প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: যাদের জীবন আছে তাদের রোগব্যাধি বা অসুখ আছেই। অসুখ হয়নি এমন মানুষ আমাদের সমাজে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বহিঃশত্রু বা জীবনে চলার পথে আমাদের যেমন যুদ্ধ করতে হয়; তেমনি অসুখের বিরুদ্ধেও আমাদের সংগ্রামও করতে হয়। অসুস্থতা ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণ দেখে আসে না। যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো মানুষের যেকোনো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রোগব্যাধি অনিবার্য হলেও মানুষ তা এড়িয়ে থাকতে চায়। অসুখ যেন না হয়, সেজন্য প্রাণান্ত চেষ্টা করে গেলেও শেষ রক্ষা হয় না। আকস্মিকভাবে ঠিকই রোগব্যাধি হানা দেয়। আর তা থেকে পরিত্রাণের জন্য চলে ডাক্তার, ওষুধ, পথ্য ও বিশ্রাম।
যাদের অর্থ-বিত্ত আছে তারা সহজে চিকিৎসকের পরামর্শ ও ওষুধ, পথ্য, বিশ্রাম নিতে পারেন। অসুখ-বিসুখ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জন্য। এ কষ্ট থেকে পরিত্রাণের জন্য এই শ্রেণির মানুষ ঝাড়ফুঁক, কবিরাজি, তাবিজ-কবচ আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার জন্য কষ্টের সঙ্গে সংগ্রাম করে। মাত্র ২০০ বছর আগে জার্মানির চিকিৎসক ক্রিস্টিয়ান ফ্রিডরিখ স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের হাত ধরে আসা আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা হোমিওপ্যাথি এসব খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের রোগব্যাধি থেকে পরিত্রাণের উপায় হয়ে আসে। আমাদের দেশে অন্য প্যাথির মানুষরা এটিকে কটাক্ষ করলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যে সাধারণ নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহণীয় হয়ে ওঠে। সামান্য খরচে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াহীন কয়েক ফোটা ওষুধে রোগভোগের কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে মানুষ হোমিওপ্যাথিতে আকৃষ্ট হতে থাকে। দিনে দিনে হোমিওপ্যাথির জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
গত বছর নভেম্বরে আমার পরিচিত এক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের আমন্ত্রণে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে গিয়েছিলাম। বেশ বড় পরিসরের সেমিনারটি। সেখানে প্রতিমন্ত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ দেশ-বিদেশের বেশ কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি ও সারা দেশ থেকে আসা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সেমিনারে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু বলেছিলেন- ‘হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরা গরিব ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের বন্ধু’।
এটি রাজনৈতিক বক্তব্যের মতো কথার কথা বলেছিলেন কিনা জানি না। সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু বলেছিলেন- হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরা গরিব ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের বন্ধু। অল্প খরচে তারা চিকিৎসা পান এবং হোমিও চিকিৎসকরা তাদের কাছাকাছি থাকেন। যত্নসহকারে হোমিও চিকিৎসকরা গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন। এমনকি মহামারি করোনার সময় নিজেদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে এসব সাধারণ মানুষের পাশে থেকে চিকিৎসাসেবা দিয়ে গেছেন হোমিও চিকিৎসকরা।
তবে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রীর কথাটি আমার চিন্তার খোরাক জুগিয়েছিল। সেমিনারের পর হোমিওপ্যাথি বিষয়টি নিয়ে বেশ কৌতূহল যাগে। কারণ হোমিও পেশাজীবী সমিতি (হোপেস) বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয় সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক সেমিনার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের রেজিস্ট্রার ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম। হোপেস উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি ছবি বিশ্বাসের সভাপতিত্বে স্বাগত ভাষণ দেন হোমিও পেশাজীবী সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি মেডিকেল বোর্ডের প্যানেল চেয়ারম্যান ডা. আবদুর রাজ্জাক তালুকদার। সঞ্চালনা করেন ডা. মো. ইউসুফ আলী অনিম ও ডা. মোহাম্মদ লোকমান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি মেডিকেল বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. দিলীপ কুমার রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. অসীম কুমার সরকার, ম্যাক্সফেয়ার অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এসএএম রেজা-উর রহিম, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার নিতাই চরণ চক্রবর্তী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. অজয় কুমার দাস, হোপেস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. রোকেয়া খাতুন।
এতসব পণ্ডিত ব্যক্তি যখন এক ছাদের নিচে একটি প্যাথি নিয়ে কথা বলেন- তখন বিষয়টি নিয়ে কৌতূহল উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। তাছাড়া অতিমারি করোনার সময় অন্য প্যাথি চিকিৎসকরা যখন সাধারণ মানুষ থেকে নিজেরা দূরে ছিলেন, সেই সময় হোমিও চিকিৎসকরা রীতিমতো চেম্বার খুলে মানুষের সেবা করে গেছেন- এটা আমি নিজেই প্রত্যক্ষ করেছি। তাছাড়া ‘করোনা প্রতিরোধে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার ভূমিকা ও উন্নয়ন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন ও মতবিনিময় সভায় বক্তারা দাবি করেন- করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করে তুলতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সফল হয়েছে। করোনাকালে সারা দেশে সাড়ে ১৫ লাখের বেশি মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসসহ বিভিন্ন বৈশ্বিক মহামারি প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়েছে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা।
ওই মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। সম্ভাবনা থাকার পরেও বাংলাদেশে এই চিকিৎসা ব্যবস্থা অবহেলিতই থেকে গেছে। সহজলভ্যতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকায় দেশের ৩০ শতাংশ মানুষ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় আস্থা রাখেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করে তুলতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা সফল হয়েছে।
জনসম্মুখে যখন এতসব দাবি করা হয় তখন অবশ্যই এর সত্যতা থাকে। তাছাড়া অনেক সময় গ্রামগঞ্জে হোমিও চিকিৎসকদের চেম্বারের সামনে সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষদের ভিড় দেখেছি। অল্প টাকায় কয়েক ফোটা ওষুধে তাদের রোগ নিরাময় হয়েছে বলেও দাবি করেছেন এসব সাধারণ মানুষ।
বলাবাহুল্য, একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে ও তাদের পরামর্শ নিতে হাজার হাজার টাকা খরচ করতে হয়। এত টাকা খরচ করা আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ তথা গরিব ও নিম্নবিত্তদের সামর্থ্যের বাইরে। সেখানে সামান্য টাকার বিনিময়ে হোমিও ওষুধে রোগের উপশম হচ্ছে। ফলে হোমিও চিকিৎসকরা গরিবের বন্ধু বলাটা যথার্থই বলে মনে হয়।
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২১ মার্চ ২০২৩ /এমএম