Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: সমস্ত বিশ্বের জলাভূমির স্বাস্থ্যের সাথে আবদ্ধ- যেমন: শারীরিক, মানসিক এবং পরিবেশগত দিকগুলোকে বোঝায়। ১৭০০ সাল থেকে বিশ্বের প্রায় ৯০ শতাংশ জলাভূমি হারিয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত আমাদের অবহেলা আর অবজ্ঞার কারণে দেশের অনেক অঞ্চলে গত ৪০ বছরে আমাদের জলাশয়গুলি হারিয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ জলাভূমি ভরাট করে অপরিকল্পিত বাণ্যিজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার কারণে স্থানীয় পর্যায়ে জলাভূমিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

যেখানে বলা হচ্ছে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় অবশ্যই আমাদের জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় গেল ২৮ বছরে জলাধারের পরিমাণ ৩ শতাংশেরও নিচে নেমে গেছে। যেখানে সেখানে পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে অবৈধ বস্তিঘর, দোকানপাট, রিকশা ও গাড়ির গ্যারেজসহ স্থায়ী ও অস্থায়ী বিভিন্ন স্থাপনা। এর ফলে নগরের অনেক জলাধার ও পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। যার ফলে শহরে ভূগর্বস্থ পানির সঙ্কটও প্রকট আকারে দেখা দিচ্ছে।

একটা সময়ে আমরা দেখতাম যে সুধুমাত্র বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠান জমি দখলের সাথে জড়িত থাকতো কিন্তু বর্তমানে উন্নয়নে দোহাই দিয়ে সরকারি প্রকল্পের নামে সরকারি প্রতিষ্ঠানও জলাধার ভরাট কার্যে উৎসাহ দেখাচ্ছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও উদ্বেগের। নদী মাতৃক আমাদের দেশ বাংলাদেশ একটা সময় ছিল যে দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই অসংখ্য নদী-নালা খাল-বিল ছিল যা আজ দখল দূষণে হারিয়ে যাচ্ছে। অনেক স্থানেই এ সকল জলাধারগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

একটা সময়ে যেখানে জলাশয় ছিল আজ সেখানে আবাশিক ভবন ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। প্রতিটি জলাভূমির বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে। একটি জলাভূমি নানা উদ্ভিদ ও নানা প্রাণী জীববৈচিত্র্যপূর্ণ। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে দিন দিন বিভিন্ন জলাশয় হারিয়ে গেছে। অনেক সময় অবৈধ আবাসিক প্রকল্পকে বৈধকরণের ফলে কয়েক বছরে ধরে ঢাকা শহরে জলাধারের সত্যিকার পরিমাণ আরও অনেক কমে গেছে। আমরা বনের চেয়ে তিনগুণ দ্রুত জলাভূমি হারাচ্ছি। ঢাকা ওয়াসার তথ্যমতে, অবশিষ্ট জলাধার রক্ষা না হলে শিগগিরই খাবার পানির বিশাল সংকটে পড়বে ঢাকাবাসী। জলাধারের অভাবে অনেক স্থানেই বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণে জনদুর্ভোগের বিষয়টি শহরে বসবাসরত মানুষের চেয়ে আর কেইবা ভালে জানে। পর্যপ্ত জলাধার ছাড়া একটি শহরে বসবাসের চিন্তাই করা যায় না। অনেক জায়গায় জলাধার ভরাট করে গড়ে উঠা উন্নয়নের উপর পরিবেশ আইনের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও কেউ তা মানছে না। তবুও এই আইনকে অমান্য করে একদল দখলকারীরা জলাশয়গুলো ভরাট করে প্রতিনিয়ত নিজেদের সুবিধা নিচ্ছে। অনেক সময় আমর জলাধার ভরাট ও দখলের জন্য ভূমি দস্যুদের দোষারোপ করতাম কিন্তু বর্তমানে নগর উন্নয়নের নামে সরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেরাই আইন লঙ্ঘন করে জলাভূমির ক্ষতি করে অবকাঠামো নির্মাণ করে চলছে। যা নগর উন্নয়ন বা পরিবর্তনে সাধারণ মানুষের সমঅধিকার এবং চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তাকে অবমূল্যায়ণ করছে। ড্যাপ সংক্রান্ত টেকনিক্যাল কমিটিও যেকোনো মূল্যে জলাধারের শ্রেণিকরণ নিষিদ্ধ করেছে।

ধারায় জলাধার সম্পর্কিত বাধা-নিষেধে বলা হয়েছে, আপাততঃ বলবৎ অন্য কোনো আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে শ্রেণি পরিবর্তন করা যাইবে না। এছাড়া মহানগরী, বিভাগীয় এবং জেলা শহরসহ দেশের সব শহরাঞ্চলের খেলারমাঠ, উন্মুক্ত স্থান, পার্ক এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ এর বিধান অনুযায়ী খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন করা যাইবে না বা উক্তরূপ জায়গা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা যাইবে না বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা দেয়া সুস্পষ্ট আইনের লঙ্ঘন। আমদের জনজীবনে জলাভূমিগুলি জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু প্রশমন এবং অভিযোজন, মিঠা পানির প্রাপ্যতা, বিশ্ব অর্থনীতি এবং আরও অনেক কিছুতে অবদান রাখছে। জলাভূমি সম্পর্কে জাতীয় এবং বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও এর সুফল বাস্তবে তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। আমাদের ঢাকা শহরের চারপাশে অনেক নদী ও খাল রয়েছে কিন্তু যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে তা সঠিকভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশ রক্ষায় জলাভূমি রক্ষার বিকল্প নেই তাই পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণে জলাভূমি পুনরুদ্ধার ও অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সর্বপরি প্রতিটি এলাকায় অবস্থিত সকল জলাধার ভরাট ও দখলরোধ করে ড্যাপের প্রস্তাবিত পার্কসমূহ তৈরিতে রাজউক ও স্থানীয় সরকার পর্যায়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

লেখক: উন্নয়ন কর্মী

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ১১ মার্চ ২০২৪ /এমএম