Menu

দেশের তিন অঞ্চলে বন্যা

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: অতি বৃষ্টিতে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলা। মধ্য আষাঢ়ের টানা বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ি ঢল যুক্ত হয়ে দফায় দফায় ডুবছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল। দেশের সাতটি প্রধান নদনদীতে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। অতি তাপপ্রবাহের পর ভারী বৃষ্টিপাতে দেশের বেশ কয়েকটি জেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। আগামী কয়েকদিন আবারও ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির আভাস থাকায় বন্যা কবলিত এলাকার সংখ্যা বাড়ার শঙ্কাও রয়েছে। ফলে বৃষ্টি ও বন্যা বেড়ে পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, ‘সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশের সাতটি প্রধান নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি ছয়টি পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।’
এদিকে বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আগামী চারদিন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুরসহ নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে পারে। একইসাঙ্গে টাঙাইল, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের এমন কয়েকটি অঞ্চলও আগামী ২৪ ঘণ্টায় প্লাবিত হতে পারে। এটি আগামী পাঁচদিন পর্যন্ত থাকতে পারে। তবে আগামী বুধবার থেকে স্বাভাবিক হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

এছাড়া সিলেট অঞ্চলে এখন পানি কিছুটা কমেছে। সুরমা নদীর পানি কমেছে। তবে কুশিয়ারা নদীর পানি কিছুটা বেড়ে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে। কিন্তু এরপরই ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে বন্যা পরিস্থিতি আবারও অবনতি হতে পারে বলেও শঙ্কা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের। সারাদেশের বন্যা পরিস্থিতি, বাড়ছে যমুনার পানি: সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধির ফলে শাহজাদপুর, কাজিপুর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। ইতিমধ্যে এই তিনটি উপজেলায় অন্তত ১০টি কাঁচা-পাকা বসতভিটাসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে।

বগুড়ায় যমুনার নদীর পানি দ্রুত বেড়ে সারিয়াকান্দির চরগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে সারিয়াকান্দির কর্নিবাড়ি, কামালপুর, হাটশেরপুর, ফুলবাড়ি, চালুয়াবাড়ির চরাঞ্চলের নিচু জায়গা তলিয়ে গেছে। ফুলে ফেঁপে উঠেছে হাকালুকি হাওর: টানা ভারি বর্ষণ আর সীমান্তবর্তী জুড়ী নদীর পানি হাকালুকি হাওরে পতিত হয়। ফলে ফুলে ফেঁপে উঠেছে হাকালুকি হাওর। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হাওর তীরবর্তী কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমইল, বরমচাল, কাদিপুর, ভাটেরা, জয়চন্ডী, জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী, জায়ফরনগর, গোয়ালবাড়ি, বড়লেখা উপজেলার বর্ণি, তালিমপুর, দাশেরবাজারসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের শত শত গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দি রয়েছেন।

এছাড়াও প্লাবিত হয়েছে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন দপ্তর। বন্যার পানিতে অর্ধমাস ধরে সরকারি হাসপাতাল নিমজ্জিত রয়েছে। পাশাপাশি কুলাউড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৪টি ওয়ার্ডের ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সড়ক পানির নিচে ডুবে আছে। এখানের ২৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২ হাজারের বেশি মানুষ রয়েছেন। দফায় দফায় ডুবছে সিলেট: পাহাড়ী ঢল ও টানা বর্ষণে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় সার্বিক বন্যা অবনতি হতে থাকে। গত সোমবার থেকে পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার রাস্তাঘাট সহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করে।

সুনামগঞ্জের সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটাসহ সকল নদনদীর পানি। ফলে ডুবেছে সুনামগঞ্জ শহরসহ জেলার নিম্নাঞ্চল। এছাড়া বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দূর্গাপুর সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে আবার তাহিরপুর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখা উপজেলায় আবারও বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে দুর্ভোগে আছে মানুষ।

শেরপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত: টানা বৃষ্টি ও আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় মহারশী নদীর খৈলকুড়া বাঁধ ভেঙে ও বাঁধের দুই কূল উপচে উপজেলার ১৫টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে সেসব অঞ্চলের হাজারও মানুষ। তলিয়ে গেছে নেত্রকোণার গ্রামীণ সড়ক: নেত্রকোণায় টানা বৃষ্টি আর ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে প্রধান নদী উব্ধাখালির পানি বেড়ে সোমেশ্বরী, কংশ ও ধনু নদীর পানিও বেড়েছে। ফলে কলমাকান্দা উপজেলার নিচু এলাকার লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। পাশাপাশি গ্রামীণ সড়কগুলোও তলিয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে।

অতি ভারী বৃষ্টির আভাস: আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ৬৭২ মিলিমিটার, রংপুরে ২৩০ মিলিমিটার, ঢাকা ১৭১ মিলিমিটার, রাজশাহী ১৭০মিলিমিটার, বরিশাল ১৪৭ মিলিমিটার, খুলনা ১৩৮মিলিমিটার, সিলেট ৭৭ মিলিমিটার, ময়মনসিংহ ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এদিকে সংস্থাটির বুধবারের পূর্বাভাস অনুযায়ী আজ এবং আগামীকাল দেশের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির আভাস দেওয়া হয়েছে।

বন্যা কবলিতদের জন্য আর্থিক সহায়তা: সিলেটে বন্যা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার সাড়ে ৩ লাখ ডলার সহায়তা দিয়েছে। গত জুন মাসের মৌসুমি বন্যার ক্ষতি পোষাতে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) মাধ্যমে ৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে দেশটি। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এই অর্থ বিতরণ করবে। তবে এই অর্থ বিতরণ হবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ০৪ জুলাই ২০২৪ /এমএম