বাংলানিউজসিএ ডেস্ক :: ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ধানের ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দেয় কৃষক, তেমনি চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে চামড়া। ঘটনাদ্বয় অত্যন্ত বেদনাদায়ক। বর্তমান সময়ে মনে হয় এ দেশে সিন্ডিকেটই সব। সিন্ডিকেট থেকে কবে মুক্তি পাবে সাধারণ মানুষ এমন প্রশ্ন এখন সবার মনে।ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে ধানের ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দেয় কৃষক, তেমনি চামড়ার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলা হচ্ছে চামড়া। ঘটনাদ্বয় অত্যন্ত বেদনাদায়ক। বর্তমান সময়ে মনে হয় এ দেশে সিন্ডিকেটই সব। সিন্ডিকেট থেকে কবে মুক্তি পাবে সাধারণ মানুষ এমন প্রশ্ন এখন সবার মনে।
গত বছর একটি এক লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে দুই-আড়াই হাজার টাকায় আর এ বছর তা নেমে এসেছে তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকায়। চামড়ার বাজারে মন্দাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ী এবং এতিমরা।নীলফামারীতে মানুষ কোরবানি দেয়ার পর পশুর চামড়া বিক্রির জন্য সারাদিন অপেক্ষা করেছেন, কিন্তু কোনো ক্রেতা মেলেনি। ক্রেতা মিললেও ঠিকঠাক দাম দিতে চায়নি। তাই রাগে-ক্ষোভে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন অনেকে। সৈয়দপুর, ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা ও কিশোরগঞ্জ উপজেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে।
সারাদিনেও এসব এলাকায় কোনো চামড়া কেনার লোক মেলেনি! তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই মাটিতে গর্ত করে গরু ও খাসির চামড়া পুঁতে ফেলেছেন। সৈয়দপুরের কামারপুকুর ইউনিয়নের হাসান ৫০ হাজার টাকা দামের গরুর চামড়া সৈয়দপুর আড়তে নিয়ে আসেন। সেখানে ৮০ টাকা দাম বলা হয়।ব্যবসায়ীরা তাকে এও বলেছিল, দিলে দেন, না দিলে বাড়ি নিয়ে যান। বাধ্য হয়ে রাগে-ক্ষোভে চামড়াটি বাড়িতে নিয়ে এসে মাটিতে পুঁতে ফেলেন হাসান। বগুড়া উপশহরে রবিউল করিম নামের এক ব্যক্তি ৩০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে এসে ২০ টাকায় চামড়া বিক্রি করেছেন!
এ বছর উৎপাদিত খরচের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে ধান। সারা দেশে ধানের মূল্য বৃদ্ধির জন্য হয়েছে নানা রকমের আন্দোলন। কৃষক তার কষ্টার্জিত ধানে আগুন দিয়েছে, শুধু দাম কম হওয়ায়। অথচ সরকার বাজেটে ধানের মূল্য বৃদ্ধির ব্যবস্থা না করে বৃদ্ধি করেছে সিগারেটের দাম। এ বছর পানির দামে ধান বেচে মহাজনের ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে কৃষকদের।অনেকেই ঋণ পরিশোধ করতে গরু-ছাগল বিক্রি করেছেন। বোরো মৌসুমের শুরুতে কৃষকরা বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও ও গ্রামীণ সমিতি থেকে ঋণ করে চাষাবাদ করেন। মৌসুম শেষে ফসল বিক্রি করে তারা ঋণ পরিশোধ করেন। কিন্তু এ বছর ধানের দাম কম, ফসলের ফলন কম হওয়ায় এবং ফসলের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় খরচের টাকাও ঘরে তুলতে হিমশিম খেতে হয়েছে কৃষককে। ফলে তাদের মধ্যে নেমে এসেছে চরম হতাশা।
এ বছর ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচই ওঠেনি। কৃষকরা বিঘাপ্রতি প্রায় ১০-১২ হাজার টাকা খরচ করে ফলন পেয়েছেন ১৮-২০ মণ ধান। বাজারে ধানের দাম না থাকায় কৃষকদের বিঘাপ্রতি লোকসান গুনতে হচ্ছে দু’-আড়াই হাজার টাকা। ধান বিক্রি করে সার, তেল, কীটনাশকসহ শ্রমিক মজুরির দাম উঠাতেই হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা।এমন অবস্থা বিরাজ করলে আগামীতে ধান চাষে বিমুখ হবেন সাধারণ কৃষকরা। সরকারিভাবে প্রতি মণ ধানের বিক্রয় মূল্য ১ হাজার ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৭০০-৭৫০ টাকা দরে।
কৃষকদের কষ্টার্জিত ধানের ন্যায্যমূল্যই পারে কৃষিপ্রধান এ দেশের কৃষি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে। আবার চামড়া শিল্পকেও বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজন সিন্ডিকেটদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।আশা করি, সরকার উপরে উল্লেখিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
বাংলানিউজসিএ/ঢাকা/ ১৮ আগস্ট ২০১৯ / এমএম





