প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: ‘ভালো আছি’ ছোট্ট এই কথাটি আমরা প্রায় সময়ই বলে থাকি। অনেক সময় জেনে বলি, না জেনে বলি; অনেক সময় বলার দরকার তাই বলি কিংবা মনের অজান্তে বেড়িয়ে যায়। কিন্তু এই কথার মাহাত্ম্য জানি না বা জানার চেষ্টাও করি না। ‘ভালো আছি’ কথাটির কত বড় ক্ষমতা তা বর্ণনাতীত।
আজকাল রাস্তাঘাট, গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দর সবখানেই দেখা যায় মানুষের চোখে-মুখে কেমন যেন এক বেদনার ছাপ। কোনো এক কষ্ট যেন কুরে কুরে খাচ্ছে সবাইকে। কেউ কেউ হতাশা ব্যক্ত করলেও অনেকে কষ্ট বুকে চেপে রেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। মানুষের মধ্যে এখন আর প্রাঞ্জল হাসি, অকৃত্রিম হৃদ্যতা দেখা যায় না। পাশাপাশি ‘ভালো আছি’ কথাটি কমে আসছে। দিনে দিনে আমাদের চিন্তা, চেতনা, মননে হতাশার ছবিই ফুটে উঠছে।
‘ভালো আছি’ এটি শুধু কথার কথা নয়; আমাদের মনের ইতিবাচক চিন্তার প্রতিচ্ছবি। আর এই ইতিবাচক চিন্তাই আমাদের বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়। সব কাজেই আমরা সফল হবো- এমনটা নয়। এক একটি ব্যর্থতাকে ঢেকে রেখে নতুন উদ্যমে, নতুন আশায় পথ চলাটাই আমাদের ভালো থাকা। আর তাই কষ্ট করে হলেও বলতে হবে ‘ভালো আছি’। ইতিবাচক চিন্তাধারাই আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র প্রেরণা।
সাফল্য, সুস্থতা আর সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের ইতিবাচক চিন্তাধারা সবচেয়ে জরুরি। আমাদের ইতিবাচক কল্পনা, ইতিবাচক স্বপ্ন আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম চলে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা সব সময় স্বপ্ন দেখি। ভবিষ্যতে আমরা তাকে কিভাবে দেখতে চাই তার কল্পনা আমাদের মনের কোনে আঁকা থাকে। সেভাবেই আমরা তাকে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকি। সেখানে নেতিবাচক কল্পনার কোনো স্থান থাকে না। আর নেতিবাচক চিন্তার ফল কখনই মধুর হয় না।
প্রতিটি সন্তান তার পিতা-মাতাকে ভালোবাসে। তাদের পরামর্শেই পথ চলে। বাবা-মা যখন নেতিবাচক কথা বলে সেটাই সে ধারণ করে রাখে। সেই সন্তানের ভেতর হতাশা চলে আসে, তখন তার ব্রেন নেতিবাচক চিন্তার দিকেই অগ্রসর হয়। আর শত কষ্ট ও ব্যর্থতার মাঝেও যদি বড় হওয়ার, ভালো হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়; তাহলে তার চিন্তা, চেতনা, মননে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গেঁথে রাখবে। সে ভবিষ্যতে বড় কিছু করতে পারবে। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ- টমাস আলভা এডিসন।
ছোটবেলায় টমাস আলভা এডিসনের মেধা কম ছিল। স্কুলে নানাভাবে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতেন কিন্তু মনে রাখার ক্ষমতা কম ছিল। এজন্য স্কুল থেকে তার হাতে একটি চিঠি ধরিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছিল। চিঠিটি মায়ের হাতে দেয়ার পর, মা চিঠিটি পড়ে চোখ মুছে ছেলেকে বলেছিলেন চিঠিতে লেখা আছে- ‘আপনার ছেলে খুব মেধাবী, এই স্কুলটি তার জন্যে অনেক ছোট এবং এখানে তাকে শেখানোর মতো অনেক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক নেই। দয়া করে আপনি নিজেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করুন।’
মায়ের এই কথা শুনে টমাস আলভা এডিসনের তার নিজের প্রতি উচ্চ ধারণা তৈরি হয়েছিল। ভবিষ্যতে তিনি হয়েছিলেন খ্যাতিমান বিজ্ঞানী। অবশ্য খ্যাতিমান হওয়ার অনেক পরে একদিন কি এক কাজে পুরনো কাগজ নাড়াচাড়া করছিলেন এডিসন। ভাঁজ করা এক কাগজ পেয়ে সেটি পড়তে পড়তে তিনি জানতে পারেন- এটি বহু বছর আগে স্কুল থেকে পাঠানো সেই চিঠি। সেটা পড়তে গিয়ে তার বুকে ভেসে গিয়েছিল চোখের জলে। সেই চিঠিতে লেখা ছিল- ‘আপনার সন্তান স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন, সে এই স্কুলের উপযুক্ত নয়, আমরা কোনোভাবেই তাকে আমাদের স্কুলে আর আসতে দিতে পারি না’। তারপর এডিসন তার ডায়েরিতে লেখেন- ‘টমাস আলভা এডিসন একজন স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন শিশু ছিলেন। একজন আদর্শবান মায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি শতাব্দীর সেরা মেধাবী হয়ে উঠেন’।
ইতিবাচক চিন্তা হলো সব বিষয়েই হ্যাঁ-বোধক ধারণা রাখা। ‘আমি পারবো’, ‘তুমি পারবে’- এই ধারণাই হলো ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। আর এর বহিঃপ্রকাশ ‘ভালো আছি’। আর তাই কষ্ট করে হলেও বলতে হবে- ‘ভালো আছি’। তবেই আমরা লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ৩১ মার্চ ২০২৩ /এমএম