Menu

প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক ::‌ ‘লুট পইরাছে সম্মুখেতে আও লুটে। লুটো লুটোরে ভাই, হরিবোল বলে’। লুটো আনন্দ লুটো। দুর্গাপূজার আনন্দ লুটো; লক্ষ্মীপূজার আনন্দ লুটো। লুটে-পুটে লুটোপুটি খাও। সেই সঙ্গে যত পারো পকেট লুটো। দুর্গাপূজার মহানন্দে যা আছে সব লুটে নিয়ে পকেট খালি। দশভুজার রূপ দেখিয়া হইয়াছি পাগলরে, খালি পকেটে আর মানে না মন; এবার চল সজনী যাই গো বাড়িতে।

‘ছল ছল নয়নে হাসি মাখা বদনে, আনন্দে কাননে মন, হরি বলো হরি বলো মন রে আমার’- গাইতে গাইতে খালি পকেটে বাড়ি ফেরার পর সন্ন্যাস না বানপ্রস্থ নেব ভাবছি- তখনি ভুবন মোহিনী রূপ ছেড়ে রণচণ্ডিকা রূপে আবির্ভূতা অর্ধাঙ্গিনী হাতে বাজারের থলে ধরিয়ে দিয়ে বললে- বাজারে যাও, ঘরে কিছুই নেই। বাজার না আনলে পেটে কিছুই জুটবে না। বললাম এই তো ভালো ছিলে মা, চিড়ে-গুড়েই তো চলে যাচ্ছিল- আবার বাজার কেন? এবার দশভুজার হুঙ্কারে জবাব- ওসব ছেঁদো কথা বাদ দিয়ে বাজারে ছোটো; না হলে…

কাঁদো কাঁদো নয়নে বাজারের ব্যাগ হাতে বাজারে ছোটা। দোকানির এক গাল হাসি আর আধো আধো বোলে যা বোঝার বুঝে গেলাম। কী দাদা, পূজা তো জমিয়ে কাটালেন। হেসে বললাম- হ্যাঁ দাদা আপনাদের আশীর্বাদে… এবার জিনিস কমিয়ে দিয়ে দামটাও একটু কমিয়ে ধরেন। আমসি মুখ করে দোকানদার বললেন- পূজার বাজার তো! কিছুই নিলেন না। এবার কমিয়ে ধরে পুষিয়ে নেব। বুঝলাম- গলা আমার কাটবেই। কি আর করা গিন্নিকে ঠাণ্ডা করতে গলাটা বাড়িয়েই দিলাম- ভাই কাটেন; তবে ধারালো ছুরি দিয়ে কাটবেন, তাতে ব্যথা একটু কম লাগবে।

‘বিরস বদন, অলস চরণ, শূন্য কলসি (ব্যাগ) লাগে ভার। হৃদয়ে দহন, অশ্রুসিক্ত নয়ন, ডুবিয়া ভাসিতে লোভ’। তেমনি কাঁদো কাঁদো নয়নে, সারা শরীরে ঘামের স্রোতধারা নিয়ে গুটি গুটি পায়ে গৃহলক্ষ্মীর দুয়ারে আঘাত। ঠিক তখনই দেবীর গগন বিদারী বজ্র নিনাদ- আবার গেল (ভুল করে শুনলাম এলো); এভাবে কি থাকা যায়? ‘ওরে সাপের বিষে যেমন তেমন (জিনিষপত্রের) দামের বিষে উজান ধায়, বিষে অঙ্গ জরজর ওরে, লোডশেডিংয়ে দ্বিগুণ ধায়’। ডুবিয়া ভাসিতে লোভ করিতে গিয়ে আবারো ডুবে গেলাম লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে। এই গরমে হুট করে কারেন্ট চলে গেলে কার ভালো লাগবে। বুঝলাম এবার বিষে অঙ্গ জরজর হবে।

অনেক সাহস সঞ্চয় করে- বল বীর বল উন্নত মম শির- করে অঙ্গনার সামনে দাঁড়াতেই ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেলাম। ব্যাগ হাতে নিয়েই বলল- একি! মাছ কই? বললাম- পূজার সিজন চলছে তো মাছেরা ছুটিতে আছে। তাই বাজারে নেই। পরে এনে দেব। ভয়ে হৃৎকম্প শুরু হয়েছে- কি-না কি বলে ফেললাম। কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল- থাক, যা আছে তাই দিয়ে চালিয়ে নেব। অনেক কষ্ট হয়েছে তোমার। ঘেমে নেয়ে গেছ; এর ওপর কারেন্ট নেই। এসো তোমাকে একটু বাতাস দিই। একি শুনি আজ মন্থরার মুখে? বাতাস যে দিচ্ছে তা বুঝতে আর বাকি থাকল না। এও বুঝলাম- এবার সুন্দরী ভার্যার হাতেই আমার কল্লা নিধন পর্ব চলবে।

আর আমিও শান্তশিষ্ট, পত্নীনিষ্ঠ মধ্যবিত্ত বীরপুরুষের মতো মাথা এগিয়ে দিয়ে বললাম- এ এমন কী কষ্ট। তুমিও তো কম কষ্ট করো না। তোমার হাস্যবদনের লাস্য নয়নের লাগি দিতে পারি এ জীবন তব। মনে মনে বললাম মাথা তো পাতা- এবার কাটা শুরু কর। তির্যক নয়নের বানে বিদ্ধ করে বলল- হ্যাঁ গো, সামনে তো লক্ষ্মীপূজা। অমুক বাবুর বউ সুন্দর একটা লালপেড়ে শাড়ি কিনেছে শুধু লক্ষ্মীপূজার জন্য। আমার একটা কিনে দাও না গো। বললাম- তুমিই তো আমার লক্ষ্মী, তুমিই আমার ঘরের আলো- তুমি থাকতে আবার অন্য লক্ষ্মী কেন?

ব্যস, নিউটনের সূত্র আর কাজ করল না। ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়া। নরম বাণীর গরম ধ্বনিতে আকাশ বাতাস কাপিয়ে সিংহ (সিংহী) নিনাদে কাঁপিয়া উঠিল ধরণী (ঘর)। গোপালগিন্নীর মতো বলে উঠল- দিতেই হবে শাড়ি; না হলে চললুম বাবার বাড়ি। কাঁদো কাঁদো নয়নে অবনত বদনে বললাম- তথাস্তু। হঠাৎ কোথায় যেন বেজে উঠল- ‘হরির লুট পইরাছে সম্মুখেতে আও লুটে। লুটো লুটোরে ভাই, হরিবোল বলে’। মনে মনে বললাম- ‘হরি হে হয় দেখা দাও; না হলে টাকা দাও’? (রম্য রচনা)

প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ১৮ অক্টোবর ২০২২ /এমএম

 


Array