Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌  ফিফা র‌্যাংকিংয়ে ১২ ধাপ এগিয়ে থাকা সিঙ্গাপুর নারী ফুটবল দলকে হারিয়ে দুর্দান্ত জয় তুলে নিল বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। এর মাধ্যমে সাত বছর আগের হারের প্রতিশোধ নেওয়া হলো সাবিনাদের। সেই সঙ্গে এক বছর পর জয়ের ধারায় ফিরল বাংলার বাঘিনীরা।রবিবার কমলাপুরে শহীদ সিপাহি মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে দ্বিপাক্ষিক আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ৩-০ গোলে সিঙ্গাপুরকে হারিয়েছেন সাবিনা খাতুনরা।

গত বছর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে ইতিহাস তৈরি করে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। কিন্তু এরপরেই কেমন যেন উলটপালট হয়ে যায় চমৎকার আশা জাগানিয়া সেই দলটি। পুরো ১০ মাস মাঠের বাইরে থাকার পর দলটি চলতি বছরের সেপ্টেম্বর এশিয়ান গেমসে জাপানের কাছে ৮–০ গোলে লজ্জার হারের পর ভিয়েতনামের বিপক্ষে ৬–১ গোলের হারে। এমনকি জয়ের আশায় নেমে নেপালের বিপক্ষেও জিততে পারেনি।

মানসিকভাবে ভঙ্গুর সেই দলটিই কিনা ঢাকায় সিঙ্গাপুরকে হারিয়েছে ৩-০ গোলে। ফিফা র‌্যাংকিংয়ে সিঙ্গাপুরের অবস্থান ১৩০, অন্যদিকে ১৪২-এ অবস্থান বাংলাদেশের। র‌্যাংকিংয়ে অনেকটা দূরে থেকেও এদিন মাঠের খেলায় ব্যাপক আধিপত্য ধরে রাখতে পেরেছে সাবিনারা। বাংলাদেশের পক্ষে জোড়া গোল করেছেন তহুরা খাতুন এবং আফিদা খন্দকার করেছেন ১টি গোল। ফলে দুই ম্যাচের সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে প্রথম ম্যাচ জিতে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকল বাংলাদেশের মেয়েরা।

এদিন তহুরা, সানজিদা, ঋতুপর্না, মারিয়া মান্দা, মনিকা চাকমারা বাংলাদেশের প্রাণভোমরা হয়ে মাঠ ধাপিয়েছেন খেলার পুরোটা সময় জুড়ে।তবে প্রতিপক্ষের সীমানায় বাংলাদেশের মেয়েদের আক্রমণে একতরফা আধিপত্য দেখা গেলেও চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন আক্রমণের ‍তুলনায় কমই ছিল। গোলপোস্টের অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছাতে পারলে জয়ের ব্যবধান অনেকটাই বেড়ে যেত।

এমনকি ম্যাচের প্রথম মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যেতে পারত বাংলাদেশ। সিঙ্গাপুরের এক ডিফেন্ডারের পা থেকে প্রায় একক প্রচেষ্টায় বল কেড়ে নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন তহুরা খাতুন। কিন্তু সিঙ্গাপুরের গোলকিপার তান লি বিনকে একা পেয়েও তিনি গোল করতে পারেননি। শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে তিনি বল হারান। তবে এগিয়ে যেতে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। পরের মিনিটেই এগিয়ে যায় সাইফুল বারী টিটুর দল। অধিনায়ক সাবিনা শর্ট কর্নার থেকে প্রথমে বল ঠেলেছিলেন মারিয়া মান্দাকে। মারিয়া সেই বল আবার ঠেলে দেন সাবিনাকে। এরপর গোলমুখে করা সাবিনার ক্রসে হেড করে গোল করেন আফিদা খন্দকার।

খেলার ১৬ মিনিটের মাথায় আসে দ্বিতীয় গোল। প্রথমবার ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয়বার বল পেয়ে আর পেছনে তাকাননি তহুরা। মারিয়ার দেয়া পাসে সহজেই গোলপোস্ট ভেদ করেন তহুরা। তবে গোলটি পেতে পারতেন মারিয়া নিজেই। সিঙ্গাপুরের রক্ষণভাগের এক খেলোয়াড়ের পা থেকে বল কেড়ে একক প্রচেষ্টায় গোলমুখে ঢুকেন মারিয়া। তার সামনে তখন সিঙ্গাপুরের গোলকিপার তান লি বিন ছাড়া প্রতিপক্ষের আর কেউ ছিল না। কিন্তু এত সহজ সুযোগ পেয়ে মারিয়া শর্ট না নিয়ে পাশে থাকা তহুরাকে বল ছেড়ে দেন। সুযোগ পেয়ে তহুরাও প্রতিপক্ষের জালে পাঠিয়ে দেন।

প্রথমার্ধে বাকিটা সময় সিঙ্গাপুরের গোলমুখে একের পর এক আক্রমণ চালিয়েছে বাংলাদেশ। ডান ও বাঁ, দুই দিক দিয়েই সিঙ্গাপুরের রক্ষণভাগকে ব্যস্ত রেখেছিলেন ঋতুপর্না, মারিয়া মান্দা, সাবিনা, সানজিদা, মনিকারা। এই সময় গোল করার সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছেও গোল করতে পারেননি অধিনায়ক সাবিনা। বক্সের ঠিক মাথায় বল পেয়ে সরাসরি পোস্ট লক্ষ্য করে শট নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বাঁকানো শটটি ক্রসবারে বাতাস লাগিয়ে ওপর দিয়ে চলে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধের চিত্রও প্রায় একইরকম ছিল। একের পর এক আক্রমণে বাংলাদেশের মেয়েরা সিঙ্গাপুরের রক্ষণভাগে কাঁন ধরিয়ে দেয়। খেলার ৫৯ মিনিটের মাথায় অসাধারণ এক গোলে বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নেন তহুরা। মাসুরা পারভীনের পেছনে থেকে বাড়ানো লম্বা থ্রু সিঙ্গাপুরের বক্সের মাথায় পেয়ে তান লি’র মাথার ওপর দিয়ে জালে পাঠিয়ে দেন। দ্বিতীয়ার্ধের ৭৮ মিনিটে মারিয়া মান্দাও একটি সুযোগ পেয়ে মিস করেছেন।

পরের মিনিটেই দারুণ একটি আক্রমণ থেকে প্রথমে ঋতুপর্ণার শট ঠেকিয়ে দেন সিঙ্গাপুরের গোলকিপার। ফিরতি বলে শামসুন্নাহার সিনিয়র গোল মিসের আফসোসে ভোগেন। খেলার শেষার্ধে সানজিদার জায়গায় শাহেদা আক্তার রিপা, ঋতুপর্ণার জায়গায় শামসুন্নাহার জুনিয়র মাঠে নামেন। ৮৩ মিনিটে সিঙ্গাপুরের বক্সের ডান প্রান্তে ফ্রি-কিক পেয়েছিল বাংলাদেশ। দারুণ শর্টও করেছিলেন সাবিনা। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি সাবিনার। তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পোস্ট। শেষ পর্যন্ত ৩-০ গোলের জয়ে নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

উল্লেখ্য, গত বুধবার রাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে দুটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ খেলতে ঢাকায় এসেছে। দ্বিতীয় ম্যাচটি মাঠে গড়াবে ৪ ডিসেম্বর। এর আগে সর্বশেষ ৬ বছর আগে মুখোমুখি লড়াইয়ে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে হেরেছিল বাংলাদেশ।

প্রবাস বাংলা ভয়েস /ঢাকা/ ০১ ডিসেম্বর ২০২৩ /এমএম


Array