্রবাহিত করার গ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।

চ.ভারতের উজানে বাঁধের বিপরীতে বাংলাদেশের ভাটিতেও বাঁধ নির্মান করে পানির প্রবাহ পরিস্থিতির আলোকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা।

লেখক : হাসান আল বান্না, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ২৪ আগস্ট ২০২৪ /এমএম