প্রবাস বাংলা ভয়েস ডেস্ক :: এখন শরৎকাল। প্রকৃতিতে শুভ্র শিউলি ফুলের মাতম। নীল আকাশে সাদা মেঘের মেলা, মৃদুমন্দ বাতাস। এর সঙ্গে আছে অসংখ্য কাশফুলের বন। বাঙালির মনে অপার আনন্দ। মা দুর্গা সপরিবারে আসবেন স্বামীর বাড়ি কৈলাস থেকে পিত্রালয় ধরাধামে। কুমারীকন্যা রূপে, পরিণীতা কন্যারূপে। মা দুর্গা পঞ্চমী থেকে নবমী পর্যন্ত এ জগৎসংসার আলোয় আলোয় আনন্দিত করে দশমীতে সবাইকে কাঁদিয়ে আবার কৈলাসে চলে যাবেন। আমরা এই চলে যাওয়াকে বলি মায়ের বিসর্জন।
স্বরূপে-অরূপে মা দুর্গার অপার মহিমা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে। আবার মায়ের রূপ ও গুণে অসংখ্য মধুর নাম। মা নিজেই বলছেন, তিনি সব শক্তির আধার, সব দেবতার পুঞ্জীভূত রূপ। তিনি জগৎ থেকে পৃথক নন। জগৎজুড়েই তার বিভূতি। জগৎ শক্তি ও তিনি দুইয়ে মিলে এক ও অভেদ। তার দ্বিতীয় কেউ নেই, মহাশক্তিময়ীও কেউ নেই। তাই তিনি এক হয়েও বহু রূপে চেতনাময়ী ঈশ্বরী। অশুভশক্তি ও দুষ্টের দমন, দুঃখ-কষ্ট, লাঞ্ছনা লাঘবকারিনী রক্ষাকারী সুখস্বরূপা মা, শত্রুদের বিনাশ করে যুদ্ধে জয়, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সংহারী শক্তিরূপিনী, ভক্তকে ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষদানকারিনী হিসাবে মোক্ষ-কামার্থদায়িনী মা দুর্গা। তিনি মানবলোক ও দেবলোকের দুর্গতি, দৈত্য, শত্রু, বাধা-বিপত্তি, ভয়, রোগ-শোক, তাপ-পাপ দূর করেন বলেই তার নাম দুর্গতিনাশিনী দুর্গা।
মা দুর্গার যে জ্যোছনাময়, চন্দ্রময় রূপ, তা তো সর্বমঙ্গলের প্রসন্নময়ী জননী। অম্বিকা, উমা, গৌরী, শিবানী, মহিষমর্দিনী, পরমা প্রকৃতি, কখনো কখনো চেতনায় দূরধিগম্য বলে তিনি দুর্গা, তাকে কষ্ট করে পেতে হয়। শব্দব্রহ্মরূপিনী, কাত্যায়নী, অনিঃশেষ দয়ারূপিনী-আরও কতশত নাম মা দুর্গার। আমরা ভক্তরা দুর্গা প্রতিমার কাঠামোতে মায়ের শুধু মাটির মৃন্ময়ী রূপকেই দেখি না, মনের মন্দিরে মা-দুর্গার চিন্ময়ী রূপকেও গভীরে উপলব্ধি করি। মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কৌরবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধজয়ের জন্য মা-দুর্গার স্তুতি করতে বলেছেন। তখন অর্জুন প্রার্থনায় নিবেদন করেন-মা, আপনি তো পুষ্টি, তুষ্টি, ধৃতি, চন্দ্র ও সূর্যের উজ্জ্বল দীপ্তি এবং সম্পন্নদিগের সম্পদ। যোগী ও পরিব্রাজকগণ ধ্যানে আপনাকেই দেখে থাকেন, আপনি জগৎজননী। এমন প্রার্থনায় মা দুর্গা অর্জুনের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেছিলেন। ভগবান রামচন্দ্র মহীয়সী সীতা হরণের প্রতিশোধ ও দুরাচারী রাবনকে যুদ্ধে পরাজিত ও বধ করতে শরতের শুক্লা তিথিতে দক্ষিণায়নে নিদ্রামগ্ন মা দুর্গাকে পূজা-প্রার্থনায় জাগরণ করে অকাল বোধন করেন। তারপর ভগবান রামচন্দ্র ১০৮টি নীলপদ্ম দিয়ে পূজায় মায়ের সন্তুষ্টি বিধান করে মনোবল ও মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন সীতা উদ্ধার ও রাবন বধ করে।
তবে বাঙালি হিন্দুসমাজে বসন্তকালে উত্তরায়ণে বাসন্তী পূজাও হয়। এ বাসন্তী মা-দুর্গার আরেক নাম। পৌরাণিককালে রাজা সুরথ ও বৈশ্য সমাধি দুজনে রাজ্যহারা ও গৃহহারা হয়ে বসন্তকালে মা দুর্গার বাসন্তী পূজা করলে অভিষ্টপূরণকারিনী দুর্গার আশীর্বাদে তারা রাজ্য ও গৃহ ফিরে পান।এই জগৎসৃষ্টি ও জগৎপালিনী মা-দুর্গা হলেন জটাজুট সমন্বিতা, অতসীপুস্পবর্ণা, মাথায় অর্ধচন্দ্র, ত্রিনয়নী, পূর্ণ চন্দ্রময় মুখখানি, নানা আভরণে ভূষিতা, ত্রিভঙ্গিম অসুরনাশিনী, দশপ্রহরণধারিনী দশভুজা মা। আমরা আকুল প্রার্থনায় দেশ ও দশের সর্বমঙ্গল কামনা করে মা-দুর্গাকে বিনম্রতার সঙ্গে বলি : তুমি অসৎ ও অশুভ শক্তি বিনাশ করো, রোগগ্রস্তকে আরোগ্য করো, মানুষের দুর্গতি ও অভাব-অনটন-দুর্দশাকে দূর করো, মোচন করো সব ভক্তের যত দুঃখ-কষ্ট-গ্লানি। নিরাপদে রাখো শরণাগতকে। মা তোমাকে প্রণাম।
প্রবাস বাংলা ভয়েস/ঢাকা/ ০১ অক্টোবর ২০২২ /এমএম





