Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ নারীরা সভ্যতার ক্রমবিকাশে পুরুষের পাশাপশি কাজ করে আসছে সৃষ্টির আদিকাল থেকেই। শারীরিক গঠনের দিক থেকে নারীরা তুলনামূলকভাবে পুরুষের চেয়ে দুর্বল। চিকিৎসার ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিশেষ করে গ্রামের অবহেলিত-নিপীড়িত নারীদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই লেগে আছে দারিদ্র্যের অভিশাপ। আর দারিদ্র্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে অশিক্ষা, অজ্ঞতা ও অস্বাস্থ্য।

শুধু স্বাস্থ্যশিক্ষার অভাবে অনেক সাধারণ সমস্যাও মাঝেমাঝে প্রকট আকার ধারণ করে। আমাদের দেশের নারীরা বিশেষ করে মেয়েলি অসুখগুলোকে লজ্জায় প্রকাশ না করে গোপন করে রাখে। অবিবাহিতদের লজ্জা ও গোপনীয়তা আরও বেশি। ইদানীং শহরাঞ্চলে এ অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।কিন্তু গ্রামাঞ্চলে বিষয়টির তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। তারা এখনো অসুখ-বিসুখকে জিইয়ে রাখে এবং কোনো মেয়েলি রোগ হলে তা গোপনেই মনের ভেতর পুষে রাখে। ফলে অসুখ হয়ে ওঠে মারাত্মক ও ঝুঁকিপূর্ণ।

মেয়েরা যেহেতু সন্তানের জন্মদানে সক্ষম, সেহেতু তাদের কিছু রোগ হয়, যেগুলো পুরুষদের হয় না। সেগুলোকে সাধারণত স্ত্রীরোগ বলে চিহ্নিত করা হয়। এগুলোর মধ্যে আছে ঋতুস্রাব সংক্রান্ত সমস্যা, জরায়ুতে টিউমার, জরায়ু নিচে নেমে বেরিয়ে আসা, স্তন ও জরায়ুতে ক্যানসার, সাদা স্রাব ইত্যাদি। এছাড়াও কিছু কিছু রোগ দেখা দেয়, যেগুলো গর্ভাবস্থায় অথবা সন্তান প্রসবের সময় সঠিক যত্ন না নেওয়ার কারণে হয়ে থাকে।

আমাদের দেশে অধিকাংশ মহিলাই মারা যায় গর্ভাবস্থা ও প্রসবকালীন জটিলতায়। এ মৃত্যু ঘটে সাধারণত কয়েকটি কারণে। সেগুলো হলো একলাম্পশিয়া, প্রসবের আগে ও পরে অতিরিক্ত রক্তস্রাব, বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন ইত্যাদি। এসব রোগ বা সমস্যা অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিরোধের মাধ্যমে প্রতিকার করা সম্ভব। কিন্তু অবহেলা, অজ্ঞতা এবং রোগের কথা লজ্জায় প্রকাশ না করার কারণে অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করে।

চিকিৎসকের পরামর্শে বা সুচিকিৎসা পেয়ে অনেকে সুস্থ হয়ে উঠলেও অধিকাংশ নারীই উপযুক্ত স্বাস্থ্যসচেতনতার অভাবে রোগ যন্ত্রণায় ভুগে কষ্ট পায় এবং পরিশেষে করুণ পরিণতির শিকার হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। কাজেই এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রত্যেক নারীর জন্যই অপরিহার্য। নারী সমাজকে স্বাস্থ্যসচেতন করার জন্য উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি।

একজন শিক্ষিত ও সচেতন মা তার নিজের জন্য, তার সন্তানের জন্য, তার পরিবারের জন্য তথা সমগ্র দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। স্বাস্থ্যসচেতনতার অভাব, শিক্ষার অভাব এবং কুসংস্কারের কারণে অনেক সময় আমাদের দেশের নারীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় মেয়েলি রোগগুলোর চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।

নিয়মিত চিকিৎসা বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নিলে খুব সহজেই গর্ভজনিত বিভিন্ন জটিল রোগ ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি অনেক বেসরকারি সংস্থা নারীদের সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি বেছে নেওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

প্রায় সব রোগেরই চিকিৎসা আছে। কিন্তু এজন্য সময়মতো রোগ নির্ণয় করতে হবে এবং সময়মতো চিকিৎসা নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এজন্য প্রথমেই প্রয়োজন নারীসমাজের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং এ কাজে অবশ্যই তাদের নিজেদেরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। একজন মা সুস্থ না থাকলে বা স্বাস্থ্য সম্বন্ধে পুরোপুরি সচেতন না হলে তার কাছ থেকে সুস্থ সন্তান তথা সুস্থ প্রজন্ম আশা করা যায় না। পিছিয়ে পড়া এসব নারীকে স্বাস্থ্যসচেতন করার দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের সবাইকে।

প্রদীপ সাহা : প্রাবন্ধিক

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ২৯ নভেম্বর ২০২২ /এমএম